আসন্ন ঈদের জন্য এরই মধ্যে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। ক্রেতারা ভিড় করছেন পশুর হাটে। আর সেই হাট কাঁপাতেই প্রস্তুত ফেনীর লাল বাহাদুর ও সুলতান। ফেনীর জাহান এগ্রোর খামারে লালিত পালিত সুলতানের ওজন ৯০০ কেজি ও লাল বাহাদুরের ওজন ৭০০ কেজি। তাদেরসহ আরও ছোট-বড় অন্যসব পশু দেখতে খামারে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
জাহান এগ্রোর সহ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইমতিয়াজ চৌধুরী আদর জানান, তাদের খামারে গরু লালন পালনে প্রাকৃতিক খাবারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাদের খামারের সুলতান ও লাল বাহাদুর জেলার সীমানা ছাড়িয়ে দেশের হাট-বাজার কাঁপাবে বলে তারা আশা করছেন।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার চৌধুরী রাস্তার মাথায় ২০১৭ সালে ১২ একর জায়গা জুড়ে দেশি-বিদেশি গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস, ময়ূর, কুকুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখির সমন্বয়ে জাহান এগ্রো লিমিডেটের যাত্রা শুরু হয়।
খামারের মালিক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আরেফিন আজাদ চৌধুরী বাদল জানান, ঢাকায় ছোট্ট পরিসরে তার খামার বাড়িতে তিনি শখের বসে কুকুরসহ বিভিন্ন পাখি পোষতেন। তখন দেশের বিভিন্ন খামারে নিত্য আসা-যাওয়া ছিল তার। এক পর্যায়ে নিজের এলাকায় মানুষের কর্মস্থান, ডিম, দুধ ও গোশতের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রথম দিকে দুই শতাধিক বিভিন্ন জাতের গাভী গরু সংগ্রহ করে জাহান এগ্রোর যাত্রা শুরু করেছিলেন।
গত চার-পাঁচ বছর ধরে দুগ্ধ-গাভীর পাশাপাশি কোরবানির ঈদের জন্য দেশি-বিদেশি জাতের ষাঁড় গরু ও মহিষ প্রস্তুত করতে থাকেন। বিশাল আকৃতির গরু লালন পালনে সংখ্যার দিক থেকে তিনি ফেনী জেলায় শীর্ষে রয়েছেন। তার উৎপাদিত গরুর দুধ বিভিন্ন কোম্পানি এবং জেলা ও জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা নিয়ে থাকেন। ছাগলনাইয়া উপজেলাবাসীর জন্য তার খামারের দুগ্ধ ও পশু কিছুটা কম দামে বিক্রি করা হয়।
জাহান এগ্রোতে বর্তমানে কোরবানির গরু ও দুগ্ধ-গাভীসহ ছয় শতাধিক পশু রয়েছে। আসন্ন কোরবানির জন্য তিনি আট মণ ওজনের শাহীওয়াল থেকে শুরু করে ৬-৭ মণ ওজনের চার শতাধিক গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। তার খামারের পশুগুলোকে নিজ উদ্যোগে উৎপাদিত ভুট্টাগাছ থেকে তৈরি সাইলেট, খড়, ভুসি ও সবুজ ঘাস খাওয়ানো হয়। নিজস্ব অর্থায়নে তিনি খামারটি তৈরি করেছেন। কোনো প্রকার ক্ষতিকর ভিটামিন কিংবা স্টেরয়েড ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তিনি তার পশুগুলো লালন-পালন করেন। তার খামারে নিয়মিত ১৭ জন লোক কাজ করেন।
তিনি আরও বলেন, গো-খাদ্য, চিকিৎসা উপকরণ ও ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর ফেনী অঞ্চলে কোরবানির গরু উৎপাদন ও মজুদ কম হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় ভালো দামে কোরবানির পশু বিক্রি হবে বলে আশা করছি। তবে ফেনী জেলা ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় অবৈধ পথে ভারতীয় চোরাই গরুর কারণে কোরবানির বাজারে দেশীয় খামারে উৎপাদিত গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছি।
ফেনী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, ফেনীর চাহিদার তুলনায় বেশী পরিমাণ পশু রয়েছে। তবে ফেনীর মানুষ নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে কোরবানি করতে বেশি পছন্দ করেন। সেই হিসেবেও পশুর ঘাটতির আশংকা নেই।
তিনি আরও বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানে মতো ফেনীতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে কোরবানির পশু সরবরাহ করা হবে। আবার ফেনীতে খামারেও এখন ভালো জাতের বড় গরু লালন-পালন হচ্ছে।