দেশে ই-জিপি বা ই-টেন্ডারিং চালু হওয়ায় প্রতিবছর ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) যা প্রায় ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে দরপত্রসংক্রান্ত কার্যক্রম করার ক্ষেত্রে দূরত্ব কমেছে ৪৯৭ মিলিয়ন কিলোমিটার। অর্থাৎ ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করতে পারায় রাস্তায় যেতে হচ্ছে না। কাগজ রক্ষা হচ্ছে ১ হাজার ৫৩ মিলিয়ন শিট এবং পরিবেশ সুরক্ষায় কার্বন নিঃসরণ কম হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৯ মিলিয়ন টন।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সিপিটিইউ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। রোববার পাবলিক-প্রাইভেট স্টেকহোল্ডার কমিটির (পিপিএসসি) ১৭তম বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠকের আয়োজন করে সেন্টার প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)।
এতে সভাপতিত্ব করেন আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিটিইউ’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ শোহেলের রহমান চৌধুরী। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে এ কমিটি (পিপিএসসি) গঠন করা হয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, ২০১১ সালে ই-জিপি (ইলকট্রনিক সরকারি ক্রয়) চালু করা হয়। এর পর থেকেই এটি সমৃদ্ধ হচ্ছে। ই-জিপিতে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ এখন রোলমডেল। বিশ্বের অনেক দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসছেন অভিজ্ঞতা নিতে। ২৩ মে এ যাবৎকালে একদিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২৩০টি টেন্ডার ওপেনিং করা হয়। এছাড়া ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর একক দিন হিসাবে সর্বোচ্চ ৪৬ হাজার ৫৫৩ টেন্ডারার অংশগ্রহণ করেন। ই-জিপি সিস্টেমের ফলে দরপত্রের লিড টাইম আগের ১১৭ দিন থেকে কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৫৩ দিনে। ই-জিপির মাধ্যমে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম থেকে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে সিপিটিইউ। কিন্তু এ বছর সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ২৬২ কোটিতে। কেননা সংকটের জন্য কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে এটি কমে গেছে।
মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ শোহেলের রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত সব কাজ ডিজিটাল করতে হবে। স্মার্ট পদ্ধতিতে যেতে হবে। এজন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সিপিটিইউ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টেন্ডারার্স ডেটাবেজ তৈরি। এখানে সব ঠিকাদারের তথ্য থাকবে। এতে তাদের তথ্য যেমন যাচাই-বাছাই সহজ হবে, তেমনই ঠিকাদারদেরও কাজ সহজ হবে। এছাড়া ডিজিটালি বিল পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস প্লাস প্লাস-এর সঙ্গে সিপিটিইউ যুক্ত হয়েছে। আরও আছে কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ই-অডিট সিস্টেম, ডিপিএম মডিউল তৈরি, আন্তর্জাতিক দরপত্রের জন্য মডিউল তৈরি এবং ইলেকট্রনিক্স প্রজেক্ট ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ই-পিআইএমএস) তৈরি। এরকম নানা কার্যক্রম চলমান। এর সঙ্গে সরকারি কেনাকাটায় জনগণের সম্পৃক্ততার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেশকিছু সংস্কারমূলক কার্যক্রম চলছে। এর জন্য সিপিটিইউকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি করা হচ্ছে। এ নিয়ে একটি বিল আজ (২৫ জুন) সংসদে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া সাসটেইনেবল পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (এসপিপি) পলিসিস তৈরি এবং ডিসপোজাল পলিসি করা হচ্ছে। এগুলোর কাজ অনেকদূর এগিয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, সরকারি উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ৮০ ভাগ ব্যয় হয় সরকারি কেনাকাটায়। এখানেই যত দুর্নীতি বা অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়। তাই এ প্রক্রিয়া যতটা স্বচ্ছ হবে, ততই সবার জন্য মঙ্গল হবে।
তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, ই-জিপি চালু হওয়ায় দরপত্র নিয়ে মারামারি, টেন্ডার বাক্স ছিনতাইসহ এরকম ঘটনা এখন আর শোনা যায় না।