নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নামানুসারে এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ‘আনিসুল হক কোহর্ট ফর গ্রোথ অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস’ শিরোনামে একটি প্রকল্প শুরু হয়। এবার এ প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের বাজার তৈরি করতে বসানো হয়েছে ‘উদ্যোক্তা হাট’।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকল ১০টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে উদ্যোক্তা হাটের আয়োজন করে আনিসুল হক কোহর্ট। প্রকল্পে সহযোগিতা করছে আনিসুল হক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এবং চাকরি খুঁজবো না চাকরি দেবো প্লাটফর্ম। প্রকল্পটির আওতায় ২৮ ও ২৯ জুন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে উদ্যোক্তা হাট।
প্রথমদিন সকালে হাট উদ্বোধন করেন চারজন নিজ ক্ষেত্রে প্রসংশিত নারী। উপস্থিত ছিলেন ‘গুটিপা’র উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি, শৈলীর উদ্যোক্তা তাহমিনা শৈলী, প্রজেক্ট সেকেন্ড হোমের স্বত্বাধিকারী সুমনা শারমীন ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার বিউটি আক্তার। বিকেলে হাট পরিদর্শন করতে আসেন আনিসুল হক ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভাইস চ্যান্সেলর ড. রুবানা হক। একই সময়ে নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করতে উদ্যোক্তাদের হিসাব সংরক্ষণে সহায়তা করা প্রতিষ্ঠান এসএমই ভাই- এর সঙ্গে বিডিওএসএন একটি চুক্তি সই করেন।
নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাগুলো কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা শেখানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা দেওয়া হচ্ছে। পণ্যের প্রচার প্রচারণা ও ব্যবসায়ে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ওয়াসি ক্রাফট বুটিকের উদ্যোক্তা আফসানা ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, ভালো পণ্য হলেও শোরুমগুলোর পণ্যের চেয়ে বিক্রি কম হয় আমাদের। এর প্রধান কারণ ব্র্যান্ডিং না থাকা। মার্কেটিং ও নেটওয়ার্কিংটা কীভাবে করতে হয় এখানে এসে শিখতেছি। এ সুযোগটা এখানে দেওয়া হচ্ছে।
লেদার প্রোডাক্টস ট্যাম ক্রিয়েশনের উদ্যোক্তা তানহা আক্তার মুক্তা বলেন, আমরা এখানে যুক্ত হয়ে একজন নারী উদ্যোক্তা কীভাবে তার ব্যবসাকে সহজভাবে করতে পারে এবং ভালোভাবে বাড়াতে পারে তার সবগুলো বিষয়ই এখানে শেখানো হচ্ছে। কি করে কর্মী ব্যবস্থাপনা, প্রচারণা ও যোগাযোগ করা যায়। যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোর সমাধান করে সঠিকভাবে পরিচালনা এবং অর্থের যোগান কোথা থেকে হবে সে বিষয়গুলো এখানে দেখানো হচ্ছে।
পূর্ণতা ক্র্যাফটের স্বত্বাধিকারী সাবিহা ইসলাম বিথী বলেন, মেলাটা করা হয়েছে মূলত মার্কেটিংটা কীভাবে করা যায়। প্রোডাক্ট কীভাবে বিক্রি বাড়ানো যায় এবং যোগাযোগ কীভাবে তৈরি করা হয় সেগুলো দেখানোর জন্য। পাশাপাশি অনেকের সঙ্গ এখানে পরিচিত হচ্ছি যেটা পরবর্তীতে প্রোডাক্ট বিক্রিতে কাজে দিতে পারে।
আই ক্লের স্বত্বাধিকারী শিলা আক্তার বলেন, আমার মূল সমস্যা হচ্ছিল প্রচারণা, সেটা আমি প্রকল্পে শিখছি। আমার পণ্য বিক্রি মোটামুটি হয় যেটা আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল। এখানে আমার যে সমস্যা রয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য মার্কেটিং কীভাবে করা যায় সেগুলো দেখানো হচ্ছে।
হোমমেড ফুড ধবলের স্বত্বাধিকারী আসমা হক কান্তা বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমি ব্যবসা শুরু করেছি। মার্কেটিং করেছি, কিন্তু প্রকল্পে ডিজিটাল মার্কেটিংটাকে খুব ভালোভাবে শেখানো হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে লোন আদায় করা যায় এবং সফল উদ্যোক্তাদের সঙ্গে থেকে কীভাবে সফল হওয়া যায় বিষয়গুলো জানা হচ্ছে। এতে অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাচ্ছে। নতুন কিছু শিখতে পারছি।
উদ্যোক্তা হাটে ৩০ জন নারী উদ্যোক্তা ৩০টি স্টলে তাদের পণ্য ও সেবা নিয়ে উপস্থিত থাকবেন। হাটে উপস্থিত ছিল- পারফেকশন অব পরিণীতা, রঙ্গীমা, ধবল, ফাইনফেয়ার ক্র্যাফট, বাঙালি, ফারহানাস ড্রিম, ডিএস ক্রিয়েশন, শ্রদ্ধা, অ্যানেক্স লেদার, সিজনস বুটিক, আমরা পারি, আই ক্লে, প্রয়াস, আইকনিক ক্রিয়েশন, ট্যাম ক্রিয়েশন, পূর্ণতা ক্র্যাফট, শাবাব লেদার, স্যানট্রেন্ড, এআরবি ডিজাইন, একাত্তর সোর্সিং লিমিটেড, ফ্রেন্ডস কনসালটেন্সি, কাদম্বরি এক্সক্লুসিভ, আশা ফুড, জে বি কালেকশন, বি. টেক কন্সট্রাকশন অ্যান্ড কনসাল্টিং, ওয়াসি ক্রাফট, সাতরঙ, এক্সট্রা মাইলেজ কেয়ার, নন্দন কুটির ও জি স্পাইস। এছাড়া বিশেষ সেবা হিসেবে এসএমই ভাই, বিকাশ, ব্যাংক এশিয়া, মেডিমেটের স্টল।