মঙ্গলবার , ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

অকৃতকার্য হয়ে হতাশায় ভুগছিল হলিক্রসের ছাত্রী পারপিতা

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ ৩:৩৫ অপরাহ্ণ

এর আগে একই ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কঠিন প্রশ্নপত্র তৈরি করে শিক্ষার্থীদের মনে ভয় ঢুকিয়ে পরোক্ষভাবে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হতো। তবে ঢাকা বোর্ডের তদন্ত কমিটি বলছে, অভিযুক্ত উচ্চতর গণিতের শিক্ষক শোভন রোজারিওর (যার বিরুদ্ধে প্রাইভেট নিয়ে অভিযোগ আছে) বিরুদ্ধে প্রাইভেটে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করানোর বিষয়টি প্রমাণিত নয়। তবে তিনি বিদ্যালয়ের নির্দেশনা না মেনে নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রাইভেট–কোচিং করান। আরও কয়েকটি বিষয়ে ডিআইএর তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যের সঙ্গে ঢাকা বোর্ডের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের কিছু পার্থক্য রয়েছে।

গত ২৩ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় একটি বহুতল ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে পারপিতা ফাইহা। তাঁর স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় মেয়েটিকে অকৃতকার্য করানোর অভিযোগ উঠলে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পৃথকভাবে তদন্তে নামে।

ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক মুহাম্মদ রবিউল আলমের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আজই জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে স্থায়ীভাবে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেওয়াসহ ছয় দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এখন প্রতিবেদনটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন

হলিক্রস ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে যা উঠে এল

ফাইল ছবি

বিভিন্ন জনের বক্তব্য ও কমিটির পর্যবেক্ষণ

তদন্ত কমিটি হলিক্রস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক, পারপিতা ফাইহার সহপাঠী, মা, পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে। এ ছাড়া পারপিতার উচ্চতর গণিতের উত্তরপত্র (দ্বিতীয় সাময়িক) বোর্ডের পরীক্ষক দিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করা হয়।

প্রধান শিক্ষক সিস্টার রানী ক্যাথরিন গোমেজের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য অনুযায়ী, পারপিতা ছিল হাসিখুশি, কৌতূহলপ্রিয়, প্রাণবন্ত ও বন্ধুবৎসল শিক্ষার্থী। তার বিষয়ে কোনো শিক্ষকের কোনো অভিযোগ ছিল না। পারপিতা ও তার অভিভাবকও কোনোদিন কোনো বিষয়ে অভিযোগ করেনি। ২০২১ সালের অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় সে সব বিষয়ে পাস করে ৩২তম স্থান অর্জন করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় এবং বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ পায়। তবে গত জুলাই-আগস্টে নবম শ্রেণিতে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষায় সাধারণ গণিত, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিতে অকৃতকার্য হয়।

তদন্ত কমিটি বলছে, নিজ প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা বিষয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট-কোচিং না করানোর বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষক শোভন রোজারিওর (যাঁর বিরুদ্ধে প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে অভিযোগ) বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়। প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়ে তদন্ত কমিটিকে অভিযুক্ত শিক্ষক শোভন রোজারিও বলেন, ‘খেয়েপরে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রাইভেট-কোচিং করাই। নবম শ্রেণির সাতজন শিক্ষার্থী আমার কাছে প্রাইভেট পড়ে।’ তিনি দাবি করেছেন, কোনো ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়তে তিনি চাপ বা প্ররোচিত করেননি।

সার্বিকভাবে তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ হলো, উচ্চতর গণিতের শিক্ষক শোভন মার্টিন ডি রোজারিও বিদ্যালয়ের নির্দেশনা না মেনে নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রাইভেট-কোচিং করান। তবে পারপিতা ফাইহার দ্বিতীয় অন্তে (দ্বিতীয় সাময়িক) উচ্চতর গণিতে প্রাপ্ত নম্বর ইচ্ছামাফিক কম দেওয়া হয়নি।

তদন্ত কমিটি পারপিতার ঘনিষ্ঠ ৯ জন সহপাঠীর লিখিত বক্তব্য নিয়েছে। এতে শিক্ষক শোভন রোজারিও এবং পারপিতার বাবার আচরণের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত কমিটি বলছে, শোভন রোজারিও একটু রাগী হলেও শ্রেণিকক্ষে ভালো পড়াতেন। তাঁর কাছে প্রাইভেট-কোচিং করে ফেলও করেছে, আবার প্রাইভেট-কোচিং না করে সর্বোচ্চ নম্বরও পেয়েছে।

বেশ কয়েকজন ছাত্রীর লিখিত বক্তব্য থেকে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় পারপিতার মধ্যে বাবার কাছে ফলাফল প্রকাশ নিয়ে ভয়ে ছিল। তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়।

তদন্ত কমিটি পারপিতার ডায়েরির তিনটি পাতার লেখা দেখে তার মধ্যে একধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধ এবং হতাশার (ডিপ্রেশন) চিত্র লক্ষ করেছে। এ জন্য ডায়েরির ওই তিনটি পাতার অধিকতর এবং যুক্তিসিদ্ধ মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা উদ্‌ঘাটনে একজন মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য মতামত দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তারা আরও বলেছে, পারপিতা দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা ‘সিক বেডে’ দেয়নি। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় দুই-তিনটি পরীক্ষা দিয়েছিল সিক বেডে। কারণ, তখন তার বসন্ত রোগ হয়েছিল।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯–উত্তর শিখনঘাটতি ও উচ্চতর গণিত বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে নবম শ্রেণিতে নতুন ও অপেক্ষাকৃত জটিল হওয়ায় এ বিষয়ে অকৃতকার্যের হার লক্ষণীয় পর্যায়ে। এ ছাড়া কোভিড-১৯–পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণে হলিক্রস উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা নেয়নি।

ছয় দফা সুপারিশ

সার্বিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদনে ছয়টি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো, শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হলিক্রস উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে একজন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ করা, শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি (মাইন্ডসেট তৈরি), শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্নয়ন ও পরীক্ষাসহ বিদ্যালয়ের সহশিক্ষাক্রমসংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভীতি দূর করতে সেমিনারের আয়োজন করা এবং শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ ও পরীক্ষায় সন্তানকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে সহায়তার বিষয়ে অভিভাবকদের করণীয় বিষয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা দরকার।

এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ নিয়মিত তদারকের মাধ্যমে জোরদার করা, বিভিন্ন সাময়িক পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করার বিষয়েও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ - দেশজুড়ে