গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জায়েদা খাতুনের বাজিমাতের পর সবার চোখ ছিল বরিশাল ও খুলনা সিটির ভোটে। ভোটারদের পাশাপাশি সারাদেশের মানুষও তাকিয়ে ছিল এই নির্বাচনের দিকে। বিশেষ করে বরিশালের নির্বাচন ‘গাজীপুর মডেল’ হয় কি না, এমন শঙ্কা ছিল সবার। তবে সে শঙ্কা কাটিয়ে দুই সিটিতেই জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ছাড়াও নির্বাচন হয়, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে যায় সেটা প্রমাণ হয়েছে জানিয়ে এই ধারা সংসদ নির্বাচনেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছে দলটি।
স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল্যায়ন ও আগামীর প্রত্যাশা জানতে জাগো নিউজের কথা হয় দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে। তারা বলছেন, এই নির্বাচনগুলোতে মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, তাতে তারা সন্তুষ্ট এবং আশাবাদী। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তারা বাজিমাত করবেন। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো যে মডেলে হচ্ছে সেই মডেলে সংসদ নির্বাচনও হবে বলে আশাবাদী তারা।
১৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। এতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৩ জন। ভোট দিয়েছেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০ জন, যা মোট ভোটের ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ওই নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে পরাজিত হন।
বরিশালে নৌকা প্রতীক নিয়ে বেসরকারি ফলাফলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৭৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৪৫ ভোট। এই নগরের দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৭ ভোটারের মধ্যে ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৬টি কেন্দ্রে মোট এক লাখ ৪২ হাজার ১৭৭ জন ভোট দিয়েছেন। যা হিসাবে ৫১ শতাংশ।
খুলনার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ ভোটের মধ্যে তালুকদার খালেক পেয়েছেন এক লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের মো. আব্দুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন।
দুই সিটির ভোট দেখে আসন্ন রাজশাহী ও সিলেট নির্বাচনের ফলাফলও কষে ফেলেছেন অনেকে। এসব ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সরকারের এসব নির্বাচনের মতো আগামী জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। এই নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ নেয়নি। তারপরও মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, আগামী জাতীয় নির্বাচনেও যদি বিএনপি না আসে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে, কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।’
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জাগো নিউজকে বলেন, গেলো দুই সিটি নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল। আওয়ামী লীগের প্রতি ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়া গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, ইনশাআল্লাহ।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ উন্নয়ন ও মানবকল্যাণের প্রতি আস্থা রেখে অনুগ্রহ করে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। এজন্য ভোটারদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমাদের বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনগুলোতেও সম্মানিত ভোটাররা নৌকার প্রতি আস্থা অব্যাহত রাখবেন।’
সরকারের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুয়ার খুলে গেছে। পদ্মা সেতুর প্রতিফলন বরিশাল ও খুলনা নির্বাচনে পড়েছে। জনগণ ভোটাধিকারের মাধ্যমে সেটা প্রমাণ করেছেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও জনগণ ভোটাধিকারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে, শেখ হাসিনার পক্ষে, নৌকার পক্ষে থাকবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত করবে।’