সোমবার , ২২ মে ২০২৩ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উপ-সম্পাদকীয়
  5. কৃষি ও প্রকৃতি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জীবনযাপন
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশগ্রাম
  13. দেশজুড়ে
  14. ধর্ম
  15. নারী ও শিশু

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাখমুতের গুরুত্ব কী

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
মে ২২, ২০২৩ ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়া দাবি করেছে, তারা পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত শহর পুরোপুরি দখলে নিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেন বলছে, তারা এখনো শহরটির কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

বাখমুতে একসময় প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে সংগঠিত সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের সাক্ষী বাখমুত। শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় আট মাস ধরে তুমুল লড়াই চলছে।

গত শনিবার শহরটিকে ‘মুক্ত’ করার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর সেনাদলের পাশাপাশি দেশটির ভাড়াটে বাহিনী ভাগনার গ্রুপকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বাখমুত যুদ্ধে যেভাবে এগিয়েছে ভাগনার বাহিনী

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার কাছে ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের নেতৃত্বাধীন ভাগনার গ্রুপের গুরুত্ব বেড়েছে

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যদিও রুশ সেনারা বাখমুতে আছেন, কিন্তু শহরটি পুরোপুরি ‘দখল’ হয়ে যায়নি।

ইউক্রেনের স্থলবাহিনীর কমান্ডার কর্নেল জেনারেল আলেক্সান্ডার সিরস্কি গতকাল রোববার বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারা কৌশলগতভাবে ঘেরাও করে শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন।

ইউক্রেনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার বলেছেন, তাঁর দেশের সেনারা পার্শ্ববর্তী উপশহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তাঁরা বাখমুত শহরটিকে আধা-বেষ্টিত করে ফেলেছেন।

লবণখনির জন্য পরিচিত বাখমুত। একসময়ের শান্ত শহরটি কেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, তা এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

বাখমুত নিয়ে ‘কৌশলী’ জবাব জেলেনস্কির, পরে দিতে হলো ব্যাখ্যা

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি এখন জাপান সফর করছেন

সীমিত কৌশলগত গুরুত্ব

ইউক্রেনের ভেতরে রুশ বাহিনীর আরও অগ্রসর হওয়া এবং পুতিনের দনবাস স্বাধীন করার লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাশিয়ার বাখমুত দখল করা দরকার।

যুদ্ধে উভয় পক্ষ শহরটিকে ব্যাপকভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাখমুতের কৌশলগত গুরুত্ব ততটা নয়।

বাখমুত আসলে প্রতীকী কারণে উভয় পক্ষের কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। শহরটির দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মাসের পর মাস তুমুল লড়াই চলে এসেছে। টানা লড়াই ও লড়াইয়ের তীব্রতা শহরটির নিয়ন্ত্রণের প্রতীকী গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইউক্রেনের দিক থেকে এই শহর রক্ষা প্রশ্নে একটা জেদ কাজ করছে। একই সঙ্গে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাদের দৃঢ় প্রতিরোধ যুদ্ধের উদাহরণও এই শহর।

অন্যদিকে চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার এখন একটা জয় দরকার। রুশ বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধির জন্য বাখমুতে জয় চায় রাশিয়া।

ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরুর প্রথম মাসগুলোয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাথমিক অগ্রগতি অর্জন করেছিল রাশিয়া। পরে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ইউক্রেন পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে তাদের বেশ কিছু ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করে। অনেক জায়গায় রুশ বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।

বাখমুত দখলের দাবি ভাগনারপ্রধানের, অভিনন্দন পুতিনের

ভাগনারপ্রধান গতকাল শনিবার এক ভিডিও পোস্টে বাখমুত দখলের দাবি করেন

রুশ বাহিনীর এমন বিপর্যয়ের মুখে গত বছরের শেষ দিকে বাখমুত দখলের লড়াইয়ে নামে ভাগনার গ্রুপ। তার পর থেকে বাখমুতে রুশ আক্রমণের সমর্থক হয়ে ওঠে গ্রুপটি।

