করতোয়ায় নৌকাডুবির দেড় মাসের মাথায় নিখোঁজ এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাবার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে নদী পার হচ্ছিলেন জয়া রানীর মা আলোশ্বরী রানী (২৪)। আলোশ্বরী ছোট মেয়ে জ্যোতি রানীকে (২) নিজের কোলে রেখে বড় মেয়ে জয়াকে দিয়েছিলেন তার নানির কোলে। মাঝনদীতে নৌকাডুবিতে পরিবারের সবাই তলিয়ে যান। উদ্ধারকারীদের মাধ্যমে আলোশ্বরী রানী পাড়ে উঠতে পারলেও জয়া, জ্যোতি, তাদের নানিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা নিখোঁজ হন। দুর্ঘটনার পর জ্যোতি ও পরিবারের অন্য তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও জয়া নিখোঁজ ছিল। ঘটনার ৪৭ দিনের মাথায় জয়ার গলিত লাশ উদ্ধার হলো।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ দুপুরে করতোয়া নদীতে বালু তোলা শ্রমিকেরা পানির নিচে গন্ধ পাচ্ছিলেন। পরে তাঁরা বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি বোদা থানা–পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে জানান। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় পানির নিচ থেকে দেহের অংশ বিশেষ ও মাথা উদ্ধার করে।
এদিকে নৌকাডুবির স্থানে আরও একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা সেখানে ভিড় করেন। পরে লাশটি শিশু জয়া রানীর বলে তার পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেন।
শিশু জয়া রানীর সৎ ভাই শান্ত রায় (২১) বলেন, ‘নদীতে লাশ পাওয়া গেছে, এমন খবর পেয়ে আমরা নদীর পাড়ে ছুটে আসি। পরে এসে লাশের কাপড় দেখে বুঝতে পারি, লাশটি আমার ছোট বোন জয়ার। ওর পরনে যে হলুদ রঙের জামাটি ছিল, সেটি দেখেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এটা জয়ার লাশ।’
বোদা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী বলেন, লাশটি যেখানে পাওয়া গেছে, সেখানে বর্তমানে প্রায় পাঁচ ফুট পানি। পানির মধ্যে লাশটি বালুর ভেতরে ছিল। শিশুটির লাশ দীর্ঘদিন পানিতে থেকে গলে গেছে। লাশের শরীর থেকে মাথাও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তবে পরনের কাপড় দেখে স্বজনেরা লাশটি জয়ার বলে নিশ্চিত হয়েছেন।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপঙ্কর রায় বলেন, লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বাজারের পাশে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক মানুষ নিয়ে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকায় বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। যাত্রীদের অধিকাংশই বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। ঘাট থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়।
নৌকাডুবির ঘটনার চতুর্থ দিন পর্যন্ত ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এরপর দেড় মাসের মাথায় ৯ নভেম্বর একজনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী, নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত নিখোঁজের তালিকায় থাকলেন আরও একজন। তিনি হলেন বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া-কলেজপাড়া এলাকার সরেন্দ্র নাথ বর্মণ (৬৫)।