বুধবার , ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

আলোর ঝলকানিতে শুরু, এরপর শুধুই হাহাকার

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
ডিসেম্বর ২৮, ২০২২ ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আর মাত্র কয়েকদিন পরেই বিদায় নেবে ২০২২ সাল। বিদায়ের পথে থাকা বছরটি মোটেও ভালো যায়নি শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের। এ বছর লাভের পরিবর্তে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়েছেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী। এমনকি দিনের পর দিন ধরে লোকসানে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করেও ক্রেতা পাননি অনেকেই। ফলে বছরের সিংহভাগ সময় হাহাকার করে কেটেছে বিনিয়োগকারীদের। ২০১০ সালের মহাধসের পর শেয়ারবাজারে এতো খারাপ বছর আর আসেনি।

নিশ্চিতভাবেই এমন বছর আর দেখতে চাইবেন না বিনিয়োগকারীরা। অবশ্য বিনিয়োগকারীদের নীরব রক্তক্ষরণের এ বছরটি শুরু হয়েছিল আশাজাগানিয়া। বছরের প্রথম কার্যদিবসেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। বছরের প্রথম দিন এমন বড় উত্থানের পর জানুয়ারিজুড়েই ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার। মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বাড়ে লেনদেনের গতি।

 বিনিয়োগকারীদের নীরব রক্তক্ষরণের বছরটি অবশ্য শুরু হয়েছিল আশাজাগানিয়া। বছরের প্রথম কার্যদিবসেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। বছরের প্রথম দিন এমন বড় উত্থানের পর জানুয়ারিজুড়েই ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার।

জানুয়ারি মতো ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেও বেশ ভালো অবস্থানে ছিল শেয়ারবাজার। একদিকে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়তে থাকে, অন্যদিকে বাড়ে লেনদেনের গতি। ফলে স্বতঃস্ফূর্ত বিনিয়োগের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা তুলে নিতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বদলে যায় চিত্র। ভয়াবহ দরপতনের কবলে পড়ে শেয়ারবাজার।

সেই পতনের ধকল থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর শেয়ারবাজারে এত বড় ধাক্কা লাগে যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের সর্বনিম্ন দাম (ফ্লোর প্রাইস) বেঁধে দেওয়া হয়। এতে নতুন করে দাম কমার পথ আটকে যায়। কিন্তু দেখা দেয় লেনদেন খরা। দুই হাজার কোটি টাকায় উঠে যাওয়া লেনদেন কমে তিনশ কোটি টাকার নিচেও নামে।

pic-3.jpg

ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের বড় লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করলেও, এখন সেই ফ্লোর প্রাইসই যেন বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বর্তমানে ফ্লোর প্রাইসে আটক রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা শত চেষ্টা করেও ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে একদিকে তাদের বিনিয়োগ আটকে গেছে, অন্যদিকে বন্ধ হয়েছে নতুন বিনিয়োগের পথ।

২০২২ সাল শেয়ারবাজারের জন্য কেমন? এমন প্রশ্ন করা হলে মো. আব্দুর রাজ্জাক নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, এ বছর মোটেও ভালো যায়নি আমাদের। যখন যে শেয়ার কিনেছি, তাতেই লোকসান হয়েছে। এতো খারাপ বছর আর কখনো দেখিনি। এখন তো লোকসানে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করেও ক্রেতা পাচ্ছি না। আমার কাছে থাকা ১০টি কোম্পানির শেয়ার এবং একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১০টিই ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। এ থেকে কবে মুক্তি পাবো জানি না।

ইব্রাহিম নামের আরেক বিনিয়োগকারীও শুনিয়েছেন হতাশার কথা। তিনি বলেন, বছরের শুরুর দিকে কিছুটা মুনাফা করেছিলাম। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আর লাভের মুখ দেখিনি। বরং আগে যে লাভ হয়েছিল, সেই লাভ তো গেছেই; সঙ্গে মূল বিনিয়োগের পরিমাণও কমে গেছে। সব মিলিয়ে এখন বড় লোকসানে আছি।

তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনেছি, সেগুলোর সবগুলোর দাম কমে গেছে। লোকসানে থাকার পরও এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করতে পারছি না। কারণ এসব শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। প্রতিদিন বিক্রির আদেশ বসায়, কিন্তু বিক্রি হয় না। এভাবেই মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে। অতি প্রয়োজনেও শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে পারছি না। এতে প্রতিনিয়ত নীরবে আমাদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

