জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনাবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নুরে আলম প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপের আওতায় পড়াশোনা করছেন ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারে। তিনি মূলত গর্ভনেন্স ইনোভেশন ইউনিট, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে জনপ্রশাসনের ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মাস্টার্স করছেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান সৈকত।
যা প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপের আওতায় মাস্টার্স পড়ার জন্য সর্বোচ্চ দেড় বছরের ফেলোশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। মাস্টার্সে ফেলোশিপ প্রাপ্তির জন্য টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাংকিং অনুযায়ী স্নাতকোত্তরের বিশ্বের শীর্ষ দুইশ’র মধ্যে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আনকন্ডিশনাল অফার লেটার লাগবে। এ ছাড়াও আইইএলটিএসে ৬.৫ লাগবে। আর দুই বছরের ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স লাগবে। আবেদনের পর সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা প্রাথমিকভাবে বাছাই করে থাকে। সেখান মূলত আইইএলটিএস স্কোর, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ৫০ নম্বরের একটি বাছাই প্রক্রিয়া রয়েছে। পরবর্তীতে একটা লিখিত পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষার ওপর প্রেজেন্টেশন দিতে হয়, তারপর ভাইভা।
ফেলোশিপটিতে রয়েছে নির্দিষ্ট কোটা। ৭০ শতাংশ বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য; বাকি ২০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য। আর অবশিষ্ট ১০ শতাংশ বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই যারা পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে কাজ করে বা পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট তাদের প্রায়োরিটি বেশি থাকে।
অধ্যাপক মো. নুরে আলম
আমার বিশ্ববিদ্যালয়: আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছি, ইউনিভার্সিটি অব ট্যাক্সেটার; টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাংকিং-এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৪৩তম। আমি পড়াশোনা করছি তিন সেমিস্টারের ১৮০ ক্রেডিটের ‘মাস্টার্স অব পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন’ প্রোগ্রামে। এর মধ্যে দুই সেমিস্টার হচ্ছে ১২০ ক্রেডিটের কোর্স আর এক সেমিস্টার হচ্ছে ৬০ ক্রেডিটের ডিসার্টেশন। কোর্সের মধ্যে একটিমাত্র কোর্স বাধ্যতামূলক; বাকিগুলো ২০-২৫টি কোর্স থেকে ক্রেডিট অনুযায়ী বাছাই করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো তিন বা চার ঘণ্টার কোনও পরীক্ষায় বসতে হয় না। পুরোটাই অ্যাসাইনমেন্ট নির্ভর। এক ক্রেডিটের জন্য ন্যূনতম ২০০ পৃষ্ঠার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে থাকে প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী বিষয়ের ওপর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা: আমাদের এখানে মাস্টার্সে খুবই অল্প সংখ্যক স্টুডেন্ট। ক্লাসরুমে টিচারের সাথে পার্সন বাই পার্সন ইন্টারঅ্যাকশনের সুবিধা, ম্যাটেরিয়ালসের এভেইলেএভেলিটি; লাইব্রেরি ফ্যাসিলিটি, ইন্টারনেট ফ্যাসিলিটিসহ রয়েছে সন্তোষজনক সব সুবিধা। প্রতিটা বিষয় যেমন সবিস্তারে পড়ানো হয়, একইভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ও নজরে রাখেন। এমনকি রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হলো কিনা, সেই খবরটাও তারা রাখেন। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেওয়া হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ফেলোশিপের সুযোগ-সুবিধা: প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপে মাস্টার্সের জন্য ৬৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। এরমধ্যে সম্পূর্ণ টিউশন ফি ১৯০০০ পাউন্ড (২১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, জীবনধারণ ভাতা প্রতিমাসে ১৮০০ ডলার (এক লাখ ৭১ হাজার টাকা), এককালীন সংস্থাপন ও শিক্ষা উপকরণ ভাতা, স্বাস্থ্যবিমা, ভিন্নদেশে দেশে কনফারেন্সে অংশগ্রহণ ব্যয় ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
পরামর্শ: ইউকের মাস্টার্সে ল্যাঙ্গুয়েজ এসেসমেন্ট যেহেতু মূল্যায়িত হয়, সেক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার ওপর বিশেষভাবে নজর রাখা, আইএলটিএসে একটা ভালো মার্ক রাখা। গবেষণার অভিজ্ঞতা, মানসম্মত আর্টিকেল প্রকাশিত হলে, তা আপনাকে এগিয়ে রাখবে। আর এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, এ বিষয়েও খেয়াল রাখা।