বাখমুত যুদ্ধে ভাগনারকে যথেষ্ট গোলাবারুদ সরবরাহ না করার জন্য গ্রুপটির প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন আগে প্রকাশ্যে রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছিলেন।

বাখমুতে রাশিয়া জয়ী হলে তাকে ইয়েভজেনি প্রিগোশিনের সাফল্য হিসেবে দেখা যেতে পারে। এই সাফল্য ক্রেমলিনে তাঁর অবস্থানকে আরও জোরালো করতে পারে।

বাখমুতে রাশিয়ার ২০ হাজার সেনা নিহত: হোয়াইট হাউস

বাখমুতের কাছে সংঘর্ষের সময় হাউইটজার থেকে গোলা ছুড়ছেন ইউক্রেনের সৈন্যরা

ইউক্রেনের জন্য বাখমুত পতনের অর্থ কী

জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিতে জাপানের হিরোশিমায় অবস্থানকালে গতকাল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, বাখমুত শহরটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

মাসের পর মাস ধরে তুমুল লড়াইয়ের পর শহরটির পতন হলে তা ইউক্রেনের মনোবলে আঘাত হানতে পারে।

রাশিয়াকে হুমকি দিলেন ক্ষুব্ধ ভাগনারপ্রধান

বাখমুতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভাগনার গ্রুপ। ভাড়াটে এই সেনা দলের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন

বাখমুতের লড়াইয়ে উভয় পক্ষের কতজন সেনা এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন, তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে মস্কো ও কিয়েভ উভয় পক্ষ পরস্পরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার দাবি করেছে।

এমন একটি সময় বাখমুত রাশিয়ার দখলে যাওয়ার বিষয়ে দাবি উঠল, যখন ইউক্রেন বড় ধরনের পাল্টা আক্রমণ শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বিষয় ইউক্রেনের মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াতে পারে।

গত মার্চে জেলেনস্কি বলেছিলেন, যদি বাখমুতের পতন হয়, তাহলে একটি চুক্তির বিষয়ে রাশিয়া আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন করতে পারে। এটি ইউক্রেনকে অগ্রহণযোগ্য আপসে বাধ্য করতে পারে।

অস্ত্র পাচ্ছে ভাগনার, জ্বলছে বাখমুত

বাখমুতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভাগনার গ্রুপ। ভাড়াটে এই সেনা দলের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন

রাশিয়ার জন্য বাখমুত দখলের অর্থ কী

শহরটির দখল রুশ বাহিনীর মনোবল বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শহরটি দখল করতে পারলে তা হবে ১০ মাসের বেশি সময়ের মধ্যে রুশ বাহিনীর প্রথম বড় কোনো জয়।

বাখমুত ঘিরে ফেলা হয়েছে, দাবি ভাগনার প্রধানের

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বাখমুত শহরে চলছে রুশ হামলা

২০২২ সালের শেষার্ধ থেকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যেসব খবরাখবর আসছে, তাতে দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে ইউক্রেন অগ্রগতি অর্জন করেছে। অন্য এলাকায় একটি অচলাবস্থা চলছে। ইউক্রেনের শহরগুলোয় দফায় দফায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে রাশিয়া। কিন্তু সম্প্রতি কোনো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূখণ্ড অর্জনের দাবি তারা করতে পারেনি।

বাখমুত দখলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট পুতিন এক বিবৃতিতে ভাগনার ও রাশিয়ার নিয়মিত বাহিনী উভয়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁর এই অভিনন্দন ইঙ্গিত দেয়, দনবাস অঞ্চল দখলচেষ্টার ক্ষেত্রে বাখমুতের এই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির লড়াইয়ের অধ্যায়ের ইতি টানতে তিনি মরিয়া।

কৌশলগতভাবে বাখমুত দখল রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনের পশ্চিম দিকে, সম্ভবত ক্রামাটরস্ক শহরের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ খুলে দিতে পারে। তবে ইউক্রেন ইতিমধ্যে বাখমুত শহরের আশপাশের এলাকাগুলোকে ব্যাপকভাবে সুরক্ষিত করেছে।

সর্বশেষ - দেশজুড়ে