বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নিতে ইইউ ভাইস প্রেসিডেন্টকে দেওয়া ছয় ইইউ পার্লামেন্টের চিঠি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এখানে কিছু তথ্যের গরমিল আছে। ভুল আছে, মিথ্যা আছে। যেমন একটি মিথ্যা হলো তারা বলছে যে, গত কয়েক বছরে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার হয়ে ৬০ শতাংশ হিন্দু বিদেশে পালিয়ে চলে গেছেন। এটা তো সত্য নয়। তারা বলছে খ্রিস্টানদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, এটা তো সত্য নয়। এগুলো আপনারা তুলে ধরেন, এটা আমার বলার দরকার নেই। তারা কোথায় চিঠি চালাচালি করেছে দ্যাট ইজ দেয়ার হেডেক, আমার নয়। চিঠিটা পড়ে মনে হয়েছে যে অপরিপক্ব হাতের লেখা। আমার তো এসব নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
সোমবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের পক্ষ থেকে চিঠির বিষয়ে কিছু বলা হবে কিনা বা লবিস্ট নিয়োগ করা হবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা বলেন না কেন? আমি কেন বলব? আমাদের লবিস্ট টবিস্ট নেই, আমরা বাদ দিয়ে দিছি। বরং যারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে তাদের বলেন আল্লাহর ওয়াস্তে দেশটাকে ধ্বংস করার তালে থাকবেন না। দেশ আরও এনার্জি পাবে কী করে, দেশে লোকের কর্মসংস্থান বাড়বে কিভাবে, বিনিয়োগ যাতে বাড়ে সেজন্য লবিস্ট নিয়োগ করেন, তাহলে দেশের একটা মঙ্গল হবে। দেশ তো আমার আপনার সবার। যারা অপজিশন তাদেরও দেশটা। সুতরাং দেশটা ধ্বংস করে লাভ নেই। কারণ ধ্বংস হলে সবারই ক্ষতি, তাদের আত্মীয়-স্বজনেরও ক্ষতি। সুতরাং সবার একাগ্রচিত্তে চাওয়া উচিত দেশের মঙ্গল। তারা মঙ্গলের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করুক। ওই আকামের জন্য নিয়োগ না করলেই ভালো।
যারা চিঠি লিখেছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমার বক্তব্য হলো- তারা লিখেছে ভাইস প্রেসিডেন্টকে। তারা তা লিখতেই পারে। তবে মিথ্যা তথ্য লিখলে খারাপ লাগে।
ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় কেউ নির্বাচনের আগে আসবে না বলে শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছ। আমরা একটা সুন্দর এবং স্বচ্ছ নির্বাচন করব। আমরা আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতো ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু সরকার চাইলেই হয় না, ইলেকশন কমিশন চাইলেই হয় না। আমরা আশা করবো যতো দল আছে সবাই যেন কমিটমেন্ট করে। প্রতিজ্ঞা করবে তারাও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। এবং সেই নির্বাচনে তারা সবাই যুক্ত হবে।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকসে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দোয়া করেন, তারা দাওয়াত দিলে আমরা নিশ্চয়ই জয়েন করব। ফরমাল চিঠি আমরা পাইনি। ব্রিকসের নেতারা চিন্তা করছেন তারা তো এখন পাঁচজন। তারা আরও কিছু দেশকে নেবে। আমরা একটি বড় অর্থনৈতিক দেশ। আমরা পৃথিবীর ৩৫তম ইকোনমি। তারা সৌদি আরব, বাংলাদেশ, ইইউ, ইন্দোনেশিয়াসহ আটটি দেশকে নিয়ে ভাবছে। আমাদের দাওয়াত দিয়েছিল, আমি অংশ নিয়েছিলাম। আমরা আরও টাকা-পয়সা চাই বিভিন্ন দিক থেকে। সুতরাং তারা যদি আমাদের সদস্য করে আমি মনে করি এটা নিয়ে কাজ করব।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে মোমেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনায় কী নিয়ে আলাপ হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশের ওকালতি করার দরকার নেই।
তিনি বলেন, তারা (মোদি-বাইডেন) যেটা ভালো মনে করবেন, সেটাই আলাপ করবেন। ওখানে আমার (বাংলাদেশ) ওকালতি করার প্রয়োজন নেই। ভারত অত্যন্ত পরিপক্ব গণতান্ত্রিক একটি দেশ। ভারতের মাতৃত্ব অত্যন্ত পরিপক্ব এবং অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী।’
মোদি-বাইডেনের বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা গণমাধ্যমকর্মীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ওই দেশের কে কী নিয়ে আলাপ করবে, তা নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা কেন?’