এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন বেলারুশিয়ান মানবাধিকারকর্মী আলেস বিলিয়াতস্কি, রুশ মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল এবং ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ। শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।
এরপরই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বেলারুশ সরকার। কারাবন্দি বিলিয়াতস্কিকে মর্যাদাপূর্ণ শান্তি পুরস্কার দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা। নোবেল কমিটির সমালোচনা করে দেশটি বলেছে, এই সিদ্ধান্ত দেখতে পেলে নোবেল পুরস্কারের প্রবক্তা আলফ্রেড নোবেল প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হতেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবর অনুসারে, বেলারুশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনাতোলি গ্লাজ এক টুইটে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নোবেল কমিটির বেশ কয়েকটি মৌলিক সিদ্ধান্তে এতটাই রাজনীতিকরণ হয়েছে যে, এর মাধ্যমে আলফ্রেড নোবেলকে যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে এবং তিনি কবরের ভেতর কষ্ট পাচ্ছেন।
প্রতি বছর অন্যান্য বিভাগে নোবেলজয়ীদের নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য না হলেও শান্তিতে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নিয়ে বিতর্ক থাকেই। নোবেল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে তিন প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ, রাশিয়া এবং ইউক্রেনে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের তিন অসামান্য চ্যাম্পিয়নকে সম্মান জানাতে চেয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এ বছরও মূলত মস্কো-বিরোধীদেরই শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বর্তমানে যুদ্ধ চলছে। আর বেলারুশের স্বৈরশাসক আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বরাবরই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ। ইউক্রেন ইস্যুতেও মস্কোর পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
আলেস বিলিয়াতস্কিকে পুরস্কার দেওয়া প্রসঙ্গে নোবেল কমিটি বলেছে, তিনি ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি বেলারুশে গণতন্ত্র আন্দোলনের সূচনাকারীদের একজন। বিলিয়াতস্কি তার দেশে গণতন্ত্রের প্রচার ও শান্তিপূর্ণ উন্নয়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু বেলারুশের সরকারি কর্তৃপক্ষ বারবার তার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। ২০২০ সাল থেকে এখনো বিনাবিচারে বন্দি রয়েছেন তিনি। প্রচণ্ড কষ্ট সত্ত্বেও বিলিয়াতস্কি বেলারুশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেননি।
রুশ মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়ালের বিষয়ে বলা হয়েছে, চেচেন যুদ্ধের সময় জনগণের বিরুদ্ধে রুশ ও রুশপন্থি বাহিনীর অত্যাচার এবং যুদ্ধাপরাধের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইবাছাই করেছে সংস্থাটি। সামরিকবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আইনের শাসননির্ভর সরকার ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রচারণার অগ্রভাগে দাঁড়িয়েছে মেমোরিয়াল।
আর ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর সংস্থাটি ইউক্রেনের জনসাধারণের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধ শনাক্ত ও নথিভুক্ত করার প্রচেষ্টায় নিযুক্ত হয়। এটি অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
এর আগে, ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জেতেন ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা এবং রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য দুঃসাহসিক লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। রুশ সাংবাদিক মুরাতভ পুতিনের অন্যতম কঠোর সমালোচক বলে পরিচিত।