সোমবার , ১৮ জুলাই ২০২২ | ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

ফারুক মাহমুদের কবিতা: সময়ের অনন্য দলিল

প্রতিবেদক
pappu
জুলাই ১৮, ২০২২ ৪:২৫ অপরাহ্ণ

আমি আজ যার কথা বলব, যার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা করবো; তিনি কবি ও সাংবাদিক ফারুক মাহমুদ। তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ‌‘দৈনিক সকালের খবরে’। আমি তখন মাদারীপুরের ‘কালকিনি উপজেলা সংবাদদাতা’ হিসেবে কাজ করি। তিনি সম্ভবত সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও নানামত বিভাগ দেখতেন। প্রথম পরিচয়ের পরই কালকিনি গিয়ে তাকে একটি লেখা পাঠিয়েছিলাম। আমাদের এলাকার বীর বিক্রম নূরুল ইসলাম শিকদারকে নিয়ে। তিনি লেখাটি সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশ করলেন। সকালের খবরে প্রতিদিনের সংবাদের পাশাপাশি আমার মতামত বা কলাম লেখার শুরু সেদিন থেকেই। লেখা পেয়ে তিনি বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। তার পরামর্শ আমার জন্য মাইলফলক হয়েছে।

এবার মূল কথায় আসি, ফারুক মাহমুদ সত্তর দশকের একজন আলোচিত কবি। স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে ক’জন কবি আবির্ভুত হয়েছিলেন, তিনি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন। ফারুক মাহমুদের জন্ম ১৯৫২ সালের ১৭ জুলাই কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে যাদের হাতে নতুন কবিতা-ধারার সূত্রপাত হয়েছিল, তাদের মধ্যে ফারুক মাহমুদ অন্যতম। তাদের সেই ধারাই এখনো বলবৎ আছে। নতুন আর কোনো ধারার এখনো জন্ম হয়েছে বলে মনে হয় না। হয়তো ভবিষ্যতে হবে। ধীরে ধীরে হয়তো কবিতার আদল বদলে যাবে। বদলে যাবে আবেগ-অনুভূতি। সে ব্যবচ্ছেদে আজ না-ই বা গেলাম। তিনি দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে কবিতা লেখায় নিবিষ্ট রয়েছেন। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধনে তিনি কবিতায় নিজস্ব ভাষা-ভঙ্গিমা তৈরি করতে পেরেছেন। কবি যখন বলেন—
‘সামাজিক সাধ্য নেই তোমাকে পাবার
হারাব যে তারও কোনো পন্থা জানা নাই
সকল সমাপ্তি নিয়ে যারা ছিল—আছে,
আমার অযোগ্য হাত ব্যথা সারাবার’
(অন্ধ অন্ধকার)
তখন মনে হয় কবিতা পাঠ অতটা কঠিন নয়। কতটা সহজ করে বলা যায়, তিনিই তার উদাহরণ। তার এ ভাষা-ভঙ্গিমা তাকে আলাদা বিশিষ্টতা দান করেছে। এ ছাড়া গীতিময়তার সঙ্গে প্রতীকী ব্যঞ্জনা, সংকেত, ইশারা, দর্শন, আবেগ ও ভাবুকতায় তার কবিতাকে একটি জলবিন্দুর মধ্যে বহুবর্ণের প্রতিফলন বলা যায়। এমনকি তার হাতে ছন্দের ব্যবহার খুবই সচ্ছল এবং ঋদ্ধ।

তিনি তার কবিতায় কোমল অথচ ঋজু উচ্চারণে ব্যক্ত করেন জীবন। তার কাছে কবিতা আলাদা কিছু নয়। মানুষ ও কবিতা একই সঙ্গে পাঠ করা যায়। তাই তো সমালোচকরা বলেন, ‘তিনি উজ্জ্বল, স্থিতধী নির্মাণরীতির অক্লান্ত শব্দনির্মাতা। শব্দ ব্যবহারে তিনি পারদর্শী। শব্দের ওজন তার জানা।’ আমাদের কাছে ‘সত্তর দশকের কবি’ হিসেবে পরিচিত হলেও ফারুক মাহমুদ সমকালীন বাংলা কবিতা-ধারায় নিজের একটি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন। সে কারণে দশকের হিসাব আমি খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি না। আমি মনে করি, কবির সময়কাল কখনোই নির্দিষ্ট বা স্থবির হতে পারে না। কবি সর্বকালের, সর্বযুগের। তাই তো দেশ, দেশের মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মানবিক সমাজ গঠনের স্বপ্ন নানা মাত্রিকতায় তার কবিতায় উচ্চারিত হয়। কবি বলেন—
‘সাহসিকা তুমি জানো, কত রক্ত তবে স্বাধীনতা,
কত রুমীর না-ফেরা ঘর তবে এই বাংলাদেশ।’
(শোক ও শক্তির পঙক্তিমালা)

