মিয়ানমারের কারাবন্দি গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রামোদউইনাই।
রাজধানী নেইপিদোর যে কারাগারে সু চি বন্দি আছেন, সেখানেই রোববার হয়েছে এই সাক্ষাৎ। গত দুই বছরে বিদেশি কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে এটাই প্রথম সাক্ষাৎ সু চির। এপি, এএফপি, রয়টার্স।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশন (আসিয়ান)-এর বৈঠক শুরু হয়েছে। মিয়ানমার এই জোটের অন্যতম সদস্য। বুধবার ছিল এই জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক।
বৈঠক শুরুর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে সু চির সঙ্গে সাক্ষাতের এই তথ্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টার একটি বৈঠক করেছি। বৈঠকটি চমৎকার ছিল। তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা ভালো। কারাগার তার থাকার জায়গাও মানসম্মত।’
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে চান সু চি। উত্তরে আমি তাকে জানিয়েছি, এ ব্যাপারে থাইল্যান্ড এবং আসিয়ান জোটের দেশগুলো তাকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।’
গত দুই বছরে মিয়ানমারকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে বলেও থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন সু চি। টানা এক ঘণ্টার ওই বৈঠক সম্পর্কে এর বেশি কিছু বলেননি ডন।
দুদিনের সফরে রোববারই নেইপিদোতে পা রাখেন তিনি। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। ২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে এ অভ্যুত্থান ঘটান সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং।
অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসীন হওয়া সামরিক সরকারের প্রধান হন জেনারেল হ্লেইং, আর সু চিকে নেইপিদোর একটি কারাগারে বন্দি করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ আনে জান্তা।
রাজধানীর একটি সামরিক আদালতে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সেসব অভিযোগের বিচার শুরু হয়। সেই বিচার এখনো চলছে এবং ইতোমধ্যে শান্তিতে নোবেলজয়ী ৭৮ বছর বয়সি এই গণতন্ত্রপন্থি নেত্রীকে ৩৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন সামরিক আদালত।
উল্লেখ্য, কারাগারে বন্দি করার পর থেকে কেবলমাত্র নিজেদের লোক ব্যতীত আর কাউকে সু চির সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি জান্তা। এমনকি নেইপিদোর সামরিক আদালতের যেসব আইনজীবী সুচির পক্ষে লড়ছেন, তাদের সঙ্গেও নয়। আদালতের বাইরে ভিডিওকলের মাধ্যমে সু চির সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারতেন তারা।
অভ্যুত্থানের পর সু চিকে মাত্র একবার প্রকাশ্যে দেখা গেছে। গত বছর সামরিক আদালতে শুনানি শেষে যখন সশস্ত্র কারারক্ষী পরিবেষ্টিত অবস্থায় বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি, সে সময় মিয়ানমারের একটি সরকারি সংবাদমাধ্যমের আলোকচিত্রী তার কয়েকটি ছবি তুলেছিলেন।
তবে সেসব ছবিতে সু চির চেহারা অস্পষ্ট। সেই হিসাবে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রমোদউইনাই প্রথম ব্যক্তি, যিনি অভ্যুত্থান-পরবর্তী কারাবন্দি সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরেছেন।