শুক্রবার , ১১ নভেম্বর ২০২২ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

নোয়াখালী-৫ কাদেরের আসনে ‘একরাম আতঙ্ক’, বিএনপিতে ‘শঙ্কা’ জামায়াত

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
নভেম্বর ১১, ২০২২ ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

# ভোটে এগিয়ে বিএনপি
# পুরো মেয়াদে এমপি এলাকায় এসেছেন ৩/৪ বার
# এমপির সিদ্ধান্ত ও সহোদরের আচরণে ক্ষোভ
# একরামের গতিবিধির ওপর নির্ভর করছে জয়-পরাজয়

কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৭৩ নম্বর আসন নোয়াখালী-৫। বর্তমান এমপির স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ পাঁচ ভাগে বিভক্ত। এক উপজেলায় ২শ গজের মধ্যে দুই কার্যালয়। আলাদাভাবে পালন হয় কর্মসূচি। নির্বাচনের আগে এই দ্বন্দ্বের সমাধানই বড় চ্যালেঞ্জ দলটির। জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও সদরের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী এ আসনের প্রার্থী হতে চান। তার প্রভাব ও ওবায়দুল কাদের বলয় দলটির জন্য বড় ফ্যাক্ট।

অন্যদিকে ভোটে এগিয়ে বিএনপি। যদিও দলটিতেও আছে দ্বিধাবিভক্তি। সাবেক এমপি মরহুম মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদ এবং তার বাইরের বলয় আছে সেখানে। পাশাপাশি জামায়াত নিয়েও তাদের আছে শঙ্কা।

বিগত নির্বাচনগুলোর ভোটের বিশ্লেষণে দেখা যায়, আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও এন্টি আওয়ামী লীগ দলগুলোর ভোট সব সময় কাছাকাছি ছিল। জয়-পরাজয়ে ভোটের ব্যবধানও কম। ২০০৮ সালে মাত্র ১৩শ ভোটে জিতেছেন বর্তমান এমপি ওবায়দুল কাদের। যদিও এর আগে ২০০১ সালে বড় ব্যবধানে বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদের কাছে হারেন তিনি। তখন নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরী প্রায় কাছাকাছি ভোট কেটেছেন। ১৯৯৬ সালেও একই কারণে হারেন মওদুদ। তার সঙ্গে নির্বাচন করে কাছাকাছি ভোট কাটেন জামায়াতের আবু নাছের মো. আব্দুজ জাহির। এসব নির্বাচনে জোট বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোট হিসাব করলে কারোরই পরাজিত হওয়ার কথা নয়।

সে হিসেবে সামনেও এ আসনে আওয়ামী লীগের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে সেই পুরোনো সমীকরণ। একরাম চৌধুরী এখানে নির্বাচন করবেন কি না বা তার ভূমিকা কী হবে! বিএনপিরও জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্টর জামায়াত জোটে থাকবে, নাকি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবে!

নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) ঘুরে জানা যায়, এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনিই এখানে বর্তমান এমপি। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও সদরের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. এ কে এম জাফর উল্যাহও এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন।

এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের স্থলে তার স্ত্রী হাসনা জসিম উদ্দিন মওদুদ এখানে দলটির প্রার্থী। ১৯৮৬ সালে এখান থেকে জয় পান হাসনা জসিম উদ্দিন মওদুদ। এর বাইরেও উপজেলা বিএনপির সদস্য ও ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম এখানে সক্রিয়। এছাড়া গোলাম হায়দার বিএসসি, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, বজলুর রশিদ আবেদের নামও মনোনয়ন চাওয়ার তালিকায় আছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির জন্য দীর্ঘদিন মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপি নির্বাচনে গেলে হাইকমান্ড যদি চিন্তা করে তখন নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি।

