পাবনার ঈশ্বরদীতে অটো শিম বা মৌসুম ছাড়া শিম চাষিরা ক্ষেতের শিম সংগ্রহ শুরু করেছেন। দুই একদিন পরপর এক বিঘা ক্ষেত থেকে চার থেকে পাঁচ কেজি করে শিম সংগ্রহ করা যাচ্ছে। পাইকাররা ক্ষেতে এসে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ কেজি দরে শিম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক চাষি কাঁচামালের আড়ত ও হাট-বাজারে বিক্রি করছেন।
সরেজমিনে ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের সরইকান্দি, বাঘহাছলা, পতিরাজপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, শত শত হেক্টর জমিতে মৌসুম ছাড়া (আগাম) জাতের অটো শিমের আবাদ হয়েছে। জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে অটো শিমের চাষাবাদ শুরু হয়। প্রায় তিন মাস পর শিম সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
চাষিরা জানান, জ্যৈষ্ঠ,আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে প্রত্যাশিত বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচণ্ড খরায় এবার অটো শিমের আবাদ তুলনামূলক খারাপ হয়েছে। খরায় ক্ষেতের অসংখ্য শিম গাছ মরে গেছে। মরা গাছ তুলে পুনরায় লাগাতে গিয়ে চাষিদের বাড়তি খরচ হয়েছে। অন্যবারের তুলনায় ফলনও কম। সময়মতো বৃষ্টিপাত হলে এতোদিন অটো শিমে বাজার ভরপুর থাকতো।
সরইকান্দি গ্রামের চাষি শরিফ উদ্দিন জানান, আগাম জাতের শিম আবাদ করে এ অঞ্চলের কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় ১০ বছর মুলাডুলি ইউনিয়নে কয়েকটি গ্রামে আগাম জাতের শিম চাষ হয়। শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত শিম এখানে শ্রাবণ মাসে ফলন শুরু হয়। ফলে আগাম শিম বিক্রি করে কৃষকরা বেশ লাভবান হয়।
এবার বৃষ্টিপাতের অভাবে ফলন কম হয়েছে। জমি থেকে তিন থেকে পাঁচ কেজি করে শিম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এসব শিম পাইকাররা ক্ষেতে এসে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। হাট-বাজারে নিয়ে গেলে আরেকটু বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
বাঘহাছলা গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, চাষিরা শিম তুলতে শুরু করেছে। কিন্তু ক্ষেতে এখন যে পরিমাণ হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। অন্যান্য বছর এসময় ক্ষেত শিমে ভরপুর থাকে। এখন বিঘা প্রতি মাত্র চার পাঁচ কেজি শিম সংগ্রহ করা হয়ে।
আষাঢ় মাসের শুরুতেই প্রচণ্ড খরায় শিম ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেজন্যই শিমের ফলন ভালো হয়নি। আশা করা যায় আগামী মাসের শুরুতেই পর্যাপ্ত পরিমাণ আগাম শিম চাষিরা বাজারে তুলতে পারবে।
শিমের পাইকারি ক্রেতা আব্দুল জলিল জানান, হাট-বাজারে এ শিম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি খুচরা বিক্রি হচ্ছে। ক্ষেতে এসে সরাসরি শিম কিনে গ্রামের হাট-বাজারের সবজি বিক্রেতাদের নিকট আমরা বিক্রি করি।
ঈশ্বরদীর দৈনিক পৌর সবজি বাজারের ব্যবসায়ী মহন হোসেন জানান, একজন কৃষকের নিকট থেকে পাঁচ কেজি শিম কিনে এনেছি। ১৬০ টাকা কেজি দরে কিনে বিক্রি করছি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। অন্য সবজির তুলনায় দাম বেশি হলেও বাজারের নতুন সবজি হিসেবে ক্রেতারা শিম কিনছেন।
মুলাডুলি কাঁচামাল আড়তের ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বাবু দেওয়ান জাগো নিউজকে জানান, কৃষকরা আড়তে দুই চার কেজি করে শিম আনতে শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে সারাদিনে তিন থেকে চার মণ শিম হতে পারে। আগাম শিমের মৌসুম শুরু হলেও বাজারে শিমের বেচাকেনা নাই বললেই চলে।
মুলাডুলি কাঁচামাল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে জানান, মুলাডুলি আড়তে অন্যান্যবার এসময়ে আগাম শিমে ভরপুর থাকে। এবার প্রচণ্ড খরায় শিমের ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা দুই-চার কেজি করে শিম এনে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করছেন।
কেজি প্রতি দাম পাচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। এসব শিম আড়তের অন্যান্য সবজির সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে চলে যাচ্ছে। রাজধানীতে এ শিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে জানান, এ উপজেলায় ১৩০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। প্রতিবছরই আগাম শিমের আবাদ করে এখানকার কৃষকরা লাভবান হয়। এবার প্রচণ্ড খরার কারণে শিমের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আগাম শিম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এবারও কৃষক লাভবান হবে বলে আশা করছি।