সীমান্তবর্তী আসন সিলেট-৫। তুলনামূলক নিম্ন আয়ের এলাকা। রাজনৈতিক হানাহানি এক সময় ছিল। এখন নেই। অবস্থানগত দিক থেকে এটি জামায়াতের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী হারিছ চৌধুরীও এই আসনের। তাদেরই অবস্থান শক্ত এখানে। সময়ের পরিক্রমায় সেটি পরিবর্তন হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান সমানে সমান। জামায়াতের দুর্গ গুঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ একটি অবস্থান গড়লেও বিএনপি এখনো আটকে আছে প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর বৃত্তে।
এখানে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি হাফিজ আহমদ মজমুদার। তার পাশাপাশি এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুক উদ্দিন আহমেদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. আহমেদ আল কবির এবং সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ।
বিএনপি থেকে এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তবে স্থানীয় বিএনপি চায়, হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা চৌধুরী আসুক এখানে। হারিছ চৌধুরীর জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে আসনটি হস্তগত করতে চায় বিএনপি। তার প্রতি এলাকার মানুষের সহানুভূতি আছে। সে কারণে জনসমর্থন পাবেন সামিরা। তবে সামিরার নির্বাচন ও রাজনীতিতে আগ্রহ নেই। বাবার জীবনাবসান ও দাফন নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা তাকে মানসিকভাবে রাজনীতি থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। গেলোবার আমি তিন ঘণ্টা আগে ছাড়লাম। নেত্রী বললেন, দিয়ে দাও। দিয়ে দিয়েছি। আমার এরকমই যাচ্ছে। সম্মানের জন্য মনোনয়নে তো আগ্রহ আছেই। তবে নেত্রীর নির্দেশের বাইরে একচুলও নড়িনি।
তিনি বলেন, এলাকাটা মৌলবাদী অধ্যুষিত, আমরা কাজ করে এটাকে লাইনে এনেছি। কানাইঘাট তো জামায়াতের এলাকা। এখন অবস্থান ফিফটি ফিফটি। জকিগঞ্জটায় আমি কাজ করেছি, ওখানে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি।
গোয়াইনঘাটের লাখাই গ্রামের বাসিন্দা হোটেল ব্যবসায়ী আলী হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এটি সীমান্তবর্তী এলাকা। তুলনামূলক গরিব এখানকার মানুষ। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমানে সমান। আগে রাজনৈতিক বিবাদ ছিল, এখন নেই।
তিনি বলেন, গেলো বন্যায় এমপি সাহেব এলাকায় আসছেন। সমন্বিতভাবে লোকজনকে সাহায্য-সহযোগিতাও করা হয়েছে। এমপির পাশাপাশি মাসুক উদ্দিন সাহেবও এলাকায় আসেন, মানুষের সঙ্গে মেশেন। তিনিই মূলত দক্ষিণ-পূর্ব সিলেটকে গাইড করেন।
জকিগঞ্জের কলাছড়া গ্রামের বাসিন্দা হোটেলবয় জাকারিয়া আহমেদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি জিতবে। এখানে তাদের ভোট বেশি।
লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটের ভালো অবস্থান এখানে। হারিছ চৌধুরীর প্রতিও সহানুভূতি আছে। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপির প্রতিও নাখোশ নন এলাকার লোকজন। তারা বলছেন, এমপি সাহেব প্রবীণ লোক। দানবীর হিসেবেই সামাদৃত। মূলত ব্যবসায়ী। উনি এলাকার অনেক লোককে চাকরি দিয়েছেন, নানাভাবে সাহায্য-সহায়তা করেছেন। গতানুগতিক অস্থির রাজনীতির চেয়ে ব্যবসার পাশাপাশি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে পছন্দ করেন।
কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩৩ নম্বর আসন সিলেট-৫। মোট ভোটার ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৯১ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৬১ হাজার ১২১।
ভোটের বিশ্লেষণে দেখা যায়, এখানে ১৯৯১ থেকে ইসলামী ঐক্যজোট একবার, জামায়াত একবার, জাতীয় পার্টি একবার এবং আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। সে হিসেবে দৃশ্যত আওয়ামী লীগের অবস্থান ভালো।