মঙ্গলবার , ২২ নভেম্বর ২০২২ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

পরীমনির জন্য শত পুলিশ, দুর্ধর্ষ জঙ্গির নিরাপত্তায় একজন!

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
নভেম্বর ২২, ২০২২ ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের গেটে রাখা দুটি নিরাপত্তা মেশিন, আর্চওয়ে। এর একটি দুই বছর ধরে নষ্ট। আরেকটি চলে তো চলে না। আদালতের বাইরের গেট বা ভবনের বাইরে কোথাও নেই কোনো সিসি ক্যামেরা। দুজন আসামি আনা-নেওয়ার জন্য একজন কনস্টেবল। এভাবেই চলছে ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই আদালত প্রাঙ্গণ।

আইনজীবীরা বলছেন, পরীমনির মতো সেলিব্রেটি আসামিদের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক পুলিশ থাকলেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আদালতে আনা-নেওয়ার জন্য তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না। ফলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেও আদালত প্রাঙ্গণ থেকেই পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া যায়।

 পরীমনি গ্রেফতার হলে তার সঙ্গে শতাধিক পুলিশ দেয়। যেন গার্ড অব অনারের জন্য! আর যারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, তাদের একজন কনস্টেবল দিয়ে পাঠায়। এটা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দূরদর্শিতার অভাব।

অন্যদিকে পুলিশ বলছে, এমনটি ঘটবে তা নাকি তারা ধারণা করেননি। কেন ঘটেছে তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথা ভাবছেন তারা।

রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। এসময় আসামি আরাফাত ও সবুজকে ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে জঙ্গিরা। পরে ঘটনাস্থল থেকে আরাফাত ও সবুজকে আটক করা হয়।

সেদিন ওই দুই জঙ্গির সহযোগীরা দায়িত্বরত পুলিশের উপর পিপার স্প্রে ছিটিয়ে, কিল-ঘুষি মেরে ছিনিয়ে নেয় দুজনকে। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত কাউকেই এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি কারা ওই ঘটনায় অংশ নিয়েছিল তাদের কারো ছবি প্রকাশ হয়নি। পালিয়ে যাওয়া যে দুজনের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তা তাদের মামলার ফাইলে থাকা ছবি।

আদালত থেকে বের হয়ে তারা একটি লাল রঙের মোটরসাইকেলে রায়সাহেব বাজার মোড়ের দিকে পালিয়ে যায়। সেখানকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে এক মোটরসাইকেলে তিনজনকে চলে যেতে দেখা গেলেও সেখান থেকে তারা কোথায় গেছে বা কোনদিকে গেছে, তা আর জানা যায়নি। অনেকটা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি।

 সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ আদালতে আসে। কেবল দুইটা মেশিন দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নিরাপত্তার জন্য চেকিং করতে গেলে সদরঘাট পর্যন্ত লাইন ধরাতে হবে। বাস্তবতা চিন্তা করে সার্বিক যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা, সেটি করা হবে।

এতে আদালতের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সোমবার (২১ নভেম্বর) সারাদিন আদালতপাড়ায় ঘুরে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আদালতের নিরাপত্তার ভঙ্গুর অবস্থাই জানা গেছে।

সরেজমিনে সিএমএম কোর্টের গেটে গিয়ে দেখা গেছে, যে যার মতো প্রবেশ করছেন আদালত ভবনে। কেউ প্রবেশ করছেন গেটে রাখা আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে কেউ তার বাহির দিয়ে। আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে অনেকে প্রবেশ করলেও মেশিন চলছে না। আবার বাইরে দিয়ে যারা প্রবেশ করছেন, তাদেরও কোনো ধরনের তল্লাশি নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেটে রাখা দুটি আর্চওয়ের একটি প্রায় দুই বছর ধরেই নষ্ট। অপরটি মাঝে মাঝে চালু হলেও ফের বন্ধ হয়ে যায়। তবে সোমবার দিনভর সেটিও চলতে দেখা যায়নি।

