বৃহস্পতিবার , ২৮ জুলাই ২০২২ | ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

দেশের হিন্দুরা আ.লীগের বিয়ের দিনের পাগড়ি: ফখরুল

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
জুলাই ২৮, ২০২২ ১:২১ অপরাহ্ণ

ঠাকুরগাঁও এলাকায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমার নিজের নির্বাচনী এলাকায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ প্রচুর, এক লাখ সাত হাজার ভোটারই আছেন রাজবংশী লোকেরা। তাঁদের মধ্যে একজন আমার ছাত্রই ছিলেন। নাম ছিল অমর রায়। সে খুব চমৎকার একটা কথা বলত বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে—আমাদের দেশি ভাষায় ‘হামরা হচ্ছি বিহার দিনের পগরি। মানে, বিয়ের দিনের পাগড়ি হচ্ছি আমরা। একটা দিনই পাগড়িটা পরা হয়, আর কখনো পরা হয় না। নির্বাচনের দিনই ওই পাগড়িটা পরতে হয়, ভোট দেওয়ার সময় নৌকাকে ভোট দিতে হয়। আর বাকিটা সময় আমাদের খোঁজ থাকে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসলে বিষয়টা তাও নয়। এখানে আওয়ামী লীগ তাদের মনে করে সংখ্যালঘুরা তাদের সম্পত্তি, তারাই এঁদের রক্ষক, তারা ভোটটোট যা কিছু দেবে, আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। আর যা কিছু অত্যাচার-নির্যাতন এবং তাদের সম্পদকে লুট করা, এটাও তাদের।’

সাংবাদিকদের নিরপেক্ষভাবে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন, বাড়িঘর, সম্পত্তি দখলের পরিসংখ্যানগুলো দেখার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে, তখনই নড়াইলের মতো এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা বাড়ে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের জমিজমা, বাড়িঘর দখল করে। এমনকি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের সময়টাতেও তাদের ওপর বেশি অত্যাচার হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে, তাদের জমিজমা দখল করে নিয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা যখন থাকে, তখন তারা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের রক্ষক দাবি করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে তাদের ওপরই অত্যাচারটা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর ক্রমান্বয়ে এবং ক্রমাগতভাবে অত্যাচার-নির্যাতন বেড়েই চলছে। দেখা যায় যে সম্পূর্ণভাবে তাদের লোকেরাই এ ঘটনাগুলোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

এ প্রসঙ্গে বান্দরবানের রামু, নাসিরনগর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, পাবনা, যশোর, অভয়নগর, নাটোর ও নিজের এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন এবং তাদের বাড়িঘর, উপাসনালয়ে হামলার কথা উল্লেখ করেন।

এ সময় বিএনপির মহাসচিব সদ্য প্রকাশিত জনশুমারিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আজকে পত্রিকায় এসেছে, এবারের জনশুমারিতে দেখা গেছে, গতবারের (২০১১ সাল) চেয়েও হিন্দু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কমে গেছে। শতকরা প্রায় এক ভাগের বেশি। হিসাবে দেখা গেছে, প্রায় ৭৫ লাখ।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটাকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। আমরা মনে করি যে গণতন্ত্র না থাকায় এই ঘটনাগুলো ঘটছে অর্থাৎ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যে অধিকার, সেই অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে তাদের গৃহ থেকে, জমি থেকে উচ্ছেদ করে তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের সম্পদ দখল করা তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে আছে। গণতন্ত্রের অভাবেই এটা হচ্ছে। সংখ্যায় কম, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের পরিকল্পিতভাবে উচ্ছেদ করে তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সম্পদ দখল করাই প্রধান লক্ষ্য বলে আমরা মনে করি।’

সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনাগুলো জনদৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন গোটা দেশের মানুষ একটাই কথা বলছে যে এ দেশের কোনো নির্বাচন হতে পারে না আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে। এবং নির্বাচন কমিশন নিজে এখন বলতে বাধ্য হচ্ছে যে রাজনৈতিক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে, সব দলের অংশগ্রহণ না হলে, সে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। ঠিক এই সময়ে এই দাবিকে পাশ কাটিয়ে দেওয়ার জন্য এটাও একটা কৌশল।

রেলওয়ের রনি, আ.লীগের কৌশল

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী মহিউদ্দিন রনির নাম উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম এটাকে ‘খুব মজার ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেন।

