কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের মামলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। কোম্পানির আরেক উদ্যোক্তা পরিচালক এমএ খালেককে এবং ছেলে রুবায়াত খালেককে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
শাহবাগ থানার পুলিশের এসআই নিজাম উদ্দিন ফকির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মামলার বাদী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। নজরুল ইসলাম সম্প্রতি প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান হয়েছেন।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির মাধ্যমে কোম্পানির গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সম্পদের পাহাড় গড়েছিলেন নজরুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুগান্তর। ওইদিনই কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রতিবেদনেও দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে।
জানা গেছে, বীমা গ্রাহকদের জমাকৃত ৮০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে শাহবাগ থানায় মামলায় দায়ের করে সিআইডি। মামলা নং ১৫(৯)২২। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশানের বাসা থেকে নজরুল ইসলাম, আব্দুল খালেক ও ছেলেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আজ তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল এবং জামিনের আবেদন করেন। তবে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নজরুল ইসলামের দুই দিনের রিমান্ড ও এমএ খালেক এবং তার ছেলে রুবায়াত খালেকের দুই দিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। এই টাকায় ফ্লোরিডায় নিজেদের নামে প্রাসাদসম বাড়ি এবং নিজের ও স্ত্রীর নামে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। কিন্তু বীমার টাকা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার গ্রাহক নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
মূল লুটপাট হয় ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে। এ সময়ে কোম্পানির লাইফ ফান্ড ও এফডিআর ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। দুটি জমি ক্রয় দেখিয়ে সাড়ে ৩শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে নেওয়া হয় হাজার কোটি টাকার বেশি। আর বীমার টাকা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার প্রাহক নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
এর সঙ্গে সাবেক অডিট কোম্পানির চেয়ারম্যান এমএ খালেকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে এখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ ছাড়া গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ না করাসহ নানা আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে চলতি বছরের জুন মাসে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। তদন্তে অর্থপাচারের প্রমাণ মিলেছে। এরপর দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন তিনি।