সার্জন চিকিৎসক না থাকায় রাজবাড়ী জেলা শহরের একমাত্র সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। একইসঙ্গে কেন্দ্রটিতে কমেছে স্বাভাবিক (নরমাল) সন্তান প্রসবও।
ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন সরকারি খরচে চিকিৎসা নিতে আসা প্রসূতি মায়েরা। চিকিৎসা নিতে আসা গর্ববতী মা ও তার স্বজনদের দাবি দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে পুনরায় সিজারিয়ান কার্যক্রম চালু করলে উপকৃত হবে হাজার হাজার অসহায় গরিব ও সাধারণ মানুষ।
রাজবাড়ী জেলা শহরের ৩নং বেড়াডাঙ্গা সড়কে অবস্থিত ২০ ওয়ার্ড বিশিষ্ট সরকারি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। সার্জন চিকিৎসক গোলাপ চন্দ্র সূত্রধর বদলিজনিত কারণে অন্যত্র চলে যাওয়ায় ২০২১ সালের ৮ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় সিজারিয়ান কার্যক্রম। তবে প্রসূতি মায়েদের অন্যান্য চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা চালু থাকলেও ওয়ার্ডে ভর্তি নেই কোনো রোগী। ফলে অলস সময় পার করছেন সেবিকারা।
এদিকে জরুরি মুহূর্তে সিজার করতে আসা রোগীরা চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন ক্লিনিক বা হাসপাতালে। ফলে তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি হাজার হাজার টাকা।
আগে চিকিৎসক থাকাকালীন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি সিজার ও ৫০ থেকে ৬০ নরমাল ডেলিভারি হতো। এখন সেখানে চিকিৎসক না থাকায় নরমাল ডেলিভারি হয় মাত্র ১০ থেকে ১২টি। আর সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন।
গর্ভবতী মা ও তাদের স্বজনরা সরকারি খরচে সেবা পেতে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু বর্তমানে এখানে সব ধরনের সেবা পেলেও প্রসূতিরা সিজারিয়ান সেবা পাচ্ছেন না দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর। ফলে সিজারের প্রয়োজন হলে তাদের যেতে হচ্ছে অন্য ক্লিনিক বা হাসপাতাল গুলোতে। যেখানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ লাগছে।
রোগীর স্বজন আলাউদ্দিন মিয়া, নাজমা বেগম, হালিমা বেগম, মুন্নিসহ কয়েকজন বলেন, এটা সরকারি হাসপাতাল, খরচ লাগে না। যে কারণে তাদের মতো স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ এখানে বেশি আসে। তাছাড়া এখানে গর্ভবতীদের শারীরিক চেকআপসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকলেও বর্তমানে সিজারের ডাক্তার না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন। জরুরি মুহূর্তে ডাক্তার না পাওয়ার আশঙ্কায় অন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে তাদের খরচ। তাই দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগের দাবি অভিভাবক ও স্বজনদের।
রোগী সারমিন আক্তার, মহুয়া বেগম, লামিয়াসহ কয়েকজন বলেন, তারা নিয়মিত এখানে চেকআপ করান। এবং পরিবেশও ভালো। তাছাড়া এখানে আগে সিজার করিয়েছেন এমন অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু এখন শুনছেন ডাক্তার নেই। যে কারণে সিজারের প্রয়োজন হলে অন্য কোথাও যেতে হবে। তবে গরিব অসহায়দের সুবিধার্থে এখানে জরুরিভাবে একজন গাইনি ডাক্তার প্রয়োজন।
রাজবাড়ীর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এফডব্লিউভি হোসনে আরা বেগম বলেন, আগে ওয়ার্ডভর্তি রোগী থাকতো, তারাও আনন্দের সঙ্গে কাজ করতেন। এখন চিকিৎসক নেই, রোগীর সংখ্যাও কম। তবে সিজার ছাড়া অন্যান্য সেবা তারা দেন। জটিল হলে অন্যত্র রেফার করেন। চিকিৎসক না থাকায় নরমাল ডেলিভারির রোগীও এখানে থাকতে চায় না। যার কারণে জরুরি ভিত্তিতে একজন গাইনি চিকিৎসক এখানে প্রয়োজন।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মো. আজম বলেন, মা ও শিশু সেবা কার্যক্রম চলছে। এখন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কোনো সার্জন চিকিৎসক নেই। তবে নতুন ৩৩০ জন চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ সম্পূর্ণ হলে চিকিৎসক পাওয়া যাবে। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসকসহ তারা অনেকবার লিখছেন। আশা করছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে গাইনি সার্জন তারা পাবেন।