শনিবার , ২৫ মার্চ ২০২৩ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

রাশিয়া যুদ্ধবিরোধী ছবি আঁকায় মেয়ে বিচ্ছিন্ন, বাবা গৃহবন্দি

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
মার্চ ২৫, ২০২৩ ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার আনুষ্ঠানিক ও সরকারি দেশপ্রেমের ছবি এটি। তবে মস্কো থেকে ২০০ মাইল দক্ষিণের এই শহরে আপনি ইউক্রেন যুদ্ধের আরও একটি চিত্র খুঁজে পাবেন। আর সেটি একেবারেই ভিন্ন।

শহরের কাউন্সিলর ওলগা পোডলস্কায়া তার মোবাইল ফোনে বিবিসির রাশিয়া সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গকে একটি ছবি দেখান। এটি একটি শিশুর আঁকা ছবি। বাম দিকে একটি ইউক্রেনীয় পতাকা, যেখানে লেখা রয়েছে ‘ইউক্রেনের গৌরব’, ডানদিকে রয়েছে রাশিয়ার জাতীয় পতাকা, তাতে লেখা ‘যুদ্ধকে না বলছি’। ছবিতে দেখা যায়, রাশিয়ার দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে যাওয়ার পথে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একজন মা এবং তার সন্তান।

ছবিটি ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে এঁকেছিল মাশা মসকালেভা। তার বয়স তখন ১২ বছর। তার বাবা অ্যালেক্সি মাশার একমাত্র অভিভাবক। তিনি পরামর্শের জন্য শহরের কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। অ্যালেক্সি কাউন্সিলরকে জানিয়েছেন, মাশার আঁকা ছবি দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দিয়েছিল।

কাউন্সিলর ওলগা জানান, পুলিশ অ্যালেক্সির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ে তদন্ত শুরু করে এবং জানায়, তিনি খুব ‘খারাপভাবে’ মেয়েকে বড় করছেন।

এরপর অ্যালেক্সির বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধবিরোধী পোস্ট দেওয়ার জন্য এবং রুশ সশস্ত্র বাহিনীর অবমাননার জন্য অ্যালেক্সিকে ৩২ হাজার রুবল (প্রায় ৪১৫ মার্কিন ডলার) জরিমানা করা হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে। এজন্য অ্যালেক্সির কারাদণ্ডও হতে পারে।

অ্যালেক্সি এখন ইয়েফ্রেমভে গৃহবন্দি আর তার মেয়ে মাশাকে পাঠানো হয়েছে একটি শিশুকেন্দ্রে। তার সঙ্গে বাবাকে একবারের জন্যে টেলিফোনেও কথা বলতে দেওয়া হয়নি।

ওলগা জানান, গত ১ মার্চের পর থেকে মাশাকে আর কেউ দেখেনি। সে কেমন আছে জানার চেষ্টা করেও আমরা শিশুকেন্দ্রটিতে ঢুকতে পারিনি।

ইয়েফ্রেমভের একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন অ্যালেক্সি। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ করার অনুমতি নেই। শর্ত অনুযায়ী, অ্যালেক্সি শুধু তার আইনজীবী, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কারা বিভাগের লোকদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

অ্যালেক্সির আইনজীবী ভ্লাদিমির বিলিয়ানকো জানান, মেয়ে সঙ্গে নেই, এটি তাকে বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। ফ্ল্যাটের সবকিছুই তাকে মেয়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তার সঙ্গে কী ঘটতে পারে তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।

