বুধবার থেকে বাড়ছিল বৃষ্টির প্রবণতা। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ছিল মূলত ওই বৃষ্টির আনাগোনা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা দেশের গোটা দক্ষিণাঞ্চল বা উপকূলীয় জেলাগুলোয় বিস্তার লাভ করে।
ছিটেফোঁটা পেয়েছে মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা। ফলে দাবদাহ কিছুটা কমে যায়। আগের দিনের তুলনায় ব্যারোমিটারের পারদ ৪ ডিগ্রির বেশি নেমে যায়। ফলে গরমের প্রকোপও কমেছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) বলছে, প্রকৃতিতে এই পরিবর্তনের নেপথ্যে মূল ভূমিকা রাখছে মৌসুমি বায়ু। আগের দিনের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও রাজধানীর আকাশ সকাল থেকে মেঘলা ছিল। যদিও দুপুরের আগে রোদ উঠে এবং গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা ছিল।
পুরান ঢাকা, পল্টন, মৎস্য ভবন, আগারগাঁও এলাকাসহ অন্যান্য এলাকায় দুপুরের পর বৃষ্টি হয়। বিএমডি জানায়, এর পরিমাণ ছিল ২ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান খান বলেন, শুক্রবার এই বৃষ্টির পরিমাণ খানিকটা বাড়তে পারে। ১১ জুনের দিকে টেকনাফ উপকূলে বর্ষা মৌসুমের বায়ু পৌঁছানোর পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু তিন দিন আগেই বৃহস্পতিবার তা কক্সবাজার উপকূলে পৌঁছে গেছে।
আর ২৮ মে থেকে দাবদাহের নেপথ্যের পশ্চিমা লঘুচাপ সরে গেছে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর বঙ্গোপসাগরের দিকে। ৩-৪ দিনের মধ্যে মৌসুমি বায়ু প্রায় সারা দেশে বিস্তারলাভ করতে পারে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়; ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
একই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হলেও জনজীবনে অস্বস্তি তেমন একটা কাটেনি। এর মূল দায় বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্পের আধিক্য। সাধারণত তাপমাত্রা বেশি থাকলে জলীয়বাষ্পের কারণে শরীরের ঘাম বাতাস শুষে নিতে পারে। তখন শরীরেই ঘাম লেপ্টে যায়। তখন অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়।
এছাড়া আকাশে মেঘ থাকলে সূর্যের কারণে ভূপৃষ্ঠ যে উত্তপ্ত হয়, সেই তাপের বিকিরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মেঘের নিচে বা ভূপৃষ্ঠের দিকেই তাপ রয়ে যায়। এতেও গরমের অনুভূতি বাড়ে। তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে ভূপৃষ্ঠ শীতল হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবারের বৃষ্টি ছিল সামান্য।
এদিন দুপুরের পর ঢাকায় যে বৃষ্টি হয়, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ২ মিলিমিটার। তবে বিএমডি ঢাকা বিভাগে ৬ স্থানে আবহাওয়া পরিস্থিতি মনিটরিং করে। এর প্রতিটি স্থানেই বৃষ্টিপাতের রেকর্ড পাওয়া গেছে।
সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে নিকলিতে ২৮ মিলিমিটার। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের যেসব স্থানে আবহাওয়া পরিস্থিতি মনিটরিং করা হয়েছে, তার প্রতিটিতে বৃষ্টির রেকর্ড পাওয়া গেছে। দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ফেনীতে, ৯৮ মিলিমিটার। সিলেট আর ময়মনসিংহ বিভাগে সামান্য বৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার রাজশাহী, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার তা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।