বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্মূলে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধি এবং যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে নীতি-নির্ধারণীমূলক উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে ২২ জন সংসদ সদস্যের অংশগ্রহণে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি টিবি ককাস’ গঠিত হয়েছে।
রবিবার সকালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মেম্বার’স ক্লাবে যক্ষ্মা নির্মূলে সংসদীয় ককাস গঠন বিষয়ক এক সভায় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি টিবি ককাস’ এর সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। এতে অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাতকে সভাপতি ও আরমা দত্তকে সাধারণ সম্পাদক করে পার্লামেন্টারি টিবি ককাস গঠন করা হয়।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু বলেন, “বর্তমান সরকার যক্ষ্মার নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করে আক্রান্তদের ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছে। সরকার যক্ষ্মা নির্মূলে খুবই আন্তরিক, একই সাথে জনগণকেও যক্ষ্মা নির্মূলে সরকারের প্রদত্ত ফ্রি সেবা গ্রহণ করতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে চায়। এ লক্ষ্যে যক্ষ্মা নির্মূলে ‘সংসদীয় ককাস’ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।”
অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশের ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ যক্ষ্মার জীবাণুতে আক্রান্ত, যার মধ্যে ৩০ হাজারই শিশু। প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সংক্রামক, মাতৃত্বকালীন, নবজাতক এবং পুষ্টিজনিত রোগে মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যেও যক্ষ্মা তৃতীয়।”
তিনি আরও বলেন, “এসডিজি-৩ অর্থাৎ ‘সকল বয়সী সকল মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণে’ যক্ষ্মা প্রতিরোধ অত্যন্ত জরুরি। সেই লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে যাতে ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করা যায়।”
সভায় উপস্থিত অন্যান্য সংসদ সদস্যরা বলেন, যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলেও স্বাস্থ্যসেবা যে বিনামূল্যে পাওয়া যায় তা এখনো অনেকে মানুষ জানে না। যক্ষ্মা মোকাবিলায় সরকার বা যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থার পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কৌশলপত্র অনুযায়ী, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে যক্ষ্মায় মৃত্যু ৭৫ শতাংশ (২০১৫ সালের তুলনায়) এবং সংক্রমণ ৫০ শতাংশ (২০১৫ সালের তুলনায়) কমাতে হবে। সে হিসেবে আগামী দুই বছরের মধ্যে বছরে যক্ষ্মায় মৃত্যু ১৮ হাজারে নামিয়ে আনতে হবে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা থেকে দেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। সেই লক্ষ্য অর্জনে এবং বাংলাদেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূলে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি টিবি ককাস’ সংসদ সদস্যদের একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করবে, যারা রাজনৈতিক সদিচ্ছা গড়তে ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে কাজ করবে, যক্ষ্মা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুশীল সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট সহযোগীদের সহায়তা প্রদান করবে, এবং যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা প্রতিরোধে কাজ করবে।
সভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লুৎফুন্নেসা খান, শামসুন্নাহার, আহমেদ ফিরোজ কবির, ফখরুল ইমাম, পঙ্কজ নাথ, ফেরদৌসী ইসলাম, নুরুন্নবী চৌধুরী, বেগম শবনম জাহান, বেগম কানিজ ফাতেমা আহমেদ, বেগম বাসন্তী চাকমা, আরমা দত্ত, অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম, অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, অ্যাডভোকেট আদিবা আনজুম মিতা, বেগম রওশন আরা মান্নান, বেনজীর আহমেদ এবং নার্গিস রহমান।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন টিবি-এল অ্যান্ড এএসপি’র লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহাফুজার রহমান সরকার, আইসিডিডিআর’বি’র সিনিয়র টিবি মিটিগেশন অ্যান্ড কোর্ডিনেশন অ্যাডভাইজার ডা. আজহারুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং-এর সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ এবং পরিচালক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রিপ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।