কয়েক দিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকা ডিম ও মুরগির দাম এবার কমতে শুরু করেছে। টানা ১০ থেকে ১২ দিন ধরে দফায় দফায় বেড়ে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় উঠেছিল। ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকায় এবং সোনালি ৩১০ টাকায় উঠে গিয়েছিল। তবে মাছের বাজার এখনো ঊর্ধ্বমুখী।
নিম্ন আয়ের মানুষের নির্ভরতার ‘কম দামের’ তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ মাছও এখন তাদের পাতে নেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, দাম কমানোর স্বার্থে প্রয়োজন হলে ডিম আমদানি করা হবে। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর থেকেই বাজারে কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম। এ ছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, জোয়ারসাহারা বাজার ও রামপুরা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। গতকাল প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয় ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ডজন। প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। যদিও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখনো এ দাম অনেক বেশি। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগিও কেজিতে ২০ টাকা কমে ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি আকারের প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। বাজারে এই জাতের মাছের দাম কম বলে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে এর চাহিদা বেশি। তাদের আমিষের একটি বড় অংশ পূরণ করে ডিম ও কম দামের এই মাছ। ডিমের পাশাপাশি এই তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশের দাম বেড়ে গেছে। এই মাছ তাদের পাতে পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
শুধু তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশই নয়, বাজারে সব মাছের দামই বাড়তি। কিছুদিন আগেও যেসব ছোট আকারের রুই মাছ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। মাঝারি আকারের রুই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষ করা কই মাছ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকায়। বড় আকারের কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের মৌসুম হলেও বাজারে এই মাছের দাম বেশ চড়া। এক কেজি ২০০ থেকে এক কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় এবং ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়।
গতকাল রাজধানীর জোয়ারসাহারা মাছ বাজারে কথা হয় দক্ষিণ কুড়িলের বাসিন্দা মো. জুবায়ের হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে যে তেলাপিয়ার কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় কিনেছি, সেটি আজ (গতকাল) বাজারে কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার বেশি। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের তো বড় মাছ খাওয়া সম্ভব নয়। যাও একটু তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ খেতাম এখন তাও বন্ধ করে দিতে হবে। মাছ পাতে তোলাই কঠিন হয়ে গেল। ’
মাছের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিশ ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হামিদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মাছের খাবারের দাম বাড়তি। এখন আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মাছের দাম বেড়ে গেছে। তবে এতে মাছ চাষিরা লাভবান হচ্ছে না, লাভবান হচ্ছে বেশি মধ্যস্বত্বভোগীরা। ’ এই বক্তব্যের পক্ষে ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখন খামারি পর্যায়ে পাইকারিতে মাঝারি আকারের (এক থেকে দুই কেজি ওজনের) পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। বড় আকারের পাঙ্গাশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। তেলাপিয়া এক কেজি (তিনটি) বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়, বড় আকারের তেলাপিয়া ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সেটাই ক্রেতারা কিনছে প্রতি কেজি ২০০ টাকার ওপরে। ’
দুই-তিন দিনের ব্যবধানে কমেছে মুরগির দাম। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বাজারে মুরগির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়, যা কয়েক দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়, কিছুদিন আগেও বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকায়, যা গত তিন দিন আগেও বিক্রি হয় ৫৬০ টাকায়। ’
রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের ডিম বিক্রেতা হারেছ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ডিমের দাম ডজন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় উঠে গিয়েছিল। গত দুই দিনেই এক লাফে ডজনে ২০ টাকা কমে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ’