অ্যানথ্রাক্সে একজনের মৃত্যু ও ৯ জন আক্রান্ত হওয়া সন্দেহে ঘটনাস্থল নাটোরের লালপুর পরিদর্শন করেছে ঢাকা থেকে আসা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ছয়জনের বিশেষজ্ঞ দল। তদন্ত শেষে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলেছেন তারা।
সোমবার (১৮ জুলাই) লালপুর উপজেলার দেলুয়া গ্রামে সন্দেহজনক আক্রান্ত রোগীদের নমুনা ও তথ্য সংগ্রহ, উঠান বৈঠক ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের দিকনির্দেশনা দেন তদন্ত দলের সদস্যরা।
বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা হলেন টিম সুপারভাইজার ডা. রাবেয়া সুলতানা, টিম লিডার ডা. সাব্রিনা মোহনা, ডা. ইমামুল মুনতাসির, ডা. মোয়াজ আবরার, সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. আলী জিন্নাহ ও ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট মো. আব্দুর রহমান।
আইইডিসিআরের টিম সুপারভাইজার ডা. রাবেয়া সুলতানা বলেন, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নিয়েছেন। সন্দেহজনক আক্রান্তসহ নতুন করে আরও দুজনের প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করেছেন। প্রাপ্ত নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর চূড়ান্তভাবে বলা যাবে বিষয়টি অ্যানথ্রাক্স কি না।
গত ৭ জুলাই অসুস্থ গবাদিপশুর জবাই করা মাংস নাড়াচাড়া ও খাওয়ায় অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগের সংক্রমণে ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। সন্দেহ করা হয় আক্রান্ত হয়ে দুলাল হোসেন (৫৫) নামের একজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ জুলাই রাতে মারা যান। তবে তার মৃত্যুর কারণ বলা হয়েছে মস্তিস্কে ইনফেকশন ও ক্ষতজনিত।
দেলুয়া গ্রামে অ্যানথ্রাক্স সন্দেহে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শহিদুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫) ও ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২১), মহিদুল ইসলামের স্ত্রী রুমা বেগম (৩৫), মো. ওমর আলীর ছেলে আব্দুল মজিদ (৪০) ও সাখাওয়াত হোসেন (৩০), আরজেদ প্রাংয়ের ছেলে আফতাব আলী (৫০), মৃত দুলাল হোসেনের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩০), রূপচান্দ আলীর ছেলে মোহন আলী (৪০) এবং নুরুজ্জামানের স্ত্রী বিলকিস বেগম (৩২)।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগতত্ত্ব ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগের চিকিৎসক ওয়ালিউজ্জামান পান্না বলেন, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়। তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মানুষের শরীরে এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া।
লালপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) ডা. চন্দন কুমার সরকার বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গত তিনদিনে ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে দেলুয়া গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রুইগাড়ি, কান্দিপাড়া, বিভাগ ও নান্দগ্রামের আড়াই হাজার গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগের টিকা দিয়েছেন। প্রাণিসম্পদ দপ্তর আক্রান্ত এলাকা ছাড়াও পুরো উপজেলা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
সোমবার ঢাকার প্রাণিসম্পদ বিভাগের বিশেষজ্ঞ একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা হলেন ডা. মো. মিজানুর রহমান, ডা. ফয়সল তালুকদার, ডা. মো. জাকিউল ইসলাম ও ডা. মো. ইব্রাহীম খলিল। তারা কাঁচা মাংস ছাড়াও প্রয়োজনীয় অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন। যা ঢাকা সিডিআইএল এবং সিরাজগঞ্জের এফডিআইএল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর জীবাণু সম্পর্কে চূড়ান্তভাবে বলা যাবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম শাহাব উদ্দিন অসুস্থ গবাদিপশু জবাই ও মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, অসুস্থ ব্যক্তিদের স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, জনসাধারণকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আতঙ্কমুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আক্রান্তদের থেকে রোগ যাতে না ছড়াতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে।