সোমবার , ৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

করোনায় ভেঙে গেল শি জিনপিংয়ের বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের স্বপ্ন

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
জানুয়ারি ৯, ২০২৩ ৩:২৪ অপরাহ্ণ

চীনে করোনার উৎপত্তি, সেটির সংক্রমণ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি তৈরির যে চেষ্টা চীন সরকার করেছে- আমাদের বর্তমান সময়ে এটি অন্যতম বড় একটি ঘটনা। তবে গণমাধ্যম এবং মানুষের মুখ চেপে ধরে যে সফল হওয়া যায় না তা প্রমাণ হয়েছে তাদের করোনা ব্যর্থতার মাধ্যমে৷ এ ব্যর্থতায় বৈশ্বিক প্রভাব বৃদ্ধির যে স্বপ্ন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেখেছিলেন সেটিও ব্যর্থ হয়েছে৷

করোনা মহামারির পর পুরো বিশ্ব যখন নিজেদের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সমান তালে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তখন কঠোর লকডাউন দিয়ে চীনা সরকারের উদ্দেশ্যই বা কী ছিল?

চীনের প্রতিটি আঞ্চলিক সরকার করোনা মোকাবিলা করার চেষ্টা  করছে তবে জনসংখ্যায় ইংল্যান্ডের সমান দক্ষিণ জিনজিয়াং প্রদেশের সাংহাই শহরে গড়ে প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। সিচুহান প্রদেশও এমন সংক্রমণ হতে পারে বলা আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং গত ২০ দিনে প্রায় ২০ কোটি ৮০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন৷

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন গত তিন বছরে করোনা ব্যবস্থাপনাকে আরো উন্নত করতে চীনা সরকারের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটির কারণে সরকারের সঙ্গে সাধারণ জনগণের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।

একদিকে হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে অন্যদিকে অভিজাত শ্রেণির মানুষ পশ্চিমা এম আর এন ভ্যক্সিন নিতে চীনের ম্যাকাও শহরের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন; যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে৷

অভিজাত শ্রেণির ওপর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং৷ সম্প্রতি শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টির এক অনুষ্ঠানে অভিজাতদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই পার্টির আইন মানতে বাধ্য। পার্টির বেধে দেওয়া আইনের বাহিরে আমরা কখনোই যেতে পারিনা।’

এছাড়া এ অনুষ্ঠানে দাবি করা হয় সরকার করোনা প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে সেগুলো সঠিক ছিল৷ এ ব্যাপারে অনুষ্ঠানের ব্রিফিংয়ে বলা হয় যে- কঠোর জিরো কোভিড নীতি ফলপ্রসূ ছিলো এবং এই আইন বাস্তবায়নের মাধ্যনে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি  ব্যর্থ পশ্চিমা বিশ্বের ওপর নিজেদের দেখাতে সক্ষমতা দেখাতে সমর্শ হয়েছে। তবে এই আইন এখন শিথিল করা যেতে পারে কারণ ওমিক্রন এখন একটি সাধারণ ফ্লুতে রূপান্তরিত হয়েছে।

তবে এখন যে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চীনা সরকার এমন বক্তব্য দিচ্ছে এটি স্পষ্টই গোজামিল৷ এমনকি সরকারও জানে এটি গোজামিল।

সংক্রমণ বাড়ার মধ্যেই সবকিছু খুলে দিচ্ছে সরকার৷ এমনকি তুলে দেওয়া হয়েছে সীমান্তের বিধিনিষেধও৷ আর এমন সময়ে সীমান্ত খুলে দেওয়া এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়ার কারণে অবস্থা আরো প্রতিকূল হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি বেইজিং থেকে ইতালির মিলানে যাওয়া একটি ফ্লাইটের ১২০ যাত্রীর ৬০ জনই করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন; যা সংক্রমণের শুরুর দিকের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে৷