ভোটে এগিয়ে বিএনপি

২০০৮ সালে এ আসনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৬২ হাজার ২২৩ জন। এটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৫ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫৬ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৯ জন। নতুন ভোটার ৬৮ হাজার ৯১২। এদের কেউই গত দুই নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। সেটির একটি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হওয়ার আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। পাশাপাশি অর্ধেক নারী ভোটারের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট বিএনপির পক্ষে যাবে বলেও শঙ্কা তাদের। এক্ষেত্রে আগের তুলনায় বেশ এগিয়ে বিএনপি। তার মধ্যে নতুন সুবিধা হিসেবে যুক্ত হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং জেলা আওয়ামী লীগ তথা একরাম চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নোয়াখালী-৫ আসনের বাসিন্দা ও জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, নোয়াখালী-৫ আসনে ভোটের হিসাব মূল্যায়ন করতে হলে ২০০৮ এর নির্বাচনে ভোটের রেশিও দেখতে হবে। কারণ, ২০০৮ এর পর আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হয়নি। তখন এখানে ভোট হয়েছে ‍ব্যারিস্টার মওদুদ ও ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। সেসময় ওবায়দুল কাদের প্রায় ১১ হাজার ভোটে পরাজিত হন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। কবিরহাট উপজেলার ভোট সমন্বয় করে মাত্র ১৩শ ভোটে জয়ী হন শেষে। এর পরের ভোটগুলো হয়েছে একপেশে, যে কারণে সেগুলোকে প্রতিযোগিতামূলক ভোট হিসেবে মূল্যায়নের সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ২০০৮ এর পর কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জে ভোট বাড়ছে প্রায় ৬৯ হাজার। এরা নতুন ভোটার। কিন্তু তারা কি আদৌ স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পেরেছে? বেশিরভাগই পারেনি। সেক্ষেত্রে তাদের যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় তাহলে তাদের ভোটের ওপর জয়-পরাজয়ের একটা পয়েন্ট নির্ধারণ হবে।

একরামের গতিবিধি আওয়ামী লীগের জয়-পরাজয়ে ‘ফ্যাক্ট’

দ্বিতীয়ত, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বর্তমান রাজনৈতিক সম্পর্কে সংকট আছে। একরামের বাড়ি কবিরহাটে, তার স্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি এখানে স্বতন্ত্র হিসেবে জাতীয় নির্বাচন করেছেন ২০০১ সালে। ওবায়দুল কাদের তখন নৌকা নিয়ে ফেল করেন। একরামের বাড়ি এখানে হওয়ার কারণে রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিকভাবে মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে উনি এবং ওনার স্ত্রী কিছুটা ‘অজনপ্রিয়’ হয়েছেন ঠিক। কিন্তু ইউনিয়নগুলোতে একটা ভালো সংখ্যক নেতাকর্মী ও অনুসারী আছে। জাতীয় নির্বাচনে ওনাদের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান যদি না হয় বা একরামুল করিম চৌধুরীকে যদি সদরে না দেয়, তাহলে তার ভূমিকা কী হবে, সেটাও দেখার বিষয়। তিনি এখানে (নোয়াখালী-৫) স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন কি না, করলেও সমস্যা, না করলেও ওনার প্রভাব রাখার সুযোগ আছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের জন্য শঙ্কার বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

এছাড়াও বিগত উপজেলা নির্বাচন ও ইউপিতে কবিরহাটে নিজ দলের নেতারাও ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ আছে। এসব নেতাকর্মীকে মাঠে নামানো এবং বঞ্চিত ভোটারদের আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে রাখা কঠিন। এসব কিছুর দায় বর্তায় বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ওপর। ইউপিতে ওবায়দুল কাদের কবিরহাটে নৌকা মার্কা দিয়েছেন, কোম্পানীগঞ্জে দেননি। এখানেও তার দ্বিচারিতা আছে বলে উল্লেখ করেন এক স্বতন্ত্র প্রার্থী।

দলের সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে

কবিরহাট উপজেলার এক আওয়ামী লীগ নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ১১/১২ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় না। অনেক নেতা মারা গেছেন, অনেকে বিদেশ গেছেন। সীমিত সংখ্যক নেতৃত্ব ঘিরে দল পরিচালিত হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে পক্ষভুক্ত অবস্থান থাকার কারণে বাকি নেতৃত্ব উপজেলা আওয়ামী লীগ তাদের মানে না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ দু-তিনভাগ হয়ে আছে। তৃণমূল সংগঠন নেই বললেই চলে। একেকটা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন কমিটির বয়স হয়েছে ৮/১০ বছর। যুবলীগের কমিটির বয়স নয় বছর। উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটির বয়স ৮ বছর। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত এবং পুত্রসন্তানের জনক। কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকও বিবাহিত। এসব কমিটি সভাপতি-সম্পাদকনির্ভর। বাকি সহযোগী সংগঠন- স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের কবিরহাট শাখা নেই। দল ক্ষমতায় থাকার কারণে থানা ও উপজেলায় ক্ষমতার বলয়কেন্দ্রিক।

