দল থেকে বহিষ্কৃত ও বাদ দেওয়া সব নেতাকর্মীকে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এই নির্দেশ দেন তিনি।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের প্যাডে রওশন এরশাদের সই করা চিঠিটি জিএম কাদেরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে রওশন এরশাদ পার্টির গঠনতন্ত্রের কয়েকটি ধারাকে গণতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থি উল্লেখ করে সেগুলো স্থগিতের নির্দেশ দেন। এছাড়া সংসদ সংসদ মসিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা, আব্দুল গাফফার বিশ্বাসকে আগের পদে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয় চিঠিতে।
চিঠিতে বলা হয়, এরই মধ্যে দলীয় কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, বিগত দিনে দলের বহু জ্যেষ্ঠ, অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল পরীক্ষিত নেতাকর্মীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে, পদোন্নতিবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। এতে করে পার্টিকে দিন দিন দুর্বল ও খণ্ডিত করা হয়েছে। পার্টির মধ্যে অগণতান্ত্রিক আবহ থাকায় নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং পদ হারানোর ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে ফের পার্টি খণ্ডিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থা অবসানে পার্টি শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে বহিষ্কৃত ও বাদ দেওয়া নেতাকর্মীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেন পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
তিনি চিঠিতে বলেন, নবম সম্মেলনের পর পদ-পদবিতে না রাখা সাবেক মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ সাত্তার, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, কাজী মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম বাচ্চু, সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরুসহ দেশজুড়ে অব্যাহতি, বহিষ্কার ও নিষ্ক্রিয় করে রাখা সব নেতাকর্মীকে এই আদেশ জারির পর থেকে যার যার আগের পদ-পদবিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
রওশন এরশাদ বলেন, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে অনুমোদিত পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০ এর উপধারা-১ এর সব বিধানের অপব্যবহার হয়, যা গণতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থি। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের বিধি বিধান মেনেই তার কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেখানে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র লঙ্ঘনের সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, দেশজুড়ে পার্টির সব তৃণমূল নেতাকর্মীও এসব ধারার বিপক্ষে। এটা বাতিল চায় লাখ লাখ পল্লিবন্ধুপ্রেমী কর্মী-সমর্থক।
জাপা চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে চিঠিতে রওশন এরশাদ বলেন, আপনার মন্তব্য অনুযায়ী সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ ও সরকার পরিচালনা ব্যবস্থা যেমন এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে, ঠিক তেমনই গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার উপধারা ১ এর সব উপধারা ও অনুচ্ছেদের মাধ্যমে যখন-তখন তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত শোকজ বা বিনা নোটিশে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে, যা একজন রাজনৈতিক কর্মীর গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ গৃহীত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার ১(১), উপধারা-২ ও উপধারা-৩ বর্ণিত বিধানাবলির সঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ন্যূনতম মিল নেই।
জাপার নেতাকর্মীদের দাবি মেনে দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব ক্ষমতা স্থগিত করা হলো বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন রওশন এরশাদ।