মো. সোহেল রানা
প্রত্যেক বাবা-মায়ের কাছে সবচেয়ে বড় হলো তাদের সন্তান। সন্তানের সুখের মাঝেই তারা নিজেদের সুখ খোঁজেন। যদি সন্তান সুখে না থাকে তাহলে তারাও সুখী হতে পারেন না।
সন্তানের লেখাপড়া শেখানো থেকে শুরু করে তার বিয়ের পরও পরিশ্রম করেন বাবা-মা। বিশেষ করে কন্যা সন্তানের সুখের জন্য বেশি পরিশ্রম করেন তারা। মেয়ে যেন তার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে সুখে থাকে এজন্য কত ত্যাগই না করেন তারা।
বাংলাদেশ সরকার নারীর অগ্রগতির জন্য প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কাজ করছে। এছাড়া সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সংস্থাও নারীর অগ্রগতিতে কাজ করছেন।
যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে তারা কাজ করছেন। তবুও থামছে না এই জঘন্য প্রথা! দেশের আনাচে কানাচে এখনো অনেক নারীই যৌতুকের কারণে স্বামী ও তার পরিবার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার বরপক্ষকে যৌতুক অর্থ বা সম্পদ দেন। আবার কখনো কখনো যৌতুক দেওয়ার কথা থাকলেও অর্থ সঠিক সময়ে দিতে পারেন। ফলে ওই মেয়ে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে নির্যাতনের শিকার হতে শুরু করে।
যদিও মেয়ের পরিবার কষ্ট করে যৌতুকের টাকা দেয় তারপরেও বিভিন্ন অজুহাতে পরবর্তী সময়ে শারিরীক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হন ওই নারীরা। কেউ কেউ তো যৌতুকের কারণে ভয়াবহ নির্যাতন সহ্য করতে না পেয়ে দুই/চার সন্তানের জননী হয়েও সংসার ত্যাগ করেন আবার অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
বর্তমানে যৌতুকের পরিমাণ যেন ঈদ বাজারের গরু দামের মতো লক্ষ টাকায়, এর সঙ্গে তো রয়েছেই ঘরের আসবাসপত্রসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আরও অর্থ নেওয়ার শত বাহনা। এমনকি সুন্দরী-উচ্চশিক্ষিত মেয়ে হয়েও যৌতুকের বেড়াজাল থেকে রক্ষা পায় না।
যৌতুকের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের অন্য জেলার তুলনায় আমাদের জামালপুর জেলায় এর আকার সংখ্যায় অনেকটা বেশি, যা আমি ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অেনেক নারীকেই দেখেছি সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে এসেছেন।
যৌতুকের কারণে কোমলমতি শিশুদের জীবনের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকারসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। যদি বাংলাদেশ সরকার যৌতুক গ্রহণকারী বিষয়ক আইন তৈরি করেছে, তবুও এই যৌতুকের মতো ভয়ানক অপরাধ থেকেও পিছপা হয়নি অনেকে।
যৌতুকের ফলে গ্রামের নারীদের চোখে হাজারো স্বপ্ন নদী ভাঙনের মতো চোখের জলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের চরম শিখড়ে পৌঁছে যাচ্ছে পরিবারগুলো। অনেক নারীর জীবনের আলো নিভে যাচ্ছে।