তিনি বলেন, কবিরহাটে তিন ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগ। বর্তমান উপজেলা কমিটির একটা বলয় আছে। একরাম চৌধুরীর নিজস্ব একটা বলয় আছে। ডা. জাফর উল্যাহ, আলা বক্স টিটুসহ স্বতন্ত্রদের একটা বলয় আছে। কোম্পানীগঞ্জে এমপির ভাই মির্জা কাদেরের একটি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বলয়। আলাদা দুটি কার্যালয়ে কর্মসূচিও হয় আলাদাভাবে। সেখানে তো বিগত দিনে দুই লাশ পড়েছে- একটা সাংবাদিক মোজাক্কির আরেকটা শ্রমিক লীগ নেতার। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির গায়ে হাত উঠেছে, সাধারণ সম্পাদকের নালা-গিঁরা ভেঙে দিয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানকে পঙ্গু করে ফেলেছে। সেখানে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে, সেখানকার অবস্থান কবিরহাটের চেয়ে আরও তিক্ত।

এলাকার সঙ্গে নেই এমপির সম্পৃক্ততা!

নেতারা বলছেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর উনি (ওবায়দুল কাদের এমপি) গত চার বছরে ৩/৪ বার গেছেন এলাকায়। এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দেখা-সাক্ষাৎ তেমন হয় না। উনি থাকেন ব্যস্ত। অন্য এমপি-মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে নিজে ব্যস্ত থাকলে পিএস, এপিএসরা স্থানীয় বিষয়গুলা দেখেন। ওনার ক্ষেত্রে সে সুযোগও নেই। তার সরকারি পিএসের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ, এপিএসের (রাজনৈতিক) বাড়ি বরিশালে। আরও দুজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আছেন তাদের বাড়ি বান্দরবানের দিকে। এলাকার মানুষদের সেভাবে তারা চেনেনও না, এলাকায়ও আসেন না। উনি (এমপি) নিজ এলাকার কাউকে সঙ্গে রাখেননি।

নানান কারণে প্রশাসনিক শক্তি ও এলাকার আধিপত্যে আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকলেও ভোটে দুর্বল। ভোটারদের কাছে যাওয়ার জন্য পথরুদ্ধ করছেন এমপি নিজেই। জেলার স্থানীয় এক নেতা বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ঘরে ঘরে গ্যাস ও ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ঘরে ঘরে তো দূরে থাক গ্রামে গ্রামেও চাকরি হয়নি। ঘরে ঘরে গ্যাসও হয়নি। আগামী নির্বাচনে তার নতুন এজেন্ডা হলো, ‘খেলা হবে।’ তার মানে কর্মীদের উত্তেজিত করে সংঘাতের দিকে ধাবিত করে আবার বৈতরণী পার হওয়া।

নির্বাচনী এলাকায় ঘুরেও নেতিবাচক চিত্র পাওয়া যায়। এখানকার হতদরিদ্র মানুষ জানেই না এমপি কে? নোমান নামে এক দিনমজুরের সঙ্গে কবিরহাট উপজেলা পরিষদের সামনে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এখানকার এমপি একরামুল হক চৌধুরী, তিনিই জনপ্রিয়।’ তথ্যটি সংশোধন করে দিলে তিনি বলেন যে, হ্যাঁ, হ্যাঁ, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আঙ্গো (আমাদের) এমপি। একরাম সাব শহরের এমপি। কিন্তু ওনার বাড়ি এখানে তো, তাই আমরা মনে করছি উনিই এমপি। আমরা তো মূর্খ মানুষ। সব সময় সব খেয়াল থাকে না।

