রেস্তোরাঁর মালিক ও ব্যবস্থাপকের ভাষ্য, প্রায় ছয় মাস আগে বেউথা এলাকায় কালিগঙ্গা নদীর দক্ষিণ পারে ওই রেস্তোরাঁ গড়ে তোলেন জনি। তিনি জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক। গতকাল রাত আটটার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক মনিরুল হক, ছাত্রলীগের কর্মী শামীম, আতিকুর, তন্ময়সহ ছয়-সাতজন নেতা-কর্মী মদ্যপ অবস্থায় ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে অশোভন আচরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া তরুণীদের উত্ত্যক্ত করেন। নেতা–কর্মীরা রেস্তোরাঁয় খেতে আসা অন্য লোকজনকেও বকাঝকা করেন। এ সময় জনি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংযত হতে বলেন। তাঁরা হইহল্লা করে নিজেদের ‘ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের’ লোকজন বলে দাবি করেন। পরে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান।
এরপর রাত ১০টার দিকে মনিরুল, শামীম, আতিকুরসহ ছাত্রলীগের ১০-১২ জন নেতা-কর্মী ধারালো চাপাতি ও রামদা নিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে হামলা চালান। হামলাকারীরা রেস্তোরাঁর আসবাব, দুটি রেফ্রিজারেটর, বেশ কয়েকটি চেয়ার ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এ সময় বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক আসিফ হোসেনকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করেন। এতে তাঁর দুই হাত গুরুতর জখম হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে ওই রেস্তোরাঁয় গিয়ে চার–পাঁচটি টিন শেডের ঘর ভাঙচুর অবস্থায় দেখা যায়। এ সময় সেখানে রেস্তোরাঁর দুটি রেফ্রিজারেটর, বেশ কয়েকটি চেয়ার ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙা অবস্থায় পড়ে ছিল।
রেস্তোরাঁর মালিক জনি বলেন, হামলাকারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মদ্যপ অবস্থায় তাঁর রেস্তোরাঁয় এসে নারীদের উত্ত্যক্ত করছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে অভিযোগ জানান। তবে এতে কোনো লাভ হয়নি। উল্টো রাত ১০টার দিকে ছাত্রলীগের ১০-১২ নেতা-কর্মী রেস্তোরাঁয় ঢুকে তাণ্ডব চালান। হামলার সময় রেস্তোরাঁ থেকে ২৪ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান হামলাকারীরা। এ ঘটনায় তাঁর ছয় লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে আজ দুপুরে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মনিরুল হকের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অপরাধমূলক। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত নেতা–কর্মীদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়া হলে রাজিদুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত নেতা–কর্মীরা ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। আজ সকালে তিনি নিজেও ওই রেস্তোরাঁয় যান। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।