শুরুতেই জেনে রাখা ভালো, ফারুক মাহমুদের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে—‘পাথরের ফুল’, ‘অপূর্ণ তুমি আনন্দ বিষাদে’, ‘অনন্ত বেলা থেকে আছি’, ‘এত কাছে এত দূরে’, ‘সৌন্দর্য হে ভয়ানক’, ‘বাঘের বিষণ্ন দিন’, ‘হৃদয়ে প্রেমের দিন’, ‘ভ্রূণপদ্য’, ‘অন্ধকারে মুগ্ধ’, ‘রৌদ্র এবং জলের পিপাসা’, ‘সমান্য আগুন যথেষ্ট জীবন’, ‘নির্বাচিত শত পদ্য’, ‘মহাভারতের প্রেম’, ‘ফিরে যাব দূরত্বের কাছে’, ‘আগুনে আপত্তি নেই’, ‘দাগ নয় চিহ্ন’, ‘দুই হৃদয়ে নদী’, ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ এবং ‘ও স্মৃতিমেঘ ও স্মৃতিরোদ’। কাব্যচর্চার স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছেন বেশ কিছু পুরস্কার। আশা রাখি, অচিরেই বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হবেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার না পাওয়ার ব্যর্থতা আমাদেরই। এ লজ্জার অবসান হোক, হবেই।

এক জীবনের সৃষ্টিকর্মের মধ্যে কিছু কবিতা তিনি বাছাই করেছেন। তার নাম দিয়েছেন ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’। যদিও আমার কাছে তার সব কবিতাই শ্রেষ্ঠ মনে হয়। আবার কারো কারো কাছে কিছু কিছু কবিতা শ্রেষ্ঠ মনে হতে পারে। সে যা-ই হোক না কেন, এই ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ হচ্ছে কবির গ্রন্থিত, অগ্রন্থিত কবিতার সমষ্টি। কবি বইয়ের ভূমিকায় বলেছেন, ‘দীর্ঘ দিনের লেখা থেকে ‘শ্রেষ্ঠ’ লেখাগুলো নির্বাচন করা কঠিন কাজ। কোনটি রেখে কোনটি বাদ দিই! প্রতিটি কবিতার সঙ্গেই তো আমার হৃদয়বৃন্তের সম্পর্ক। বেদনায় কাতর হয়েছি। তবু ‘শ্রেষ্ঠ’ কবিতা নির্বাচনের কাজটি করতে হয়েছে।’ বইটিতে ১৬১টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচটি কবিতা দীর্ঘ। যাকে কাহিনি কাব্য বললেও অত্যুক্তি হবে না।

কবিতাকে তিনি নানামাত্রিক অবয়ব দিয়েছেন। তিনি আসলে কবিতা লিখতে চেয়েছেন। ধরন বিবেচনা তার কাছে মুখ্য নয়। তার কবিতা পাঠে আবিষ্কার করা যাবে নিজস্ব কাব্য—বৈশিষ্ট্য। ছন্দের ঐতিহ্যের মধ্যে থেকেও নির্মাণ করেছেন আধুনিক অনুষঙ্গের কবিতা। ভাষা ব্যবহারে তার রয়েছে আচ্ছন্নতার ব্যাপ্তি, সঙ্গে আছে জীবনের নানা দিক, মোড়-ফেরানো কাব্যিক প্রাখর্য। কবি যখন বলেন—
‘ঝিনুকের বুকে শুধু নয়, মানুষেও মুক্তা থাকে
অমূল্য শান্তির ঘ্রাণ পাওয়া যায় আগুনের কাছে
প্রেমের অনন্ত পথ, যেতে যেতে যত দূরে যাবে
অসংখ্য গতির চিহ্ন, জলেস্থলে প্রেম জেগে আছে’
(ভ্রূণপদ্য: ১৯)
এমন একই শিরোনাম স্থান পেয়েছে তার বেশ কিছু কবিতায়। আছে এমন পাঁচটি দীর্ঘ কবিতা (কাহিনি কাব্য)। অথবা বলা যায়, কবিতার মাধ্যমে তিনি গল্প বলে গেছেন। দৃশ্যকাব্য নির্মাণ করেছেন। সেগুলো হলো—‘একা’, ‘প্রেমের প্রাণের শক্তি’, ‘উপেক্ষা এবং অপেক্ষা’, ‘ছায়া’ এবং ‘ভ্রূণপদ্য’।

