রবিবার , ৭ আগস্ট ২০২২ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

‘খরচ পোষাবে না, তাই ট্রাক না চালিয়ে বসে আছি’

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
আগস্ট ৭, ২০২২ ১:৪৯ অপরাহ্ণ

ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রাক চালান। আপ-ডাউনে পারিশ্রমিক পেতেন চার হাজার টাকা। তবে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর তিনি আর ভাড়া নিয়ে যাননি। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে অলস সময় পার করছেন।

বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়তি। খ্যাপ মেরে পোষায় না। বরং খ্যাপ মারলে আরও ক্ষতি হবে। তাই ট্রাক বন্ধ করে বসে আছি। লোকসান দিয়ে তো ট্রাক চালানো যাবে না। মালিকও মানবেন না, আমারও খরচ পোষাবে না।’

রোববার (৭ আগস্ট) তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, শুধু বিল্লাল নন, শত শত চালক পণ্য পরিবহনের চাকা বন্ধ করে অলস সময় পার করছেন। অথচ একসঙ্গে এত চালকের অলস সময় পার করার কথা নয়।

কথা হয় আরেক ট্রাকচালক আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাই ডিজেলের দাম না বাড়লে আপনি এখন আমাকে পেতেন না। আজ খ্যাপ নিয়ে রংপুর যাওয়ার কথা। কিন্তু ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাতিল করে বসে আছি।’

jagonews24

এই ট্রাকস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি ও পিকআপ পার্কিং করা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ৭৫ শতাংশ পরিবহনই বন্ধ। শুধু যেসব পোশাকমালিকের ট্রাক আছে, সেসব ট্রাকই পণ্য পরিবহন করছে।

তারা জানান, আগে ঢাকা-চট্টগ্রামে ১০ টন পণ্য পরিবহন করতে একটি ট্রাকে ১৮ হাজার টাকার জ্বালানি খরচ বা ডিজেল দরকার হতো। বর্তমানে খরচ হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অন্যান্য রুটেও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যাতায়াত খরচ বেশি পড়ছে। কিন্তু সেই বাড়তি ভাড়া তারা পাচ্ছেন না। ফলে অধিকাংশ পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে।

এ অবস্থায় পণ্য পরিবহন সচল রাখতে ডিজেলে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে দেশে ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৭১২টি ট্র্যাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ ভ্যানসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন রয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে বছরে ডিজেলের চাহিদা ৪৬ লাখ মেট্রিক টন। বৈশ্বিক বাজারে বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের মূল্য ১৪১ ডলার। প্রতি ডলার ৯০ টাকা ধরে এক ব্যারেলের দাম পড়ে ১২ হাজার ৬৯০ টাকা। এক ব্যারেলে ডিজেল থাকে ১৫৯ লিটার। ফলে এক লিটারের দাম পড়ে প্রায় ৮০ টাকা।

অন্যদিকে ১০টি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেলের চাহিদা ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। বাকি ডিজেল পণ্য পরিবহন ও কৃষিখাতে ব্যবহার করা হয়। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে দেশে প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) দিনগত রাত ১২টার পর ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন ও অকটেনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ডিজেলে এক ধাক্কায় লিটারে ৩৪ টাকা বেড়েছে।

jagonews24

এ অবস্থায় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি ডিজেলের দাম কমানোর প্রস্তাবও করেছে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ মো. তোফাজ্জেল হোসেন মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশে পেট্রল ও অকটেন তৈরি হয়, কিনতে হয় শুধু ডিজেল। দেশে পেট্রল ও অকটেনের গাড়ি কিন্তু ৬০ শতাংশ। প্রাইভেটকার, জিপ, মোটরসাইকেল কিন্তু পেট্রল ও অকটেনে চলে। তাহলে শুধু ভর্তুকি দিতে হয় ডিজেলে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যদি মনে করে দেশ ও জাতির মঙ্গল করা দরকার, তাহলে শুধু ডিজেলে ভর্তুকি দিলেই হয়ে যায়। দেশে গরিব-দুখী মানুষ যারা আছেন তারা তেল, লবণ, চিনি, চাল, ডাল, তরকারি, কাঁচাসবজি, মাছ খেয়ে-পরে বাঁচবে। কারণ ঢাকা শহরে কিন্তু কিছু হয় না (উৎপাদন)। সবকিছুই গ্রামে হয়। গ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্য আনতে কিন্তু পরিবহনের দরকার। পণ্য পরিবহন পরিচালনার প্রধান হাতিয়ার ডিজেল।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ডিজেলের দাম কমালে কৃষক ও পণ্যপরিবহন মালিকরা বাঁচবে। হায়ার লেভেলের মানুষ দেশে ১০ শতাংশ, যারা অকটেন-পেট্রল ব্যবহার করে। বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ ডিজেলে ব্যবহার করে। তাই সরকারকে বলবো ডিজেলে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হোক। ডিজেলের কারণে কিন্তু গরিব-দুখী মানুষ বেশি সমস্যা পড়ে যায়। সরকারের প্রতি আমার আকুল আবেদন, যদি পেট্রল ও অকটেন বাংলাদেশে তৈরি হয় তাহলে খালি ডিজেলে ভর্তুকি দিলেই হয়ে যায়।’

‘তাই বলবো, ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়া হোক। এখন ষোলো আনা পণ্যবাহী পরিবহনের মধ্যে ১৪ আনাই বন্ধ। আমরা বিআরটিএ ও অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছি ডিজেলে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার জন্য। ডিজেলে ভর্তুকি না দিলে পণ্য পরিবহনের চাকা সচল রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়-’ যোগ করেন তিনি।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার (৫ আহস্ট) রাত ১২টা থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী ডিজেল ও কেরোসিন প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ এবং পেট্রল ১৩০ টাকা করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ - দেশজুড়ে