বৃহস্পতিবার , ১০ নভেম্বর ২০২২ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

প্রশ্নপত্রে এমন ভুল বিস্ময়কর ব্যাপার: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
নভেম্বর ১০, ২০২২ ৪:২৪ পূর্বাহ্ণ

‘সৃজনশীল প্রশ্নপত্র নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। সৃজনশীল প্রশ্ন শিক্ষার বড় ক্ষতি করেছে। এই পদ্ধতি শিক্ষকরাও বোঝেন না, শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাও বোঝেন না। একটি ধারা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে তা বোঝার সক্ষমতা রাখতে হয়। আমাদের এখানে তা হয় না। এ কারণেই প্রশ্নপত্রে বারবার সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো হচ্ছে।’

বলছিলেন শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক প্রফেসর ইমেরিটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

‘নেপালের জমিতে গরু জবাই করে আবদুল’ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সাম্প্রদায়িক এমন প্রশ্ন করা নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে সে প্রসঙ্গে জাগো নিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, ‘সমাজের একজন মানুষ হিসেবে এই চিত্র দেখে ভালো থাকার কথা নয়। প্রশ্নপত্রে এমন ভুল বিস্ময়কর ব্যাপার! একটি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন। কে করলো এমন প্রশ্ন? মডারেটর কী করলেন? এই প্রশ্নগুলোর তো জবাব পাওয়া দরকার।

সাধারণত যারা প্রশ্ন করেন, তারা অন্যদের চেয়ে কিছুটা যোগ্য। যারা মডারেট করেন, তারা আরও যোগ্য। মডারেটর থেকেও যোগ্য লোক এখানে দায়িত্বে আছেন। তার মানে এতগুলো যোগ্য লোক থাকার পর এমন ভুলকে সাধারণ ভুল বলা যাবে না। এখানে বিশেষ উদ্দেশ্য থাকতেই পারে। এই যোগ্য মানুষগুলো এই ভুল ধরতে পারলেন না। অথচ সাধারণ মানুষ ধরতে পারলো। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলো। মন্ত্রণালয়ের কাজটি কী? মন্ত্রী-সচিবরা কী ভূমিকা রাখছেন। দায়সারা গোছের বিবৃতি দিয়েই এমন ঘোরতর অন্যায় থেকে পার পাওয়া যায় না।’

‘দ্বিতীয়ত, সৃজনশীল প্রশ্নপত্র নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। সৃজনশীল প্রশ্ন শিক্ষার বড় ক্ষতি করেছে। এই পদ্ধতি শিক্ষকরাও বোঝেন না, শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাও বোঝেন না। একটি ধারা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে তা বোঝার সক্ষমতা রাখতে হয়। আমাদের এখানে তা হয় না। এ কারণেই প্রশ্নপত্রে বারবার সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো হচ্ছে। বলেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

‘শিক্ষকরা প্রশ্ন করার সময় এমন উদ্ভট প্রশ্ন করছেন। শিক্ষার্থীরাও উদ্ভট উত্তর দিচ্ছে। হাস্যকর করে ফেলেছে এই সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা। যারা প্রশ্ন করছে, তাদের চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটছে না। গড়পরতায় প্রশ্ন করে দিয়েই দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। এখানে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবাই গাইডবুকের ওপর নির্ভর করছে। হয়তো কোনো গাইডবুকে এমন প্রশ্ন ছিল, তাই হুবহু তুলে দিয়েছে। হয়তো জেনেই দিয়েছে। তাই সৃজনশীল এমন পদ্ধতিতে আমার ঘোরতর আপত্তি রয়েছে’ মন্তব্য করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

এই গবেষক চলমান শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে আরও বলেন, ‘সৃজনশীল হচ্ছে ভোগাস। আমাদের যে প্রথাগত পদ্ধতি সেটাই সঠিক ছিল। যদিও আমরা সেটি কার্যকর করতে পারিনি। আমরা গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে পরীক্ষানির্ভর করে ফেলেছি। পাবলিক পরীক্ষাই এখন প্রধান হয়ে গেছে শিক্ষার উন্নয়ন মাপকাঠিতে। আরও বাড়ানো হয়েছিল পাবলিক পরীক্ষা। পাবলিক পরীক্ষা এত বাড়ানো উচিত নয়। পরীক্ষা যত কম হবে শিক্ষার জন্য তত ভালো হবে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা হতে পারে। এখানে সমস্যা নেই। পাবলিক পরীক্ষা ম্যানেজ করার সক্ষমতাই তো নেই আমাদের। এ কারণেই নানা ভুল, হতাশা আর অসঙ্গতি সমাজে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। শিক্ষার জন্য একটি পাবলিক পরীক্ষাই যথেষ্ট।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সর্বনাশ করেছে মূলত তিনটি ধারা থাকার কারণে। সাধারণ, মাদরাসা আর ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা আমাদের বিভাজনটা আরও স্পষ্ট করেছে। আমরা আমাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। যার টাকা আছে সে ইংরেজি মাধ্যমে চলে যাচ্ছে।’

‘বাংলাদেশের সৃষ্টিই হয়েছে বিভাজন দূর করে সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা তো স্বাধীনতা এনেছি সবার জন্য সমমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে। তিন ধারার শিক্ষা থাকবে কেন? রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য রক্ত দেওয়া হয়েছে। সেই ভাষা এখন সব জায়গায়ই অবহেলিত।’

‘তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয় ব্রিটিশ আমলে। পাকিস্তান আমলে কিছুটা প্রসার ঘটে। এখন এই বিভাজনের শিক্ষা মহাপ্রবল আকার ধারণ করেছে। তিন ধারার শিক্ষা জাতিকেই বিভাজিত করেছে মাত্র।’

সর্বশেষ - আইন-আদালত