বলতে গেলে, বাংলা কবিতার ঐতিহ্যগত ছন্দের কবিতা লেখায় এ কবির স্বাচ্ছন্দ্য অনেকেরই জানা। কবিতায় বাঁক বদলের ইচ্ছা থেকে ফারুক মাহমুদ আঙ্গিক বদলে মনস্ক হয়েছেন। চারপাশ খোলা, অথচ ছন্দের শুদ্ধতাকে তিনি এড়িয়ে যাননি। কিংবা যেতে চাননি। ছন্দকে কখনো অস্বীকারও করেননি। তার নতুন এ কাব্যপ্রয়াসের কিছু কিছু কবিতা এ গ্রন্থে খুঁজে পাবেন। আছে দেশপ্রেমের কথা, আছে মানবপ্রেমের কথা। আছে ভালোবাসার নতুন অভিনিবেশ। সব কবিতার মধ্যে একটা অন্তস্রোত প্রবাহিত। আলাদা আলাদা কবিতা। তারপরও কোথায় যেন সংযোগটি রয়ে গেছে। নিচের চরণগুলোয় একটু চোখ বোলালেই তা স্পষ্ট হবে—
‘সকল অঙ্কের খাতা গোলমেলে, কোলাহলজাত
ঘুর পথে কেন যাবে! বেড়ে যাবে দূরত্বপাথর
ঋজুরেখা এঁকে দাও, মুছে যাবে ক্ষতদগ্ধক্ষতি
সংখ্যাতীত পথ হবে, আলোধর্ম যথাযথ গতির’
(ঋজুরেখা)
এই কবিতা পাঠ করার পর জোর গলায় বলা যায়, সমকালীন অনেকের কবিতায় ছন্দ তো নেই—শুধু কতগুলো শব্দের স্তূপ মনে হয়। ভাষা তো নয় সহজ, অদ্ভুত সব শব্দে ঠাসা। অথচ কবি ফারুক মাহমুদের কবিতায় ছন্দ কতটা প্রাঞ্জল। ভাষা কতটা সহজবোধ্য। উপমা কতটা চিত্তাকর্ষক। ফলে তার কবিতার কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। শব্দের জঞ্জাল না বাড়িয়ে একটি সাবলীল কবিতা রচনা করতে কবিকে অনুসরণ করা যেতেই পারে। অনুসরণ করতেও হবে।

যদি বলি তার উপমা বা তুলনার কথা। হাতেকলমে ধরিয়েই দিচ্ছি তাহলে। উপমা বা তুলনা কেমন হতে হয়, কীভাবে স্থাপন করতে হয়? জেনে নেওয়া দোষণীয় নয় নিশ্চয়ই। তাহলে একটু চোখ বুলাই—
১. পকেটের গভীরতা সমুদ্র সমান (পকেট)
২. নৈঃশব্দের মুখরতা মন্দ কিছু নয় (শব্দ)
৩. জলের ঠোঁটের হাসি (শব্দ)
৪. কাকের জটিল ভিড়ে সাদা বক (কবিতা দাঁড়িয়ে থাকে)
৫. বাতাসও দুষ্টুমি জানে—টেনে ধরেছে তোমার আঁচল (সন্ধ্যামাঠে বৃষ্টি এসেছিল)
৬. নির্ঘুম স্তনের পাশে (বাঁচার আনন্দ নিয়ে)
৭. চুম্বনের ঢেউ (বাঁচার আনন্দ নিয়ে)
৮. বাঘের ক্রোধের নিচে পরিচ্ছন্ন ঘুম (চোখের জলের দাগ)
৯. জলের বিছানা, আগুনের ঘ্রাণ (প্রাপ্তি)
১০. নৈঃসঙ্গের রং কালো (বদলে যায় মানুষের রং)
১১. শব্দ রঙিন ঘুড়ি (বাবা ও মেয়ের গল্প)
১২. গভীর চুমোর মতো নীল আসমান (দেহতত্ত্ব) প্রভৃতি।
এ রকম অগণিত উপমা হাজির করা যাবে কবিতা পড়ে পড়ে। তার কাব্যজুড়ে সেসব সুষমা বিরাজ করছে আপন মহিমায়।

ভাষা আন্দোলনের সমবয়সী কবি চলতি পথে উপলব্ধি করেছেন অনেক কিছু। জীবন, সমাজ, রীতি, অবজ্ঞা, সংগ্রাম সমানতালে চলেছে কবির পিছু পিছু। তাই তো তার কবিতায় মানুষ, মানবতা, মনুষ্যত্ব, অধিকার, স্বাধীকার, আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠেছে সুনিপুণভাবে। কবি বলেছেন—
‘শকুনের ঠোঁটে চোখ ফুসফুস হল কাঁটাতার
হিংসারা সংঘবদ্ধ যত রং ছিল শিশুতোষ
আত্মপরিচয়হীন হয়েছে আমূল অন্ধকার
যখন তোমাকে ভাবি—ঘুরেফিরে পৃথিবীতে স্বাভাবিক দিন।
(পৃথিবীতে স্বাভাবিক দিন)

