ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করাসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। একই সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণিকে দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লাল পতাকা মিছিল ও সমাবেশে এ আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
কতিপয় মালিকগোষ্ঠীর মুনাফার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দফায় দফায় বাড়ছে উল্লেখ করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, চাল, ডাল ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা যখন আন্দোলন করছে, তখন সরকার রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী, মামলা-মোকাদ্দমার ভয় দেখিয়ে নির্মমভাবে তা দমন করছে।
‘দেশের প্রধানমন্ত্রী দাবি আদায়ে মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টির পরিবর্তে আন্দোলনের কারণে শ্রমিকদের ‘আমও যাবে, ছালাও যাবে’ অর্থাৎ তাদের চাকরি চলে যাওয়ার হুমকি দেন।’
‘দেশে দোকান কর্মচারী, হোটেল কর্মচারী, গৃহ পরিচারিকা ও পরিবহন শ্রমিকসহ অসংগঠিত সেক্টরের শ্রমিকদের কাজ করার সময় সুনির্দিষ্ট নয়। স্বল্প মজুরিতে দৈনিক ১২-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত মালিকেরা মর্জিমাফিক তাদের কাজ করাচ্ছে, অন্যথায় ছাঁটাই করছে।’
‘শ্রমিকদের চাকরির নিয়োগপত্র, সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো, ছুটি, কর্মস্থলে আহত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির কোনো আইন দেশে নেই। সরকারের কথিত এতো উন্নয়নকালেও সরকারি সব পাটকল এবং কয়েকটি চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
এ সময় বক্তারা বলেন, আজ থেকে নয়বছর পূর্বে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া ও অধিকার নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে এ সংগঠনের জন্ম। শ্রমিক আন্দোলনকে সুবিধাবাদ, অর্থনীতিবাদ থেকে মুক্ত করে গণতান্ত্রিক পথে পরিচালিত করার প্রয়াস নিয়ে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি।
তারা আরও বলেন, আজ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করার সময় আমরা দেখতে পাচ্ছি, সম্প্রতি সরকারঘোষিত বাজেটে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। অথচ দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
শ্রমিক শ্রেণিকে দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, প্রয়োজনীয় দাবি নিয়ে যেমন লড়তে হবে, তেমনই বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে যেকোনো অন্যায়-অবিচারের প্রতিকার পাওয়ার পাশাপাশি বৈষম্যমূলক এই সমাজ বদলে শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়।
সমাবেশে সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে-
১. গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে।
২. নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমাও এবং পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা।
৩. জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা করা।
৪. বন্ধ পাটকল, চিনিকল চালুসহ সরকারি উদ্যোগে নতুন নতুন কারখানা স্থাপন করা।
৫. বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
৬. লে-অফ, ছাঁটাই ও নির্যাতন বন্ধ করা।
৭. ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ওপর চাঁদাবাজি বন্ধ করে লাইসেন্স ও রুট পারমিট দেওয়া।
৮. সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্য শ্রমিক কলোনী নির্মাণ করা।