মঙ্গলবার , ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৬ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
  1. Best Reviewed Dating Sites
  2. Crypto News
  3. dating and marrige
  4. Dating Game Rules
  5. অর্থনীতি
  6. আইন-আদালত
  7. আন্তর্জাতিক
  8. উপ-সম্পাদকীয়
  9. কৃষি ও প্রকৃতি
  10. ক্যাম্পাস
  11. খেলাধুলা
  12. চাকরি
  13. জাতীয়
  14. জীবনযাপন
  15. তথ্যপ্রযুক্তি

দুর্ঘটনায় রিকশাচালক নিহতের পর আলোচনায় জাবির অ্যাম্বুলেন্সে মদ পরিবহনের ঘটনা

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩ ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বংশাল থানা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে রাজধানীর বংশাল থানা রোডের ঢাকা ব্যাংকের সামনে থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে মদ বহনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। পরে প্রশাসনের অনুরোধে আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আটক ব্যক্তিদের তাদের কাছে দেওয়া হয়েছে।

অ্যাম্বুলেন্স জরুরি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়, আমরা অনেক সময় প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স পাই না। বলা হয়, অ্যাম্বুলেন্সের সংকট আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্যায় কাজে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের বিষয়ে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দূর করতে হবে।

আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী উৎসব উপলক্ষে বংশাল এলাকা থেকে মদ কেনার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রোগী আনার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে মাদক কেনা শেষে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন আটক শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটিতে চালকসহ চারজন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, অপরজন তাঁদের পূর্বপরিচিত। আটকের বিষয়টি জানতে পেরে অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও অ্যাম্বুলেন্সটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে আসা হয়। কারণ চালক বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। বাকি তিনজনের বিষয়টি তাঁরা জানেন না।

সাভার হাইওয়ে থানার পুলিশ জানায়, গত ২৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাতে সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে একটি অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি অ্যাম্বুলেন্স। এ সময় রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার চালক আবদুল কুদ্দুস (৩০) মারা যান। খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে হাইওয়ে থানায় আনা হয়। পরে সড়কের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অ্যাম্বুলেন্সটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বলে জানতে পারে পুলিশ। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্সটি (ঢাকা মেট্রো ছ ৭১-৪৫৪৫) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ডিপোতে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মওলানা ভাসানী হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ২৭ জানুয়ারি ওই হলের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনীর অনুষ্ঠান ছিল। ওই অনুষ্ঠানের জন্য রাজধানী থেকে মদ আনার জন্য অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার করা হচ্ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক রিফাত চৌধুরী ও উপ–অর্থ সম্পাদক আহসান হাবিব ইমন অ্যাম্বুলেন্সটিতে ছিলেন। এ ব্যাপারে রিফাত চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। আহসান হাবিবের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সাভার হাইওয়ে থানার ওসি আজিজুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর তদন্তের মাধ্যমে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্সটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তাঁরা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ওসি বলেন, ঘটনার ওই রাতেই উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল মাহমুদ বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় অন্য কেউ আহত হয়েছেন, এমন তথ্য তাঁরা এখনো পাননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা শামসুর রহমান বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সের চালক আমাকে জানিয়েছে, রোগী মিডফোর্ডে আছে, এমন কথা বলে অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে চালককে উত্তরার দিকে যেতে বলা হয়। এটা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের চালক প্রতিবাদ জানায়। শেষমেশ শিক্ষার্থীদের কথায় তাঁদের গন্তব্য অনুযায়ী অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছে চালক।’

শামসুর রহমান বলেন, ফেরার পথে চালক চিন্তিত ছিলেন, কারণ অ্যম্বুলেন্সে রোগী ছিল না। এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, অ্যাম্বুলেন্স থেকে শিক্ষার্থীরা পালিয়েছেন। পরে চালক দ্রুত গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে চলে এলে ওই শিক্ষার্থীরা গাড়ির ভেতর থেকে তাঁদের ব্যাগ নিয়ে যান। তবে ব্যাগে কী ছিল, সেটি এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সাভারের ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার জন্য দায়ী অ্যাম্বুলেন্সটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। পুলিশকে এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং পুলিশ তদন্ত করছে। ওই তদন্তে যদি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে মদ থাকার বিষয় উঠে আসে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বংশালের ঘটনায় প্রক্টর বলেন, অ্যাম্বুলেন্স ও অ্যাম্বুলেন্সের চালককে ফিরিয়ে আনার জন্য থানায় যোগাযোগ করেছেন। কারণ, অ্যাম্বুলেন্সের চালক অনেক সময় জানেনও না, অ্যাম্বুলেন্সে কী আছে। তাঁদের যেভাবে যা করতে বলা হয়, তাঁরা তা–ই করেন। আর ওই অ্যাম্বুলেন্সে দুজন বহিরাগত ছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে কিছু জানেন না।

অ্যাম্বুলেন্সে মদ পরিবহনের বিষয়ে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আগেও শুনেছি। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে মদ পরিবহনের ঘটনা বেশি শোনা যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স জরুরি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়, আমরা অনেক সময় প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স পাই না। বলা হয়, অ্যাম্বুলেন্সের সংকট আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্যায় কাজে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের বিষয়ে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দূর করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত, এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।’

সর্বশেষ - সারাদেশ