তবে নিশ্চিত করে বলা যায়, তার কবিতা পাঠে শান্তি মেলে। এর চেয়ে বড় কোনো অনুভূতি নেই আপাতত। দেশ-মানুষ ছাড়াও তিনি কবিতায় কবি এবং কবিতার আরাধনা করেছেন। তার কবিতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই বলতে হয় এ কথা। কয়েকটি কবিতার শিরোনাম দেখলেই তা অনুভব করা যায়। যেমন- ‘কবিতার ক্লান্তি নেই’, ‘কবিতা দাঁড়িয়ে থাকে’, ‘কবি যদি’, ‘কবিতাপড়া বাড়ি’, ‘কবিতার শ্রীচরণ ছুঁয়ে’, ‘জীবনপদ্য’, ‘জন্মদিনের কবিতা’, ‘পঙক্তিগুলো প্রতিহিংসার’, ‘কবির গল্প’, ‘সন্ত্রাসবিরোধী কবিতা’, ‘শোক ও শক্তির পঙক্তিমালা’ এবং ‘কবিতার জন্য’।

কবি মানেই তো প্রেমিক। তাই তো তার কবিতায় প্রেম এসে ধরা দেয় অবধারিত হয়ে। কবির ভাষায় বলতে হয়—
‘বুকের সমান গভীর জলে কন্যা যখন আসে
শিথিল বসন আলগা হয়ে স্রোতের টানে ভাসে
মিশিকালো দুটি ভ্রমর কোথেকে যে এল
যুগল সুখের শীর্ষচূড়ায় আসন খুঁজে পেল।’
(মৃত্যুর আগে একটি চুমু)
পাশাপাশি কবিতায় নিবেদিত এ কবি স্মৃতিচারণ করেছেন বহু গুণীজনের। স্মরণ করেছেন বিশিষ্টজনকে। উৎসর্গ করেছেন তার কবিতা। শিরোনামেও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন কখনো কখনো। যেমন- হাসন রাজা, সুফিয়া কামাল, জীবনানন্দ দাশ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শামসুর রাহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাহানারা ইমাম, কাজী হাসান হাবিবদের স্মরণ করেছেন কবিতায়।

কবিতার বিষয়-আঙ্গিকের মতোই ফারুক মাহমুদের কবিতায় পর্ব বিন্যাস, ছন্দ, অন্ত্যমিল, মাত্রা, তাল, লয়, অনুপ্রাস, উপমা—সব কিছুই নিয়মতান্ত্রিক। একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্য দিয়েই তিনি কাব্যচর্চা করে যাচ্ছেন। সমকালীন কবিরা নিয়ম ভাঙার কথা বলে সেসব বিষয় এড়িয়ে যেতে চান। পক্ষান্তরে অস্বীকার করতে চান। বলতে গেলে তিনি সেসব বিষয় কবিতায় স্থাপন করে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন যে, কবিতা এভাবেই লিখতে হয়। কবি যেভাবে লেখেন—
‘কে হয় লালন, কে হয় হাছন
সুরগুলো একা ভাসে
আকাশের রং উঁকি দেয় জলে
চন্দ্র-সূর্য পাশে
সময়ের কাজ অনর্থ যদি
অগ্নি পাত্রে রাখা
উড়ে যাবে যদি দূরে যাবে যদি
কখন ফুরাল পাখা’
(আগুন তোমার সকল অঙ্গ)
শুধু তা-ই নয়, তার কবিতার সহজ-সরল ভাষা পাঠকের মনে সহজেই ঢেউ তোলে। সাবলীল শব্দে গভীর অনুভূতি লালিত হয়। শব্দ-বাক্যে সারল্য থাকলেও তার ভাব-গাম্ভীর্য সমুদ্রের মতোই সুগভীর। অতল সেই মর্মবাণী।

তাই বলা যায়, ফারুক মাহমুদের কবিতা সময়ের অনন্য দলিল। তার ছন্দের ব্যবহার খুবই সহজ ও সাবলীল। ফলে তার কবিতা কখনোই কারো নজর এড়িয়ে যাবে না। সারাজীবন তার কবিতা পাঠককে মুগ্ধ করবে। কবিতা যতদিন থাকবে; ফারুক মাহমুদ ততদিন পাঠকের অন্তরে লালিত হবেন। কবির জন্মদিনে অশেষ শুভ কামনা, কবিতার জয় হোক।

সর্বশেষ - আইন-আদালত

আপনার জন্য নির্বাচিত