সোমবার , ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

আবার রাজ্য ভাগের দাবি পশ্চিমবঙ্গে

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
ডিসেম্বর ১২, ২০২২ ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশের জেলাগুলোয় বিজেপিকে বিরাটসংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন। দার্জিলিংকে ধরে মোট সাতটি আসনের মধ্যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সব কটিই পেয়েছিল বিজেপি; বিধানসভায় ৪২টির মধ্যে পেয়েছিল ২৫টি আসন। অনন্ত রায়ের বক্তব্যের পেছনে ছিল ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিজেপির একটি প্রতিশ্রুতি, উত্তরবঙ্গে নতুন রাজ্য করা হবে। অনন্ত রায় বলেন, ‘কিন্তু তা করা হয়নি, এ লক্ষ্যে বিশেষ কাজও হয়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী নির্বাচনে মানুষের বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’

অনন্ত রায়ের বক্তব্য, ‘কোচবিহার অতীতে ব্রিটিশ সরকারের অধীন ছিল না, ছিল রাজার অধীন। ফলে ভারত ভাগ হওয়ার পরে তা ১৯৪৭ সালের ইন্ডিয়া ইনডিপেনডেন্স অ্যাক্ট অনুযায়ী ভারতের অধীন আসতে পারে না। কিন্তু এখন প্রশ্নটা হচ্ছে একটা আলাদা রাজ্যের, কারণ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর মানুষ দীর্ঘ সময়ে বৈষম্যের শিকার। এর জন্যই আমাদের পৃথক রাজ্য বৃহত্তর কোচবিহারের দাবি। সেই দাবি আমরা অতীতে তুলেছি এবং আবার তুলছি।’ তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন দফায় বিজেপির সরকার ও দলের কথা হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘অথচ নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল, আলাদা রাজ্যের বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। সেটা না হওয়ার ফলে মানুষ অত্যন্ত অসন্তুষ্ট।’

অন্যদিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল অনন্ত রায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বা রাজ্য করার কোনো পরিকল্পনা বিজেপির নেই। রাজ্যস্তরে বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই একই কথা একাধিকবার বলেছেন। অনন্ত রায়ের বক্তব্য, এ সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা, দল নয়। বিজেপি দলের প্রতিনিধিদের বক্তব্যের কোনো গুরুত্ব নেই। বিজেপির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি, যদিও উত্তরবঙ্গের জেলা কোচবিহারের পার্লামেন্ট সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক অনন্ত রায়ের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছেন।

বিজেপি রাজ্যস্তরে অবশ্য এমনও অভিযোগ করেছে, উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার বিষয়টি মহারাজা অনন্ত রায়কে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বাজারে ভাসিয়ে রেখেছে। রাজ্য ভাগ হয়ে যাচ্ছে—এমন একটা হাওয়া তৈরি করে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে (যেখানে ৭০ শতাংশ আসন রয়েছে), সেখানে বাঙালি ভোট টানতেই তৃণমূল এ কাজ করছে বলে অভিযোগ বিজেপির। অনন্ত রায়ের সঙ্গে সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোঝাপড়া রয়েছে বলেও অভিযোগ। রায় নিজে অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে তাঁর নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনাই নেই। গ্রেটার কোচবিহারের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ ছাড়াও রয়েছে আসামের পুরোনো গোয়ালপাড়া জেলার অংশবিশেষ। এ ছাড়া রয়েছে বিহারের পূর্ণিয়া জেলা এবং সংলগ্ন অঞ্চল।

এরই পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশের মোট আটটি জেলা নিয়ে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবি। নেতৃত্ব দিচ্ছে কামতাপুর পিপলস পার্টি নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠন। সম্প্রতি তারা উত্তরবঙ্গে ১২ ঘণ্টা রেল অবরোধ করেছে। সংগঠনের নেতা অমিত রায় জানান, বহুবার তাঁরা রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে স্মারকলিপি দিয়েছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছু না হওয়ায় তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছেন। এ আন্দোলনের তীব্রতা বাড়বে বলে জানিয়েছে পিপলস পার্টি।

এসবের পাশাপাশি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান জীবন সিংহ কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে যে আবার নতুন করে নাড়াচাড়া হচ্ছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি উত্তর, দক্ষিণ দিনাজপুর, আসামের গোয়ালপাড়া, ধুবড়ি, বঙ্গাইগাঁও কোকরাঝাড়, বিহারের কিষানগঞ্জ ও নেপালের ঝাপা নিয়ে প্রস্তাবিত কামতাপুর অঞ্চল। ১৯৮৫ সালে তৈরি হওয়া সংগঠনের প্রধান জীবন সিংহ বিবৃতিতে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে পশ্চিমবঙ্গ ভাগ হওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে তিনি আশা করছেন। তবে কোনো সহিংস আন্দোলনের হুমকি সিংহ দেননি। বর্তমানে তিনি ভারত–মিয়ানমার সীমান্তে আত্মগোপন করে রয়েছেন বলে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা মনে করেন।

তবে জীবন সিংয়ের বক্তব্যের কোনো গুরুত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল সরকারের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী উদয়ন গুহ। তিনি বলেছেন, লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, তৎপর বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে গুরুত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সর্বশেষ - দেশজুড়ে