যশোরের বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়া, হামলা, ভাঙচুর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমান সজন।
এ বিষয়ে রোববার (৯ জুলাই) দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি। তবে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় সংবাদ সম্মেলন না করেই চলে যেতে হয়েছে তাকে।
এর আগে সকালে ভাঙচুর, প্রচারণায় বাধার অভিযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্রী প্রার্থী মফিজুর রহমান। এছাড়া কয়েক দিনে চারটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বেনাপোল পোর্ট থানায়।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর বেনাপোল পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীরা এখন প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত। তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে; ততই নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা আমার প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন। প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত মাইক ভাঙচুর, কর্মীদের মারধর-হুমকি দিচ্ছেন। এসব বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় জিডি করেছি। তারপরও নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করলেও পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় সম্মেলন না করেই চলে যেতে হয়েছে। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি।’
দীর্ঘ ১৩ বছর পর আগামী ১৭ জুলাই বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন না। পৌরসভার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তিনজন হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী নাসির উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোবাইল ফোন প্রতীকের মফিজুর রহমান সজন এবং জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ফারুক হোসেন উজ্জ্বল।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌকার প্রাথী নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, এসব কর্মকাণ্ডে আমার কর্মীরা জড়িত না। সবাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আনিচুর রহমান বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী লিখিত কোনো অভিযোগ দেননি। মৌখিকভাবে কিছু অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, কোনো অভিযোগ পাইনি।
সংবাদ সম্মেলনের অনুমতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাউকে বাধা বা নিষেধ করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলন করতে পুলিশের অনুমতি লাগে কি না সাংবাদিকরাই বলতে পারবেন।
২০০৬ সালে বেনাপোল ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের অংশ নিয়ে বেনাপোল পৌরসভা গঠন হয়। এরপর ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। সেই নির্বাচনে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ওই পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও আর নির্বাচন হয়নি।
প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার নির্বাচন ঠেকাতে এলাকা নিয়ে মামলার কারণে নির্বাচন আটকে যায়। ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল পৌর পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আগামী ১৭ জুলাই ৩০ হাজার ৩৮৫ ভোটার ইভিএমে ভোট দেবেন। তিন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও বেনাপোল পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৪৭ জন এবং সংরক্ষিত তিনটি ওয়ার্ডে ১৫ জন কাউন্সিলরপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।