এছাড়া যথাসময়ে সকল শ্রেণির মানুষদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনতেও চীন সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৮০ বা তার বেশি বয়সি মানুষ এখনো কোনো ভ্যাকসিন পাননি। ষাটোর্ধ্ব মানুষদের মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন। তাদের কেউই বুস্টার ডোজ পাননি এবং পশ্চিমাদের তৈরি কোন ভ্যাকসিনও পাননি৷

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রোফ বেন কোলিং লানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলেছেন, ‘চীন যদি বলত আমরা সকল নাগরিকদের ভ্যাকসিন প্রদানের লক্ষ্যে এবং কিভাবে তারা আরো বেশি সুরক্ষিত থাকতে পারে তা নিশ্চিত করতে জিরো কোভিড আইন জারি করতে যাচ্ছি তাহলে তাদের আজ এত সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না

কিন্তু শি জিংপিং সরকার তা করেনি। যেখানে প্রত্যেক আক্রান্ত ব্যাক্তিকে বিশেষ নজরদারিতে রেখে পরিচর্যা করার কথা ছিলো সেখানে নূন্যতম যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের মধ্যে এই ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে ভ্যাকসিন গ্রহণ কোন জরুরি বিষয় নয়।

এছাড়া তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাও অপ্রতুল৷ চীনে প্রতি এক লাখ মানুষের বিপরীত মাত্র ৩টি টি নিবিড় পরিচর্যা বেড (আইসিউ) রয়েছে। যেখানে আমেরিকার আছে ৩৪ টি এবং জার্মানির রয়েছে ২৯ টি। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় চীনে চার ভাগের এক ভাগ নার্স রয়েছে।

শির সরকার বিগত বছরগুলোতে পরীক্ষা, আইসোলেশন ক্যাম্প নির্মাণ এবং কোয়ারেন্টাইন সুযোগ সুবিধা তৈরির লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে, যার কোনো প্রয়োজনই ছিল না৷

বিখ্যাত চিকিৎসক এয়ারফিনিটির মতে, যে  ২০ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেটির উপর ভিত্তি করে ধারণা করা হয়েছিল, মাসে ১৩ লাখ থেকে ২১ লাখ মানুষ মারা যাবেন৷

চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ফেং জিঝানের মতে, চীনে বর্তমান আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটিরও বেশি যা চীনের জনসংখ্যার প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ৷

এদিকে  বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট  শি জিনপিং এবং চীনের অবস্থা বিশ্বের কাছে আরও স্পষ্ট হবে৷

এছাড়া চীনের কথিত অর্থনৈকি বিপ্লবের বিষয়েও বলেছেন তারা৷ তাদের মতে, পৃথিবীর কেউই এখন আর চীনের উন্নয়নের রূপকথার গল্পে বিশ্বাস করে না। তৃতীয় পক্ষের দেশগুলো এখন আর মনে করে না যে এই শতকের মাঝামাঝি  চীন অর্থনৈতিক ও পুরো বিশ্বে নিয়ন্ত্রক হিসেবে আমেরিকার  স্থলাভিষিক্ত হতে পারবে।

এ মুহূর্তে সৌদি আরব হয়তো তাদের ভূরাজনৈতিক কূটনৈতির মাধ্যমে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে। তবে অন্যান্য দেশগুলো নিজেদের বিরত রাখছে।

বলা হচ্ছে করেনার কারণে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়েছে৷ তবে চীনের অর্থনৈতিক এ অবস্থা শি জিংপিং ক্ষমতায় আসার আগেই শুরু হয়েছিল৷

ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নীতিনির্ধারকরা ২০০৮ সালে বৈশ্বিক মহামন্দার বিষয়টি থেকে শিক্ষা নিতে পারেনি৷

শি ক্ষমতায় আসার পর  অর্থনৈতিক উৎপাদনশীল অংশকে দমন করে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিশ্চিত করেছেন শুধুমাত্র।
 

সর্বশেষ - দেশজুড়ে