মাছের প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। গত ২০ মে মধ্যরাত থেকে শুরু হয় এই নিষেধাজ্ঞা। তারই ধারাবাহিকতায় সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন চট্টগ্রামের মিরসরাইসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা।
তবে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকারের পক্ষ থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে দাবি করেছেন জেলেরা। তারা জানান, সরকারের দেওয়া জুলাই মাসের ৩০ কেজি চাল এখনো পাননি।
মিরসরাই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২৯টি জেলেপাড়ায় নিবন্ধিত জেলে আছেন ২ হাজার ২৬ জন। আরও ৬০০ জেলের তালিকা নিবন্ধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে তালিকাটি এখনো অনুমোদন হয়নি। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রত্যেক জেলে দুই দফায় ৮৬ কেজি চাল পাওয়ার কথা। নিষেধাজ্ঞাটি দুই অর্থবছরের মাঝামাঝি হওয়ায় চাল দুই দফায় দেওয়া হয়। প্রথম দফায় ৫৬ কেজি ও দ্বিতীয় দফায় ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু প্রথম দফায় ৫৬ কেজি চাল পেলেও দ্বিতীয় দফার ৩০ কেজি এখনো পাননি জেলেরা।
মিরসরাই উপজেলার ডোমখালী জেলেপাড়ার সুবল জলদাশ বলেন, স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জাল কিনেছি। কিন্তু ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে চরম কষ্ট হচ্ছে। দৈনিক ৩০০ টাকায় অন্যজনের কাছ থেকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়া নিয়ে টাকা যোগানের চেষ্টা করছি। এছাড়া সরকারের দেওয়া জুলাই মাসের সহযোগিতা এখনো পাইনি। তাই সংসার চলছে অনাহারে-অর্ধাহারে।
সাহেরখালী স্লুইসগেট এলাকায় কথা হয় বলরাম জলদাশের সঙ্গে। তিনি জানান, আগামী ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। কিন্তু এখনো জেলেরা জুলাই মাসের চাল পাননি। তাই দ্রুত জেলেদের জন্য বরাদ্দ চাল বিতরণের দাবি জানান তিনি।
ষাটোর্ধ্ব বাবুল দাশ বলেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের কারণে গত তিন বছর ধরে সাগরে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তার ওপর এখন চলছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। কিছুদিন পর আবার ইলিশের কারণে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে এ পেশায় টেকা যাবে না।
উপজেলার ডোমখালী ও সাহেরখালী জেলেপল্লি ঘুরে দেখা গেছে, সাগরপাড়ে সারি সারি নৌকা বাঁধা রয়েছে। জাল ও নৌকা মেরামত করছেন কেউ কেউ। অনেক জেলে সাগরে বেঁধে রাখা নৌকা পাহারা দিচ্ছেন। এসময় কথা হয় অরুণ জলদাশের সঙ্গে। তিনি জানান, তার পরিবারে ছয়জন সদস্য রয়েছেন। একটি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নৌকা মেরামত করেছি। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কিস্তি দিতে পারছি না। অনেক দেনা হয়ে গেছে।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে উপজেলা বিভিন্ন স্থানে সাগরে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। সর্বশেষ গত ১১ জুলাই উপজেলার ডোমখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ধরনের দুই হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়। পরে জালগুলো উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় প্রত্যেক জেলে পরিবারকে দুই দফায় ৮৬ কেজি চাল সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথম দফায় ২ হাজার ১২৬ জনকে চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জুলাই মাসের চাল এখনো এসে পৌঁছায়নি। আশা করা যায়, আগামী সপ্তাহে চালগুলো বিতরণ করা যাবে।