মামলা নেই, নেই আদালতের সাজা। শুধু জিডির ওপর ভর করে প্রায় তিন বছর ঝিনাইদহ জেলখানায় বন্দি রয়েছেন এক প্রতিবন্ধী। দীর্ঘ এ সময়েও তার নাম, ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
৩১ জুলাই জেলখানায় বন্দি ওই প্রতিবন্ধীর পরিচয় শনাক্ত করতে উদ্যোগ নেন ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস।
ওইদিন ঝিনাইদহ অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস আদেশে উল্লেখ করেন, ‘নাম ঠিকানাবিহীন অজ্ঞাত পুরুষটি একজন বুদ্ধি ও বাকপ্রতিবন্ধী। বিনা বিচারে কাউকে জেলহাজতে আটক রাখা ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা পরিপন্থী। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে অবিলম্বে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে তার নাম-ঠিকানা উদঘাটন করা প্রয়োজন।’
এ কারণে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে ঝিনাইদহ নির্বাচন অফিসে নিয়ে যথাযথ ফরমেটে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে ম্যাচিংপূর্বক আদেশপ্রাপ্তির ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া টেকনাফ, উখিয়া ও ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আদেশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে স্ব স্ব এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওই ব্যক্তির ছবি যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ সময় টেকনাফ, উখিয়া ও ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর থানার তৎকালীন এসআই মো. ইউনুস আলী গাজী ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা ওই প্রতিবন্ধীকে স্থানীয় লোকজনের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে সেফ কাস্টডির জন্য আদালতে পাঠান। পরের বছর ২০২০ সালে ৩১ আগস্ট আদালতের নির্দেশে ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে আঙুলের ছাপ গ্রহণ করতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগে চিঠি পাঠানো হয়।
একই বছর ১৯ নভেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ থেকে আদালতকে অবগত করেন, সাধারণ কাগজে সংগৃহীত আঙুলের ছাপ দিয়ে সঠিক পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে ডিজিটাল ডিভাইজের মাধ্যমে বিশেষ ফরমেটে আঙুলের ছাপ নিয়ে সঠিকভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব।
প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. ইয়াছিন আলী নাম ঠিকানা যাচাই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, অজ্ঞাত ব্যক্তির চেহারা ও অঙ্গভঙ্গি অনেকটা রোহিঙ্গাদের মতো।
ঝিনাইদহের জেল সুপার এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করেন, অজ্ঞাত ব্যক্তি কারাগারে আসার পর থেকে তার নাম ঠিকানা বলতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে মামলা নেই। শুধুমাত্র সাধারণ ডায়রির ওপর ভিত্তি করে কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে বুধবার (৩ আগস্ট) বিকেলে ঝিনাইদহের জেল সুপার অনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ২ আগস্ট আদালতের একটি আদেশ হাতে পেয়েছি। আদালতের নির্দশনা অনুযায়ী কাগজপত্র জেলা নির্বাচন অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে অজ্ঞাত ব্যক্তি জেলখানায় সুস্থ আছে। কথা বলতে পারে না, তার চিকিৎসা চলছে।
তিনি আরো জানান, আটক ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তে ২০২০ সালে আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছিল। তবে তখন তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান বলেন, একজন ব্যক্তি বিনা অপরাধে কোনোভাবেই জেলখানায় বন্দি থাকতে পারে না। এটা সভ্য সমাজে অমানবিক। বিজ্ঞ আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা সঠিক।
ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুস ছালেক বলেন, আদালতের কোনো নির্দেশনা এখনো তিনি পাননি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী ও সিনিয়র সাংবাদিক আমিনুর রহমান টুকু বলেন, বিনা বিচারে কাউকে জেলহাজতে আটক রাখা ন্যায়বিচার পরিপন্থী। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কারাগারে আটক ব্যক্তিকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই করতে হবে।