উপজেলার হাতাইল্যা ব্রিজের কাছে ইতালি মার্কেট। সেখানকার আব্দুল হালিম নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় নির্বাচন নিয়ে। তিনি বলেন, ‘এবারও নৌকা যাইবো। আত বইর বান্ধি অইলেও লই (পা বেঁধে হলেও) যাবো। দেশের যে উন্নতি করতেছে হাসিনা, আর কেউ কইত্তে পাইত্তনো। লই গেলেও লাভ আছে।’

এমপির এলাকাবিমুখতায় ক্ষুব্ধ কৃষক জয়দেব বলেন, এমপি আবার ভোটের সময় আইবো (আসবে)। অন আইয়োনের (এখন আসার) দরকার কী?

একরাম চৌধুরী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একরাম চৌধুরীর বাড়ি সামনে। উনি টাকা ছিটান। তার বাপ ইদ্রিস হাজিও ছিলেন পয়সাওয়ালা, দানবীর। তিনিও পয়সাওয়ালা, দানবীর।

যা বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল বলেন, এমপি সাহেব তো অসুস্থ। এলাকায় আসেন না। আর এলাকায় দ্বিধা-বিভক্তি তো চরমে। স্বভাবত এলাকাগুলোতে দলীয় গ্রুপিং থাকে। কিন্তু এখানে এরই মধ্যে দলীয় কোন্দলে রীতিমতো দুজন খুন হয়েছেন। আমিসহ অন্তত ১৫ জন পঙ্গুত্ববরণ করেছি। এটার কোনো বিচার কেউ পায়নি।

নিজেদের নামে উপজেলা কার্যালয় থাকলেও সেটাতে আপনারা নেই কেন? জবাবে তিনি বলেন, সেটা তো মির্জা (বসুরহাট পৌর মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা) দখল করেছেন। উনি কোনো পদে নেই। কিন্তু উপজেলা কার্যালয় তার দখলে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যেতে পারেন না। এ নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী, ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় সব নেতার দ্বার দ্বারে গেছি। কোনো সুরাহা হয়নি। বিচার পাইনি। সবাই বলেন এটা ওবায়দুল কাদেরের এলাকা। এখন আমরাও আলাদা অফিস করেছি রুপালি চত্বরে। আগের অফিসও পৌরসভার মধ্যেই। দুটোই ২০০ গজের মধ্যে। ।

‘আগে তো আওয়ামী লীগের কর্মীরা ত্যাগ স্বীকার করেছেন। জীবন বাজি রেখে নির্বাচন করেছেন। এখন তো আর সেই অবস্থানে নেই। চার বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমপির সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেনি। পঙ্গুত্ববরণ করেছে। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে। অর্থনৈতিক চরমভাবে বিপর্যস্ত। ৪০/৪৫টা মামলা বহন করছি আমি নিজেও। সেক্ষেত্রে আমরা জীবন বাজি রেখে কেন কাজ করবো? বিরোধীদল আমাদের চেয়ে ভালো আছে। ভোটে এমনিতেই এখানে বিএনপির অবস্থা ভালো। ২০০৮ সালে ১১ হাজার ভোটে হেরেছি আমরা। কবিরহাটের ভোটে রিকভার করেছি।’

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সাংগঠনিক অবস্থা ভালো। নৌকার বিজয়ের জন্য প্রস্তুতি যথেষ্ট। আমরা বিজয়ী হতে পারবো।’

দলের কোন্দল আর হানাহানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নেতা (ওবায়দুল কাদের) দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এগুলো সব সমাধান করে দেবেন। সমাধান হয়ে যাবে।’

মনোনয়নের ব্যাপারে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, যেহেতু আমার বাড়ি কবিরহাট, আমার নিজেরও তো ইচ্ছা জাগে আমার এলাকার লোকদের সেবা করি। আমি মনোনয়ন চাইবো, বাকিটা নির্ভর করবে নমিনেশন বোর্ড এবং নেত্রীর ওপর। নেত্রী যেটা ভালো মনে করেন, সেটাই করবো। নেত্রী যদি মনে করে যে, ভোট করারই প্রয়োজনই নেই। তাহলে ভোট করবো না।

সর্বশেষ - আইন-আদালত