পুলিশকে বলা হয় জনগণের সেবক, মানুষের জানমালের হেফাজতকারী। রাষ্ট্রের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে এ বাহিনীর রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ জাতীয় যে কোনো সংকট মোকাবিলায় তারাই থাকেন সামনের কাতারে। মধ্যরাতে সাধারণ মানুষ যখন মশারি টানিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখনো জননিরাপত্তায় নির্ঘুম রাত কাটে পুলিশ সদস্যদের। বছরজুড়ে শত ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে পথে পথে টহলে থাকেন তারা। বিরামহীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় পুলিশ সদস্যদের নানা রোগে-শোকে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে থাকা এ বাহিনীর ত্যাগ ছিল উদাহরণতুল্য।
এখন সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলছে। এডিস মশাবাহিত এ ভাইরাসটিতে প্রতিদিন রেকর্ড ভাঙছে সংক্রমণ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে পুলিশ সদস্যদের মাঝেও। প্রতিদিন জ্বর নিয়ে রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আসছেন পুলিশ সদস্যরা। নমুনা পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ১৫ জন। তবে চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত কোনো পুলিশ সদস্য মারা যাননি।
সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের বিশেষ যত্ন নিচ্ছেন নার্সরা। রোগীর স্বজনরা ডাকার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাচ্ছেন তারা। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশই মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে অনেকেই দেরি করে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। কিন্তু এখন জ্বর হওয়ার দু-একদিনের মধ্যেই অনেকে হাসপাতালে চলে আসছেন। ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে ডেঙ্গুরোগীদের প্লাটিলেটের জন্য প্রতিদিনই কয়েক ব্যাগ রক্ত লাগছে। রোগীদের আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও পুলিশ ব্লাড ব্যাংক থেকে এসব রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, অপরাধীদের গ্রেফতার, মামলা নেওয়া, বিচারে সহায়তা, সড়কে শৃঙ্খলা ও ভিআইপি নিরাপত্তা-প্রটোকলসহ অনেক দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কাজেও যুক্ত থাকে পুলিশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করোনা মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসুস্থ করোনা রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির স্বজনরা যখন সংক্রমণের ভয়ে দূরে সরে গেছেন, তখনো মৃতব্যক্তির দাফন বা সৎকারে পুলিশ সদস্যরাই ছিলেন নির্ভীক। তবে জনসেবায় অগ্রভাগের এ বাহিনীতে সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যু বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক নিয়মিত বুলেটিনে জানানো হয়, সারাদেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৭৫০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪১৬ জনে। তবে এসময়ে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২ হাজার ৭১৬ জন। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৯ হাজার ৪৬৬ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। এরমধ্যে মারা যান ১০৫ জন।
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পুলিশ সুপার (অপারেসন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) সাইফুল ইসলাম শানতু জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিশেষায়িত ট্রেনিং নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) ও চলতি মাসের প্রতিদিনই আউটডোরে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় যাদের জ্বর একটু বেশি তাদের ভর্তি রাখা হচ্ছে। সচেতনতার কারণে অনেকেই আগেভাগে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এখনো আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি।
তিনি বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন ১৫ জন।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় পদক্ষেপ জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ডেঙ্গুর বিষয়ে আমরা আগে থেকেই বেশি সচেতন। নিজের রুম ও বাসার আশপাশ পরিষ্কার রাখছি, রাস্তাঘাটে কোনো কিছু এদিক-সেদিক যেন ফেলে রাখা না হয়- পুলিশ ও জনগণকে এ ধরনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। যারা ডিউটি করছেন তারা যেন সাবধানতার সঙ্গে ডিউটি করেন।