রাজধানীর গ্রিনরোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন না অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা। একই সঙ্গে হাসপাতালটিতে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভুল চিকিৎসা ও হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষের প্রতারণার অভিযোগ উঠার পর শুক্রবার (১৬ জুন) এই সিদ্ধান্ত জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ও উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে আইসিইউ ও জরুরি সেবার মান সন্তোষজনক পায়নি দলটি।
ডা. সংযুক্তা সাহার ফেসবুক পেজ আছে। মূলত এই পেজে তিনি গাইনি সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শের ভিডিও দিয়ে থাকেন। যেই ভিডিও দেখে সেন্ট্রাল হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখি (২৫)। অভিযোগ উঠেছে, এই হাসপাতালে আসাই কাল হয়েছে আঁখির। তিনি এখন মৃত্যুশয্যায়। আর তার নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হাসপাতালে কর্মরত ডা. সংযুক্তা সাহা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিত অনুমোদন ছাড়া পরবর্তীতে সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না।
এছাড়া ভুক্তভোগী মাহবুবা রহমান আঁখির পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া চিকিৎসা বাবদ সব খরচ এবং চিকিৎসাজনিত জটিলতার যাবতীয় ব্যয় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করবে। ভুক্তভোগী রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সব চিকিৎসকের তথ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র বিএমডিসিতে পাঠাতে হবে। এরপর বিএমডিসি থেকে ওই চিকিৎসকদের নিবন্ধন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া আদালতে চলমান মামলায় অভিযুক্ত ডা. শাহজাদী মোস্তাকি ও ডা. মুনা সাহার যাবতীয় খরচ বহন করবে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করলে বিদ্যমান আইনে তা নিষ্পন্ন করতে হবে।
এসব নির্দেশনা আজ থেকেই কার্যকর হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে শুক্রবার (৯ জুন) রাতে ডা. সংযুক্তা সাহার অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সেন্ট্রাল হাসপাতালে আনা হয় আঁখিকে।
আঁখির স্বজনরা জানান, হাসপাতালে আসার পর রোগীকে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনেই ভর্তি করা হয়। তবে সেসময় এই চিকিৎসক হাসপাতালে ছিলেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি তখন ছিলেন দুবাইতে। চিকিৎসক না থাকার পরও তার অধীনে রোগী ভর্তি করা হয়। এরপর ডেলিভারির চেষ্টা ও পরবর্তীতে সফল না হওয়ায় সিজার করে বাচ্চা বের করে আনা হয়। সিজারের পরদিন মারা যায় বাচ্চাটি। আর মায়ের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশেরও কম।
স্বজনরা আরও জানান, গাইনি চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার নরমাল ডেলিভারি সংক্রান্ত ভিডিও ও পরামর্শ ফেসবুকে দেখেই তারা হাসপাতালে আসেন।
আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলি সুমন বলেন, এখন পর্যন্ত আমার স্ত্রীর জ্ঞান ফেরেনি। তার কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছে না। এরমধ্যে ব্রেন স্ট্রোকও করেছে সে। রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছে না। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় শরীরের অন্য অংশগুলো কাজ করতে ব্যর্থ। গত চারদিন ধরে প্রচুর রক্ত দিতে হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিঃশ্বাস চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত রক্ত দিতে হবে। ডাক্তার বলেছেন তার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।