আজ সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। এ সময় তিনি দাবি করেন, চক্রটি জাল লাইসেন্স তৈরি করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে এসব অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করত।
র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই চক্রের প্রধান হলেন মো. পলাশ শেখ (৩৮)। নড়াইলের কালিয়া থানায় তাঁর বাড়ি। তিনি এখন পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ জনের কাছে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করে তাঁদের বিভিন্ন বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার আরও পাঁচজন মধ্যে রয়েছেন নওগাঁ সদরের মনোয়ার হোসেন (৩২), দিনাজপুর সদরের রশিদুল ইসলাম (৪০), নড়াইলের কালিয়া থানার নাজীম মোল্লা (৩৫), সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মারুফ হোসেন (২৪) ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নাইমুল ইসলাম (২২)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
অভিযানের সময় একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ওয়ান শুটার গান, সাতটি একনলা বন্দুক, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, পিস্তলের আটটি গুলি, ওয়ান শুটারের দুটি গুলি, একনলা বন্দুকের ৬৭টি গুলি, ০.২২ বোর রাইফেলের ৪০টি গুলি, ১১টি জাল লাইসেন্স, ১৯টি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নামীয় সিল ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করেছে বলেও জানিয়েছে র্যাব।
র্যাবের দেওয়া তথ্যমতে, চক্রের মূলহোতা এসএসসি পাস পলাশ ২০১৩ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় আসেন। এরপর তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভুয়া লাইসেন্স করা একটি বন্দুক কিনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে বেশি বেতনে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি শুরু করেন। পরে তিনি নিজেই অবৈধ পথে অস্ত্র এনে বিক্রি শুরু করেন এবং চার থেকে পাঁচজনের একটি দল গড়ে তোলেন। তাঁর নেতৃত্বে চক্রটি সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তার নামে সিল তৈরি করে জাল লাইসেন্স বানিয়ে অবৈধ অস্ত্র বিক্রয় করতে থাকেন।
গ্রেপ্তার মো. মনোয়ার ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি শুরু করেন। চাকরির সুবাদে পলাশের সঙ্গে সর্ম্পক গড়ে ওঠে অষ্টম শ্রেণি পাস মনোয়ারের। পলাশের সহযোগিতায় দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি একটি ভুয়া লাইসেন্স করা একনলা বন্দুক সংগ্রহ করেন এবং বেশি বেতনে একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পরে পলাশের সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচা শুরু করেন তিনি। পলাশের নির্দেশনায় মনোয়ার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করতেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তা বিক্রি করতেন।
স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়াশোনা করে ২০১৯ সালে রশিদুল চাকরির জন্য ঢাকায় আসেন। চাকরির সুবাদে পলাশের সঙ্গে তাঁর সর্ম্পক গড়ে ওঠে। দুই লাখ টাকার বিনিময়ে রশিদুল অবৈধ অস্ত্র কিনে বেশি বেতনে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নেন।
এইচএসসি পাস নাইমুল ২০২০ সালে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসেন। পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে পলাশের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পলাশের লোভনীয় বেতনের প্রস্তাবে আকৃষ্ট হয়ে তিনি দেড় লাখ টাকা দিয়ে একটি অবৈধ অস্ত্র কিনে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেশি বেতনে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নেন।
নাজিম মোল্লা ২০২২ সালে আর ২০২৩ সালে মারুফ চাকরির জন্য ঢাকায় আসেন। পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে পলাশের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়। নাজিম আড়াই লাখ টাকা ও মারুফ দুই লাখ টাকা দিয়ে অবৈধ অস্ত্র কিনে বেশি বেতনে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নেন।