জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমানতের সুদের ওপর উৎসে কর কর্তনের হার আরোপের ক্ষেত্রে অন্ধকারে থাকতে চায় না জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। তিনটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডকে পাঠানো চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো চিঠিতে আমানতের সুদের ওপর উৎসে কর কর্তনের ক্ষেত্রে ক্যাটাগরি স্পষ্টিকরণ বিষয়ে জানতে চেয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।
গত ৬ সেপ্টম্বর একই ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের হার নির্ধারণের জন্য কোম্পানি ও ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে, জনতা ব্যাংক চায় আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৫৩ এফ অনুযায়ী আমানতের সুদের ওপর উৎসে কর কর্তনের হার আরোপের বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। জনতা ব্যাংক ১৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছে এনবিআরকে।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মাকসুদা নাসরীনের সই করা চিঠিতে বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ২(২০), ২(৪৬) এবং ৫৩ এফ এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং সংযুক্ত পত্রে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান/প্রতিষ্ঠানের তহবিল হিসাবে সুদ প্রদানকালে উৎসে কর কর্তন বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক খান তামজিদ আহমেদ সই করা চিঠিতে বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৫৩ এফ ধারা অনুযায়ী, করদাতা কোম্পানি হলে ২০ শতাংশ, করদাতা ব্যক্তি হলে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। এছাড়া স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত গ্রাচুইটি ফান্ড অথবা পেনশন ফান্ডের ক্ষেত্রে এই হার ৫ শতাংশ। অন্যদিকে করদাতা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অথবা এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানকার শিক্ষকরা এমপিও ভুক্ত, এছাড়া প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান যারা আইনের দ্বারা স্বীকৃত এবং চার্টার্ড অ্যাকউন্ট দ্বারা পরিচালিত-তাদের ক্ষেত্রে করের হার ১০ শতাংশ।
চিঠিতে বলা হয়, আমানতকারী ৭৫ ধারায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণক/উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে সব ধরনের আমানতের সুদ/মুনাফার ওপর উল্লেখিত ছকে নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত আরও ৫০ শতাংশ উৎসে কর কর্তনের বিধান করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কোম্পানি পর্যায়ের কোনো আমানতকারী ৭৫ ধারায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণক/উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে প্রদেয় সুদ/মুনাফার ওপর ২০ শতাংশের স্থলে ৩০ শতাংশ উৎসে কর কর্তন প্রযোজ্য হবে। তাই কোম্পানির অধিভুক্ত আমনতকারীদের এবং ব্যক্তি অধিভুক্ত আমানতকারীদের চিহ্নিত করার নিমিত্তে কোম্পানি এবং ব্যক্তির সংজ্ঞা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকটি।
জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে এনবিআরকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৫৩ এফ ধারা অনুযায়ী, কোম্পানি করদাতার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু জনতা ব্যাংক লিমিটেড সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/বোর্ড/কর্তৃপক্ষ/অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী আমানতসহ বিভিন্ন ধরনের আমানত রয়েছে। যা মেয়াদপূর্তিতে নগদায়নের সময় ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনে আপত্তি উত্থাপন করছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এছাড়া একই ধারায় ২নম্বর ক্রমিকে কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কোনগুলো তাও স্পষ্ট নয়। এমতাবস্থায় জটিলতা নিরসনে কোন প্রতিষ্ঠানগুলো কোম্পানি এবং কোনগুলো কোম্পানি নয়- সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকটি।