শনিবার , ২০ আগস্ট ২০২২ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

আত্মীয়তার ছদ্মাবরণে নারীঘটিত অপরাধ

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
আগস্ট ২০, ২০২২ ১:৪০ অপরাহ্ণ

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের যে বিধানগুলো দিয়েছেন, তার সবই বান্দার কল্যাণের জন্য। তার কিছু হয়তো আমরা নিজেদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে বুঝতে পারি না, আবার কিছু বুঝতে পারি। আল্লাহর বিধানগুলো নিজেদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে বুঝে না এলেও মেনে নেওয়ার মধ্যেই প্রকৃত কল্যাণ। অন্যথায় বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়।

যেমন—নারীদের পর্দার কথাই ধরা যাক। মহান আল্লাহ নারীদের পর্দার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দিয়েছেন। ঈমানের দুর্বলতার কারণে অনেকে বিধানটিই মানতে চান না, কেউ কেউ মানলেও এ বিষয়ে কথা বলতে চান না। অথচ এটি না মানার কারণে সমাজের সর্বত্র বিপর্যয় নেমে এসেছে। নারী ও কন্যাশিশুরা ঘরে-বাইরে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন; বরং নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের দ্বারাই বেশি নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বলে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাটি হলো, দুলাভাইয়ের ধর্ষণের শিকার হয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। ভারতের হাওড়ায় ভাশুরের যৌন লালসার শিকার হয়ে রাগের মাথায় ভাশুরকে হত্যার পর তার যৌনাঙ্গ কেটে নিয়েছে পল্লবী ঘোষ নামে এক নারী।

এর আগে ২০২১ সালে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় বাবার বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে চাচাতো দেবরের বিরুদ্ধে। পত্রিকা খুললেই প্রতিদিন এমন অনেক সংবাদ মানুষের সামনে আসছে।

এ ধরনের ঘটনা যেন গোটা সমাজে মহামারি আকারে আত্মপ্রকাশ করছে। যার দরুন সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। সমাজে এ ধরনের প্রবণতা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো, মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে গেছে। ফলে ধর্মীয় লেবাসেও কখনো কখনো মানুষ এ ধরনের জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে যদি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর ভয় থাকত, নবী (সা.)-এর সুন্নত ও নির্দেশনার প্রতি ভালোবাসা থাকত, তাহলে এ ঘটনা অনেকাংশে কমে যেত। মহানবী (সা.) নারীর নিরাপত্তার ব্যাপারে বিভিন্ন সময় সতর্ক করেছেন। তার অন্যতম হলো, তিনি নারীদের নিকটাত্মীয়দের সহিংসতার ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। উকবাহ ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হুঁশিয়ার! (বেগানা) নারীদের কাছে তোমরা প্রবেশ করা পরিত্যাগ করো। সে সময় আনসারিদের এক লোক বলল, দেবর সম্পর্কে আপনার কি মতামত? তিনি বলেন, দেবর তো মৃত্যুতুল্য। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৬৭)

উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সাবধান! নারীদের সঙ্গে তোমরা কেউ অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করবে না। আনসার সমপ্রদায়ের এক লোক বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), দেবর সম্পর্কে আপনার মত কী? তিনি বলেন, সে তো মৃত্যু (সমতুল্য)। (তিরমিজি, হাদিস : ১১৭১)

মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা নববী রহ. বলেন, হাদিসে দেবর বোঝানোর জন্য ‘আল হামউ’ শব্দটি প্রয়োগ করা হয়েছে। ভাষাবিদদের মতে এর অর্থ স্বামীর নিকটাত্মীয় বোঝায়। যেমন, স্বামীর বাবা, চাচা, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, চাচাতো ভাই ইত্যাদির মতো কাছের আত্মীয়দের বোঝায়। তেমনিভাবে স্ত্রীর বোন মানে স্বামীর শ্যালিকাসহ শ্বশুরবাড়ির কাছের আত্মীয়দেরও বোঝায়। হাদিসে নিকটাত্মীয়দের ব্যাপারে সতর্ক করার মানে এই নয় যে দূরের লোকেরা নিরাপদ; বরং যেহেতু এদের কাছাকাছি বেশি থাকতে হয় ফলে এদের মাধ্যমে ফিতনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি দেখা দেয়। তাই যাদের সঙ্গে কোরআনের নিদের্শমতে পর্দা ফরজ তাদের সঙ্গে নির্জনে একত্র হওয়া দূরের কথা, পরিবারের অন্য সদস্যদের উপস্থিতিতে দেখা দেওয়াও ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়। অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে সাধ্যমতো নির্জনে মিলিত হওয়া থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কারণ নির্জনে কোনো নারী-পুরুষ একত্র হলে, শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করে। ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘জাবিয়া’ (সিরিয়ার অন্তর্গত) নামক জায়গায় উমার (রা.) তাঁদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিতে গিয়ে বলেন, হে উপস্থিত জনতা, …সাবধান! কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে মিলিত হলে সেখানে অবশ্যই তৃতীয়জন হিসেবে শয়তান অবস্থান করে (এবং পাপাচারে প্ররোচনা দেয়)। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৫)

বাস্তবেও নারীরা কাছের আত্মীয়দের মাধ্যমে বেশি সহিংসতার শিকার হয়। ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়ংকর তথ্য। ‘শতকরা ৭৫ ভাগ যৌন হয়রানির ঘটনাই ঘটে পরিবারের ঘনিষ্ঠজন, বন্ধু বা আত্মীয়দের মাধ্যমে। আর ছেলেশিশুরাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রতি ছয়জন ছেলেশিশুর মধ্যে একজন যৌন হয়রানির শিকার। মেয়েশিশুদের মধ্যে তা প্রতি চারজনে একজন। ’

২০২১ সালে প্রথম আলোতে প্রকাশিত কলামে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ধর্ষিত হয় নিকটাত্মীয় দ্বারা। মেয়ে যখন নিকটাত্মীয় দ্বারা ধর্ষিত হয়, নিজের মা-ও মেয়েকে ঘটনাটি চেপে যেতে বলেন। অর্থাৎ মেয়েটা নিজের মাকেও আপন ভাবতে পারে না। ধর্ষণের শিকার এই মেয়েটিকেই সারাটা জীবন একা একা কষ্টটা বয়ে বেড়াতে হয়। তখন এই পরিবার, এই সমাজ, এই রাষ্ট্র—সব কিছু তাঁর কাছে বৈরী, এ সবের অংশ হওয়া তো দূরের কথা। ’

তাই নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের উচিত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশনা অনুসরণ করা। ইনশাআল্লাহ, মহান আল্লাহ আমাদের একটি পবিত্র ও নিরাপদ জীবন ও সমাজ দান করবেন।

 

সর্বশেষ - দেশজুড়ে

আপনার জন্য নির্বাচিত