কর্তৃপক্ষ মাশাকে কেন তুলে নিয়ে গেছে প্রশ্নের উত্তরে বিলিয়ানকো বলেন, বাবার প্রতি তাদের যদি সত্যিকারের প্রশ্ন থাকতো, তাহলে উচিত ছিল তার কাছ থেকে বিবৃতি নেওয়া। মাশার কাছ থেকেও বিবৃতি নেওয়া বা তার সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল। কিন্তু এর কিছুই করা হয়নি। তারা শুধু মেয়েটিকে শিশুকেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার মতে, অ্যালেক্সির বিরুদ্ধে যে ধরনের প্রশাসনিক ও ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে, তা না হলে এমনটি ঘটত না। সমাজসেবা বিভাগ এই পরিবারটিকে নিয়ে মোহগ্রস্ত বলেই আমার মনে হয়। আমি মনে করি, এসব ঘটছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে। মেয়েটির ওই ছবি আঁকার পর থেকেই পরিবারটির ঝামেলা শুরু হয়।

অ্যাঞ্জেলিনা ইভানোভনা নামে অ্যালেক্সির এক প্রতিবেশী বলেন, মাশা খুবই ভালো মেয়ে এবং তার বাবার সঙ্গেও আমার কোনোদিন সমস্যা হয়নি।

অল্পবয়সী আরেক নারী বলেন, সম্ভবত আমরা অ্যালেক্সির সমর্থনে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পারি। কিন্তু কী ঘটছে তা নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তর দেন, দুঃখিত, সেটি আমি বলতে পারবো না।

মুখ খোলার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে তিনি কি ভীত? ওই নারীর জবাব, হ্যাঁ, অবশ্যই!

অ্যালেক্সি মসকালেভের অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক থেকে হাঁটাপথের দূরত্বে মাশার স্কুলটি। তার বাবা বলছেন, মাশার যুদ্ধবিরোধী ছবি দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষই পুলিশকে ফোন করেছিল। এ নিয়ে মন্তব্যের জন্য বিবিসির লিখিত অনুরোধে সাড়া দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সংবাদদাতারা স্কুলে ঢোকার চেষ্টা করলেও তাদের বলা হয়, ঢোকার অনুমতি নেই। এমনকি টেলিফোনেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

তবে স্কুলের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, শহরের কেন্দ্রস্থলে দেশপ্রেমের প্রতীক যে দেওয়ালটি, এই ওয়েবসাইট তার কথাই মনে করিয়ে দেয়। স্কুলের হোমপেজে ‘হিরোস অব দ্য স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন’ ইউক্রেনে যুদ্ধ করা রুশ সৈন্যদের দুই ডজন ছবি রয়েছে। কিছু দেশাত্মবোধক স্লোগানও রয়েছে, ‘বিজয়ের লক্ষ্যে সব কিছু বিসর্জন দিতে হবে! আসুন, যুদ্ধের ময়দানে আমরা আমাদের সৈন্যদের সমর্থন করি!’

অভিভাবক হিসেবে অ্যালেক্সির অধিকার সীমিত করার জন্য ইয়েফ্রেমভ জুভেনাইল অ্যাফেয়ার্স কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

আইনজীবী ভ্লাদিমির বিলিয়েনকো জানান, প্রাথমিক শুনানিতে অ্যালেক্সি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গৃহবন্দি থাকায় তাকে আদালতে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদিও এখানে শুনানির মূল বিষয় হচ্ছে, বাবা হিসেবে তার সন্তানের সঙ্গে দেখা করার অধিকার।

অ্যালেক্সি মসকালেভ এবং তার মেয়ে মাশার বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য বিবিসির অনুরোধে সাড়া দেয়নি জুভেনাইল অ্যাফেয়ার্স কমিশনও।

অ্যালেক্সির একজন সমর্থক নাতালিয়া ফিলাটোভা বিশ্বাস করেন, মসকালেভ পরিবারের এই ঘটনা রাশিয়াজুড়ে ভিন্নমতের ওপর সরকারি দমনপীড়নের প্রতিফলন মাত্র। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান বাকস্বাধীনতা, বিবেকের স্বাধীনতা, নাগরিকদের মতামত প্রকাশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেয়। কিন্তু এসব কাজ করা থেকে এখন আমাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - দেশজুড়ে