রাজধানীর হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী পারপিতা ফাইহার মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে ওই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় পারিবারিক কলহকে দুষছে তদন্ত কমিটি।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পারপিতা ফাইহা প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতে ফেল করে। এ নিয়ে ফাইহার বাবা তাকে মারধর করেন। দ্বিতীয় সাময়িকেও একই বিষয়ে ফেল করলে ক্লাস শিক্ষক তার বাবাকে স্কুলে আসতে বলেন। এতে ফাইহা ভয় পেয়ে যায় এবং স্কুল থেকে ফিরে বাসায় গিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) এ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক রবিউল ইসলামকে সমন্বয়ক করে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্তে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত শিক্ষার্থীর পারিবারিক কলহ ছিল। পারপিতা সৎ মায়ের সঙ্গে তেজগাঁও এলাকায় একটি বাসায় থাকতো। তার বাবা রাগী প্রকৃতির। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতে ফেল করায় তাকে বেল্ট দিয়ে আঘাত করেন। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় একই বিষয়ে ফেল করলে ক্লাস শিক্ষক তার বাবাকে স্কুলে আনতে বলেন। এতে সে ভীষণ ঘাবড়ে যায়। ফেল করার বিষয়টি জানলে তার বাবা আবারও তাকে মারধর করবেন এই ভয়ে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, তদন্ত কমিটির সদস্য সরেজমিনে শিক্ষক, অধ্যক্ষ, গণিতের শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতে ফেল করা সাত-আট জন শিক্ষার্থীর খাতা সংগ্রহ করে তা পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে। শিক্ষকদের খাতা মূল্যায়ন সঠিক ছিল বলে প্রতিয়মান হয়েছে।
তবে উচ্চতর গণিতের শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত বলেও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের তদন্তে উঠে এসেছে। তিনি শুধু অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীই নয়, নিজ ক্লাসের শিক্ষার্থীদেরও বাসায় কোচিং করান। তবে এ বিষয়টি স্বীকার করেননি শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেন, হলিক্রসের ছাত্রী নিহতের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমরা এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। কমিটির সদস্য সরেজমিনে গিয়ে ক্লাস শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও নিহতের সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজ নিয়ে মৃত্যুর কারণ শনাক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মূলত পারিবারিক কলহের কারণে ওই ছাত্রী আত্মহ্যতার পথ বেছে নেয়। সে কারণে বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ প্রতিবেদন আগামী সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, হলিক্রসের ছাত্রী নিহতের বিষয় খতিয়ে দেখতে বুধবার (২৪ আগস্ট) পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) ও ঢাকা আঞ্চলিক অফিস থেকে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ডিআইএ’র তদন্ত কমিটির সদস্য শিক্ষা পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল সরেজমিনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ফেল করা সব শিক্ষার্থীর খাতা ও প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সেসব খাতা পুনরায় মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন আজ দেওয়া হবে বলেও জানান এই অফিসের উপপরিচালক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন। তাদের তদন্তেও নিহত ছাত্রীর পারিবারিক কলহের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।