বিস্ফোরণ যেন সেতু থেকে নিম্নমুখী হয়, তা নিশ্চিত করতে ভারী চাপ প্রয়োজন হয়। ট্রাক বোমা ব্যবহার করে এই মাত্রার ক্ষতিসাধন করা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, এ ক্ষেত্রে একজন আত্মঘাতী চালক থাকার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা এমন কিছু শুনিনি।’
কব স্মিথ মনে করেন, যদি কোনো যুদ্ধজাহাজ থেকে হামলা চালানো হতো, তবে সেটির কোনো না কোনো আলামত শনাক্ত হতো। তবে কবসহ অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্চ সেতুতে কী ঘটেছিল, তা নিশ্চিত হওয়ার মতো যথেষ্ট ভিডিও প্রমাণ নেই।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞ সদস্য কব স্মিথ অবশ্য বিশেষ বাহিনীর অভিযান নিয়েও সন্দিহান। তিনি বলেন, এমন ব্যবস্থা আছে, যার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিমানুষকে ঝুঁকিতে না ফেলে সেতুটি ধ্বংস করে দেওয়ার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
তবে গত রোববার রাশিয়ার তদন্ত কমিটির প্রধান আলেক্সান্দার বাস্ত্রিকিন ট্রাক বোমা হামলার সম্ভাবনাকে আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করেছেন। পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি এক আলাপে বাস্ত্রিকিন বলেন, ট্রাকটি বুলগেরিয়া থেকে জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, নর্থ ওসেটিয়া হয়ে রাশিয়া গিয়েছিল। বাস্ত্রিকিন আরও বলেন, কারা কারা সন্ত্রাসী হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিতে পারে এবং রুশ ফেডারেশনের ওই এলাকায় কারা কার্যক্রম পরিচালনা করে, তার ভিত্তিতে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করা সম্ভব।
ইউক্রেনে জার্মান কনস্যুলেটের ভবনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
শনিবার ভোরের আলো ফোটার আগেই ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়াকে সংযোগকারী ‘কার্চ সেতু’তে বিস্ফোরণ হয়। এতে ওই পথে সড়ক ও রেল যোগাযোগ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউক্রেনে অভিযানের ক্ষেত্রে সাময়িক সংকটের মধ্যে পড়ে রাশিয়া। শুধু তা–ই নয়, ইউক্রেনের কয়েকটি অঞ্চল থেকে পিছু হটা রুশ বাহিনীর জন্য এটি লজ্জাজনকও হয়ে পড়ে। তবে সোমবার জোরেশোরে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে মস্কো। রুশ কর্মকর্তারা হুঁশিয়ার করেছেন, এমন হামলা সামনে আরও হবে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ কী বলছে
কীভাবে বিস্ফোরণ চালানো হয়েছে, তা নিয়ে মস্কো ইউক্রেনকে দায়ী করলেও ইউক্রেনীয়দের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত হামলা চালানোর কথা স্বীকার করা হয়নি।
কার্চ সেতু থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সবচেয়ে কাছের অবস্থানস্থলের দূরত্ব প্রায় ১৫০ মাইল। ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অস্ত্রের আওতা থেকেও বেশ ভালো দূরত্বেই এটি অবস্থিত। তবে গ্রীষ্মকালে ওই এলাকায় কিছু ইউক্রেনীয় ড্রোন ওড়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল।
গত জুনে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের মেজর জেনারেল দিমিত্র মারচেনকো বলেছিলেন, কার্চ সেতু তাদের ১ নম্বর লক্ষ্যবস্তু। রেডিও লিবার্টিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তখন বলেছিলেন, ‘তাদের সেনাবাহিনী কিংবা আমাদের সেনাবাহিনীর কাছে এটি আর গোপন কিছু নয়। তাদের বেসামরিক নাগরিক কিংবা আমাদের বেসামরিকদের ক্ষেত্রেও তা–ই। এটি হবে হামলার ১ নম্বর লক্ষ্যবস্তু।’
তবে শনিবার সেতুটিতে বিস্ফোরণের পর থেকে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা মুখে তালা দিয়ে রেখেছেন। সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেননি তাঁরা। রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ মস্কভা ডুবে যাওয়ার ঘটনা নিয়েও একই ভূমিকা দেখিয়েছিলেন তাঁরা।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের কেউ কেউ কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনাকে রাশিয়ার নিরাপত্তা বিভাগ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াই হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য তাঁরা তাঁদের বক্তব্যের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণের কারণ কী, কারাই–বা এ হামলা চালিয়েছে, তা এখন যেন উন্মুক্ত প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে হয়তো। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউক্রেন সংঘাত যে নতুন মাত্রা নিয়েছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ওপর এখন অবিরত হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারাও প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেওয়ার শপথ নিয়েছেন।