২০২২ সাল শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের যে মোটেও ভালো যায়নি সে কথা অকপটে স্বীকার করেছেন আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মনিরুজ্জামান। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এ বছর শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা লাভের মুখ দেখেননি। বরং গত বছর যে লাভ হয়েছিল, এ বছর সেটা হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা শেয়ারবাজারে এমন জোয়ার-ভাটার খেলা দেখতে চাই না।

jagonews24

এদিকে, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জানিয়েছেন, ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৮০-৯০ শতাংশ। আমাদের দেশে ঠিক উল্টো। যেখানে ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, সেখানে আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতেই হবে। সে কারণে আমরা ফ্লোর প্রাইস দিয়ে সাময়িক একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয়।

মূল্যসূচক
বছরের প্রথম কার্যদিবস ২ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ৮৫৩ পয়েন্ট। সেখান থেকে তা বেড়ে ১১ জানুয়ারি ৭ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে। এরপর ২০ জানুয়ারি সূচক আরও বেড়ে ৭ হাজার ১০৫ পয়েন্টে উঠে আসে। এটি ২০২২ সালে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। মধ্য ফেব্রুয়ারিতেও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৭ হাজার পয়েন্টের ওপরে ছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আর ৭ হাজার পয়েন্ট ওঠেনি মূল্যসূচক। বর্তমানে (১৫ ডিসেম্বর লেনদেন শেষে) ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ হাজার ২৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

লেনদেন
দরপতনের পাশাপাশি লেনদেন খরার মধ্যেও পড়েছে শেয়ারবাজার। ২০২২ সালের শুরুর দিকে শেয়ারবাজারে নিয়মিত হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হলেও এখন তা পাঁচশ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। শেষ ২০ কার্যদিবসের (২০ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত) মধ্যে মাত্র তিনদিন ডিএসইতে পাঁচশ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে।

বাজার মূলধন
মন্দার মধ্যেই গত ১০ অক্টোবর থেকে দেশের শেয়ারবাজারে প্রথমবারের মতো ২৫০টি ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এসব ট্রেজারি বন্ডের বাজার মূলধন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হতেই বাজার মূলধনে বড় লাফ দেয়। ১০ অক্টোবর ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। বছর শেষ হতে এখনো প্রায় অর্ধমাস বাকি থাকলেও এরইমধ্যে বাজার মূলধন ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে ডিএসই’র বাজার মূলধন ৮ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা কমে গেছে।

 ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের বড় লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করলেও, এখন সেই ফ্লোর প্রাইসই যেন বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বর্তমানে ফ্লোর প্রাইসে আটক রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা শত চেষ্টা করেও ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না।

অপরদিকে, শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হওয়ার আগের দিন ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। আর বছরের প্রথম কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হওয়ার আগে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমে ২৫ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা।

আইপিও খরা
পতনের বাজারে ২০২২ সালজুড়ে ছিল আইপিও খরা। এ বছর ছয়টি প্রতিষ্ঠান আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে। শেয়ারবাজার থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো ৬২৬ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। ২০২১ সালে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করা প্রতিষ্ঠান ছিল ১৪টি। প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে অর্থ উত্তোলন করে এক হাজার ২৩৩ কোটি ২৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ আইপিওতে আসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ৮টি। অর্থ উত্তোলন কমেছে ৬০৬ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

বিও হিসাব কমেছে প্রায় দুই লাখ
বর্তমানে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৬টিতে। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬৯টি এবং নারীদের ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৭টি। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ১৭ লাখ ৮০ হাজার ১০৫টি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৬২ হাজার ৯১৭টি।

 সারা পৃথিবীতে শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৮০-৯০ শতাংশ। আমাদের দেশে ঠিক উল্টো। যেখানে ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, সেখানে আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতেই হবে। সে কারণে আমরা ফ্লোর প্রাইস দিয়ে সাময়িক একটা ব্যবস্থা নিয়েছি।

অপরদিকে, বছরের শুরুতে বিও হিসাব ছিল ২০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৯টি। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের ১৫ লাখ ১১ হাজার ৮২৬ এবং নারীদের ৫ লাখ ৭ হাজার ৩৬১টি। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৮২৬ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৮৬ হাজার ৩৬১টি।

এ হিসাবে বিও হিসাব কমেছে এক লাখ ৯১ হাজার ৪৬৩টি। এর মধ্যে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে এক লাখ ৫২ হাজার ৭২১টি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ২৩ হাজার ৪৪৪টি। কমে যাওয়া বিও হিসাবের মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের এক লাখ ২৩ হাজার ৩৫৭টি। এছাড়া নারী বিনিয়োগকারীদের ৫২ হাজার ৭৫৪টি বিও হিসাব কমেছে।

সর্বশেষ - দেশজুড়ে