আদালতের সামনের যে জায়গাটি থেকে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়া হয় সেখানে বাহিরের গেটের কোথাও কোনো সিসি ক্যামেরা চোখে পড়েনি।

চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের ৮ম তলায় রয়েছে ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল যেখানে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া ওই জঙ্গিদের শুনানি হয়েছিল। আদালতের হাজতখানা থেকে তাদের সকালে শুনানির জন্য আদালতে তোলা হয়। এসময় সিএমএম কোর্টের সামনে দিয়ে মূল সড়ক ধরে দীর্ঘ পথ ঘুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের নেওয়া হয়। অথচ ভবনটির নিচতলার সিএমএম কোর্টের সামনেই ছিল আরেকটি গেট। সেটি ভিআইপিদের জন্য মাঝে মাঝে খোলা হলেও অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখা হয়।

পরীমনির সঙ্গে পুলিশের বহর, ফাইল ছবি

পরীমনির সঙ্গে পুলিশের বহর, ফাইল ছবি

আদালতপাড়ায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরাও। তারা বলছেন, আদালতে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচারকার্যে অংশ নিতে হয় তাদের। অপরাধীরা এর ফলে তাদের জন্যও নিরাপত্তা হুমকি হতে পারে।

এ নিয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান মন্টু জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ যেভাবে দায়িত্ব পালন করে সেটা পরিবর্তন করতে হবে। একজন কনস্টেবল দিয়ে দুজন আসামি পাঠায়। পরীমনি গ্রেফতার হলে তার সঙ্গে শতাধিক পুলিশ দেয়। যেন গার্ড অব অনারের জন্য! আর যারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, তাদের একজন কনস্টেবল দিয়ে পাঠায়। এটা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দূরদর্শিতার অভাব। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমান প্রেক্ষাপটে জঙ্গিদের যে অবস্থা, তা বিবেচনায় আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে।

ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান শেখ (তুহিন) বলেন, জঙ্গিরা আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দণ্ডিত আসামিদের পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে, এটা ভাবাও যায় না। আইনজীবীরাও নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তারা উদ্বিগ্ন। এছাড়া এ ঘটনায় জঙ্গিরা যে এখনো শক্তিশালী, সেটাই জানান দিয়েছে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এই জঙ্গিদের দমনে এখন জোরালো পদক্ষেপ নেবে, এমনটাই চাই।

আদালত ভবনের প্রবেশপথ

চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আনোয়ারুল কবির বাবুল জাগো নিউজকে বলেন, রোববারের ঘটনায় আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। যেসব সিসি ক্যামেরা আছে সেগুলো তদারক করা ও নতুন ক্যামেরা স্থাপন করা উচিত। প্রতিদিনই এমন আসামি আসে। এ ঘটনার আগে নিশ্চয় তারা পরিকল্পনা করেছে। সেক্ষেত্রে আমরা যারা প্রতিনিয়ত আদালতে আসছি, তারাও ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছি। কারণ আমরাও অনেক সময় বিভিন্ন সন্ত্রাসী, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মামলা করি।

সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকা, নষ্ট আর্চওয়েসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আর্চওয়েগুলো আমাদের না। দেখতে হবে এগুলো কাজ করে কি না। সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ আদালতে আসে। কেবল দুইটা মেশিন দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নিরাপত্তার জন্য চেকিং করতে গেলে সদরঘাট পর্যন্ত লাইন ধরাতে হবে। বাস্তবতা চিন্তা করে সার্বিক যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা, সেটি করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের আদালতে আনা-নেওয়ার বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

jagonews24

সিএমএম কোর্ট, ঢাকা

তিনি বলেন, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালত পর্যন্ত দূরত্ব অনেক। অনেকগুলো আদালত রয়েছে। এখানে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো আমরা বিজ্ঞ আদালত ও বারের সঙ্গে কথা বলে, পুলিশ বিভাগ কীভাবে ফলপ্রসূ ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।

ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য আদালতের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে, নতুনভাবে, নতুন আঙ্গিকে নিরাপত্তার পরিকল্পনা করবেন বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ - দেশজুড়ে

আপনার জন্য নির্বাচিত