সাইফুর রহমান তুহিন
জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাকাশ নিয়ে জানার আগ্রহ অনেকের মধ্যেই আছে। আপনিও যদি তাদের দলে হন তাহলে অবশ্যই আপনার প্ল্যানেটারিয়ামে যাওয়া উচিত।
প্ল্যানেটেরিয়াম হলো একটি থিয়েটার, যেখানে জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাকাশ সম্পর্কিত শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখানো হয়। বাংলাদেশেও আছে প্ল্যানেটেরিয়াম। যাকে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভো থিয়েটার নামেই জানি।
ঠিক এমনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে চমকপ্রদ সব প্ল্যানেটেরিয়াম। এসব স্থানে গেলে আপনার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে! বিশ্বসেরা তেমনই ৭ প্ল্যানেটারিয়ামের সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
নাগোয়া সিটি সায়েন্স মিউজিয়াম
জাপানের নাগোয়া শহরে অবস্থিত এই প্ল্যানেটেরিয়ামটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্ল্যানেটারিয়ামগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৬২ সালে চালু হওয়া এই প্ল্যানেটারিয়াম ২০১১ সালে ‘গিনেস বুক অব রেকর্ডস’এ স্থান পায়।
এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুমানের প্ল্যানেটারিয়ামগুলোর একটি। এটির গম্বুজের উচ্চতা ৩৫ মিটার ও আসন সংখ্যা ৩৫০ এর মতো। এই প্ল্যানেটারিয়াম আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও আগামি দিনের প্রযুক্তিকে চিত্রায়িত করে।
হেইডেন প্ল্যানেটারিয়াম, নিউইয়র্ক সিটি
নিউইয়র্ক নগরীর অন্যতম সেরা আকর্ষণ হিসেবে পরিচিত এই প্ল্যানেটারিয়াম ১৯৩৫ সালে চালু হয়। এর স্থপতিরা এটিকে আখ্যায়িত করেন ‘এ কসমিক ক্যাথেড্রাল’ হিসেবে। এটি ‘আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি’র একটি অংশ এবং নিউইয়র্ক নগরীর সেন্ট্রাল পার্ক এলাকায় অবস্থিত।
এই প্ল্যানেটারিয়াম তৈরি হয়েছে অনেকটা ভূ-গোলক কাঠামোয় ও এর উপরের অংশ শুধু মহাকাশের প্রদর্শনী করে। অন্যদিকে নিচের অংশ দেখায় মহাবিশ্বেরর জন্মসংক্রান্ত বিষয়াদি যার নাম হলো ‘বিগ ব্যাং থিয়েটার’।
এল হ্যামিসফেরিক, ভ্যালেন্সিয়া, স্পেন
ভ্যালেন্সিয়া শহরের ‘সিটি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স ইন ভ্যালেন্সিয়া’র প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এল হ্যামিসফ্যারিক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। এই প্ল্যানেটারিয়ামের কাঠামো অনেকটা বিশালাকৃতির একটি চোখের মতো।
দুর্দান্ত এই স্থাপত্যকর্মের ডিজাইনার হলেন ভ্যালেন্সিয়ার বিখ্যাত স্থপতি সান্তিয়াগো কালাত্রাভা। ভবনটির নিচের অংশ একটি গ্লাসওয়াটার পুল দ্বারা আবৃত ও ১৩ হাজার মিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। ভবনটির মাঝের অংশ ‘দ্য আইবল’ ১১০ মিটার লম্বা।
চায়না সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়াম, বেইজিং
তিনটি থ্রিডি থিয়েটারের সমন্বয়ে গঠিত এই প্ল্যানেটারিয়াম বেইজিং নগরীর ন্যাচারাল সায়েন্স মিউজিয়াম এলাকায় অবস্থিত। এখানকার থ্রিডি থিয়েটার দর্শকদের জন্য রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা। ‘ওনিমেক্স লেজার অ্যান্ড প্রোটেকশন সিস্টেমস’ ব্যাবহারকারী বিশ্বের প্রথম প্ল্যানেটারিয়াম এটি।
তারকারাজি ও গ্রহ-নক্ষত্রকে একবারে জীবন্ত রূপে পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য এই প্ল্যানেটারিয়ামটি হচ্ছে সেরা পছন্দ। এখানে মোট আসনসংখ্যা ৪৪২টি ও এর গম্বুজ ৩০ মিটার উঁচু।
আলবার্ট আইনস্টাইন প্ল্যানেটারিয়াম, ওয়াশিংটন ডিসি
১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আলবার্ট আইনস্টাইন প্ল্যানেটারিয়াম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি’র ‘ন্যশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়াম’এ অবস্থিত। এটি বিশ্বের সেরা বিজ্ঞান জাদুঘর ও প্ল্যানেটারিয়ামগুলোর একটি।
২০১৪ সালে তারা নজরকাড়া কিছু প্রযুক্তির সংযোজন ঘটায় যার মধ্যে আছে ‘নিউ আলট্রা হাই কোয়ালিটি এইট-কে ফুল ডোম ডিজিটাল সিস্টেম’। সেরা শিল্পকলা প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ প্ল্যানেটারিয়ামটি গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই এক বড় আকর্ষণ।
গ্যালিলিও গ্যালিলি প্ল্যানেটারিয়াম, বুয়েন্স আয়ার্স, আর্জেন্টিনা
এই আইকনিক প্ল্যানেটারিয়ামটির অবস্থান আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের ‘বসকুয়েস ডি পালেরমো আরবান পার্ক’এ। এর ডিজাইনার হলেন এনরিক জান। ৩৬০ আসনবিশিষ্ট এই প্ল্যানেটারিয়ামের গম্বুজের উচ্চতা ২০ মিটার।
এটি প্ল্যানেটারিও নামেও পরিচিত যেখানে দর্শকদের জন্য চমৎকার কিছু আকর্ষণ রয়েছে যেমন- রোবট ও ফোরডি টেকনোলজি। এর আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা করা হয়েছে জ্যেতির্বিদ্যা, গণিত ও জ্যামিতিকে ভিত্তি করে। এখানে একটি জাদুঘরও আছে যেটিতে সমন্বিত অডিও ভিস্যুয়াল শো আয়োজন করা হয়।
অ্যাডলার প্ল্যানেটারিয়াম, শিকাগো, ইলিনয়
১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত অ্যাডলার প্ল্যানেটারিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো প্ল্যানেটারিয়ামগুলোর একটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপিত প্রথম প্ল্যানেটারিয়াম এটি। তিনটি অত্যাধুনিক থিয়েটারের সমন্বয়ে গঠিত অ্যাডলার প্ল্যানেটারিয়াম যেগুলো হচ্ছে-‘দ্য স্যামুয়েল সি. থিয়েটার’, ‘দ্য ডেফিনিটি থিয়েটার’ ও ‘দ্য গ্রাইঞ্জার স্কাই থিয়েটার’।
এটি বিভিন্ন প্রকার বিজ্ঞান প্রদর্শনী ও শিশুদের জন্য সামার ক্যাম্পের আয়োজন করে থাকে। এটি বিজ্ঞানের বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আপডেট করে। তাই যখনই এখানে যাবেন তখনই নতুন কিছুর সন্ধান পাবেন।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ভ্রমণ লেখক।