লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে কৃষকের জমি দখল করে পুকুর কেটে খামার তৈরি ও চাঁদা দাবির মামলায় সাবেক যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম জুয়েলকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে জেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নুসরাত জামান এ আদেশ দেন।
জাহিদুলের বিরুদ্ধে উপজেলার ভোলাকোট গ্রামে সৈয়দ আহম্মদ রেদোয়ানসহ ৩৫ কৃষকের প্রায় ৪০ বিঘা ফসলি জমি দখল করে পুকুর খননের অভিযোগ রয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. ইউনুস আলি মিন্টু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামিরা আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন। প্রধান আসামি জুয়েলের অপরাধ বিবেচনা করে তাকে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য চারজনকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা খাতুন ও পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন জুয়েলের বিরুদ্ধে যায়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলার ঘটনা আদালতে তুলে ধরা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলোও বিচারকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ঘটনাগুলো সত্য বলে বিবেচনা করে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
জুয়েল উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের ভোলাকোট গ্রামের পূর্ব ভূঁইয়া বাড়ির সৈয়দ আহমদের ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত সদস্য। কয়েক বছর ধরে জুয়েল রাজনৈতিক দাপটে ভোলাকোট ও আশপাশের গ্রামের লোকজনকে অনেকটা জিম্মি করে রাখেন। সহযোগীদের নিয়ে তিনি প্রায়ই সশস্ত্র মহড়া দিতেন। এজন্য তিনি স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘জুয়েল বাহিনী’ নামেও পরিচিত।
আদালত সূত্র জানায়, বাদী রেদোয়ান রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের ভোলাকোট গ্রামের আবদুল আজিজ ভূঁইয়ার ছেলে। চাকরির সুবাদে তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। ভোলাকোট গ্রামে তার ৭৬ শতাংশ জমিতে তিনি লোকজন দিয়ে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতেন। গত মে মাসে তিনি জানতে পারেন যুবলীগ নেতা জুয়েল তার জমি দখল করে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি ও পুকুর কেটে খামার করছেন। এতে ২৭ মে তিনি ওই জমিতে পৌঁছে বিষয়টি জানতে চাইলে জুয়েলসহ অভিযুক্তরা তাকে মারধরের পর পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এ ঘটনায় ২ জুন তিনি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জুয়েলসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। আদালত বিষয়টি নোয়াখালী জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
এদিকে, ৩০ আগস্ট পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এতে জোর করে কৃষকদের জমি কেটে ইটভাটায় মাটি বিক্রি ও পুকুর কেটে খামার তৈরির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে অভিযুক্তরা অসহায়দের কোণঠাসা করে রেখেছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে চাঁদা দাবির ঘটনার সত্যতা পায়নি পিবিআই।
বাদী সৈয়দ আহম্মদ রেদোয়ান বলেন, জুয়েল বাহিনী গঠন করে স্থানীয়দের জিম্মি করে রেখেছে। তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সবাই ভয় পাচ্ছে। আমিসহ ৩৫ জন কৃষকের জমি দখল করে তিনি পুকুর কেটে নিজের নামে খামার তৈরি করেছেন। জমি উদ্ধারে আমি আদালতে মামলা করেছি।
সরেজমিনে ঘটনাস্থল গিয়ে জানা যায়, ভোলাকোট গ্রামের আবদুল আজিজ, মাওলানা গোলাম রসুল, শাকিল মাহমুদ, জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, আবদুল কাদের, কবির হোসেন, আরিফ হোসেন, জসিম উদ্দিন, ফরিদ হোসেন, জাহিদ হাসান, নলচারা গ্রামের রুহুল আমিন, লক্ষ্মীধরপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম, পাচরুখি গ্রামের মো. নয়নসহ ৩৫ জন জুয়েলদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের দারস্থ হয়েছেন।