দেশে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ লিভারের রোগে আক্রান্ত হন। তাদের অনেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। তবে এবার দেশেই লিভারের চিকিৎসার দ্বার খুললো। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ উদ্বোধন করা হয়েছে।
লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য এরই মধ্যে ২২ জন রোগী হাসপাতালে এসেছেন। এরমধ্যে ১২ জনের লিভার প্রতিস্থাপনের সময়ও ঠিক হয়ে গেছে।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) বিএসএমএমইউতে মুজিব শতবর্ষ লিভার প্রতিস্থাপন প্রোগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ সার্জারি বিভাগের উদ্বোধন করেন।
\
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি জানিয়েছেন, নতুন যে সুপার স্পেলাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে, সেখানে লিভার প্রতিস্থাপনকে গুরুত্ব দিয়ে ১০০টি শয্যা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দেশে লিভার প্রতিস্থাপন শুরু হলে রোগীদের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি বছরে কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮০ লাখ মানুষ লিভার রোগে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে মারা যায় প্রায় ২৩ হাজার জন। তবে লিভার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪-৫ হাজার রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। সচ্ছল রোগীরা ৩০ লাখ থেকে কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে গিয়ে লিভার প্রতিস্থাপন করছেন। কিন্ত অসচ্ছলরা লিভার প্রতিস্থাপন করতে না পেরে মারা যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোবিলিয়ারি, পেনক্রিয়াটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী আনসারী পিনু ও মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সারওয়ার আহমেদ সোবাহান।
প্রবন্ধে বলা হয়, বিভিন্ন জটিল রোগের কারণে লিভার প্রতিস্থাপন একটি অতি আধুনিক চিকিৎসা। যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বিশেষ করে ভারতে নিয়মিত প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল, মডিউল অপারেশন থিয়েটার, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও কার্যকরী প্রশাসন ব্যবস্থায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। লিভার প্রতিস্থাপনে গড়ে ১২-১৮ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। লিভার ফেইলর, লিভার সিরোসিস, জন্মগত, লিভার সমস্যাতেও লিভার প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন।
বিশ্বে প্রতি বছর ৩৮ থেকে ৪০ হাজার রোগীর লিভার প্রতিস্থাপন হয়। এরমধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপেই সর্বোচ্চ। দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে ৩ থেকে ৪ হাজার রোগীর লিভার প্রতিস্থাপন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ছয়টি লিভার প্রতিস্থান করা হয়েছে। ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার প্রতিস্থাপন শুরু হয়।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোবিলিয়ারি, পেনক্রিয়াটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগে লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিভিন্ন বিভাগ থেকে আসা রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ২২ জন লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিএসএমএমইউতে এসেছেন। তার মধ্যে ১২ জন রোগী লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য নির্ধারিত হয়েছেন।
বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে বিএসএমএমইউতে লিভার প্রতিস্থাপন নিয়ে গবেষণা ও লিভারের জটিল টিউমার অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিএসএমএমইউয়ের কেবিন ব্লকে মডিউল ওটি, কুসা মেশিনসহ আরও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান বক্তারা।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ সেবাকে আরও সম্প্রসারণ করার জন্য এরই মধ্যে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। এ হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনকে গুরুত্ব দিয়ে ১০০টি শয্যা রাখা হয়েছে। বিশ্বের উন্নত সব চিকিৎসা এ হাসপাতালে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শিগগির নিয়মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার প্রতিস্থাপন শুরু করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা প্রায় সম্পন্ন। কিডনি-লিভারসহ সামগ্রিক প্রতিস্থাপনে জোর দেওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পুরোদম কাজ চলছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মোহছেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ ও পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রি. জে. ডা. নজরুল ইসলাম খান।
এসময় হেপাটোবিলিয়ারি, পেনক্রিয়াটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র দাস, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফ উদ্দিন, সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক হোসেন ও অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. পবিত্র কুমার দেবনাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।