মহিউদ্দিন রনির নাম উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি আন্দোলন শুরু করেছেন। আমার স্ত্রী খুব এক্সাইটেড হয়ে গেল। বলল দেখ, কোনো রাজনীতি করে না, ছেলেটা কত একটা ভালো কাজ করছে। আমি সেদিনই তাকে বলেছিলাম শিগগির দেখবে যে এটা আওয়ামী লীগের একটা কৌশল। ঠিকই বেরিয়ে গেল। সে তার প্রটেস্টটা শেষ করে আওয়ামী লীগের অফিসে ঢুকল। এটা হচ্ছে তাদের বিভিন্ন কৌশল, ডাইভারশন। গণতন্ত্র নেই বলেই কিন্তু এই ঘটনাগুলো ঘটছে বারবার। শুধু ডাইভারশন, আসল জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার এ কাজগুলো করা হয়।’

নড়াইলের ঘটনায় আওয়ামী লীগের গ্রুপিং দায়ী

নড়াইলের দিঘলীয়ার সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-দোকানপাট-মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংকেই দায়ী করেছে বিএনপি। দলীয় তদন্ত দলের আহ্বায়ক আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী এই অভিযোগ করেন।
নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, তদন্ত দল সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে আক্রান্ত পরিবার এবং স্থানীয় জনসাধারণের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে ঘটনাটি নিশ্চিতভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই সংখ্যালঘুদের একটি সহজ উপাদান হিসেবে করা হয়। যেটা অন্যান্য জায়গার মতো নড়াইলেও ঘটেছে।

নড়াইলের সাহাপাড়ায় হামলার ঘটনা নিয়ে বিএনপি আজ তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে

নড়াইলের সাহাপাড়ায় হামলার ঘটনা নিয়ে বিএনপি আজ তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে
ছবি: প্রথম আলো  

নিতাই রায় বলেন, ‘নড়াইল আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ‍সুভাষ বসু, তিনি দুই থেকে তিন দিন পরে ওখানে যান। উপজেলা চেয়ারম্যানও সম্ভবত যাননি। প্রশাসন নির্লিপ্ত এবং এটা সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা। আমরা সেখানে গিয়ে তা সরেজমিন দেখে, ক্ষতিগ্রস্তসহ সাধারণ মানুষের কথা বলে এটা প্রত্যক্ষ করেছি।’
তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘১৫ তারিখ হঠাৎ করে মাগরিবের নামাজের পরে প্রায় দুই-তিন শত উচ্ছৃঙ্খল লোকজন সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে সাহাপাড়াতে প্রবেশ করে। সেখানে ১০–১২ বাড়িঘর ভেঙে তছনছ করে, সেখানে বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। মন্দিরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, মন্দিরের প্রতিমা ভাঙে। তার অদূরেই পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। পুলিশের নাকের ডগার ওপর এই ঘটনাটা ঘটল।’

নিতাই রায় আরও বলেন, ‘ওই গ্রামের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান। এই ঘটনায় বাড়িঘর ভাঙচুর হচ্ছে, দরজা ভেঙে ফেলছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে অথচ এরা (আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান) নির্বিকার। কারণ, যিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। আর পাশের গ্রামের আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী তিনি পরাজিত হন বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে। এখন দ্বন্দ্বটা শুরু হয় বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী পাস করল কীভাবে? দিঘলীয়া গ্রামের ৭০ শতাংশ ভোটার হিন্দু। হিন্দুরা ভোট দিয়েছে সেই প্রার্থীকে। কেন দিল ভোট? এখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত।’

তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নড়াইলের এই ঘটনার সঙ্গে সরকারই দায়ী। প্রতিবেদনে তা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।’

নড়াইলের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে কটূক্তি করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ১৫ জুলাই সকালে নড়াইলের দিঘলীয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২৩ জুলাই তদন্ত দল নড়াইলের দিঘলীয়া সাহাপাড়া গ্রামে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে।
সংবাদ সম্মেলনে নড়াইলের ঘটনার তদন্ত টিমের সদস্য অনিন্দ্য ইসলাম, জয়ন্ত কুমার কণ্ডু, ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা, অমলেন্দু দাস ও নিপুণ রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ - আইন-আদালত