নার্গিস আকতার ও নাছরিন আকতার আপন দুই বোন। নার্গিস আকতার হিজুলিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আর নাছরিন আকতার ২২নং হিজুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। কাগজকলমে তারা দুই বোনই হিজুলিয়া গ্রামের পাশাপাশি দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে চাকরি করলেও বাস্তবে দুজনই থাকেন আমেরিকার একই এলাকায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুবোনসহ পুরো পরিবারই আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা। তবে, দুই বোন স্থায়ীভাবে আমেরিকা থাকলেও সরকারি দপ্তরে তারা বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত হিসাবেই রয়েছেন। তাদের আমেরিকা বসবাসের খবর জানে না খোদ স্কুল কর্তৃপক্ষসহ শিক্ষা বিভাগ। ঘিওর উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দীর্ঘদিন তারা বিনা অনুমতিতে স্কুলে না এলেও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা বিশেষ সুবিধা নিয়ে প্রথম দিকে দুই বোনের ব্যাপারে রীতিমতো মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। পরে অনুপস্থিতির সময় দীর্ঘ হওয়ায় আর স্কুলের শিক্ষক সংকটে পাঠদানে সমস্যা দেখা দেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। পরে বাধ্য হয়ে ৮ জুন জেলা শিক্ষা অফিসার তাপস অধিকারী সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খল ও আপিল বিধিমালা) ২০১৮ মোতাবেক কেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে না মর্মে চিঠি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন হিজুলিয়া ২২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গেলে কথা হয় দুজন সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাছরিন আকতার বিদ্যালয়ে আসছেন না। তবে ওই শিক্ষক কোথায় আছেন এ বিষয়ে তারা কিছু জানাতে পারেননি।
বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর থেকে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত রয়েছেন নাছরিন আকতার। বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক অনীতা রানী তরফদার রোববার বিকালে যুগান্তরকে জানান, তিনি জেনেছেন সহকারী শিক্ষক দেশের বাইরে আছেন। তবে ওই শিক্ষক আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে কিছু জানাননি।
তিনি জানান, তাকে ইতোমধ্যে চার দফা নোটিশও দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ জুন জেলা শিক্ষা অফিসার সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খল ও আপিল বিধিমালা) ২০১৮ মোতাবেক চূড়ান্ত নোটিশ দিয়েছেন।
একই দিন সরেজমিন হিজুলিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রূপা আক্তার সহকারী শিক্ষক নার্গিস আকতারের দীর্ঘদিন বিনা অনুমতিতে স্কুলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনায় নার্গিস আকতারের নিজ বাড়িতে একাধিকবার নোটিশ প্রদানসহ বাড়ির দরজায় নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি জানালেন সরকারি ওয়েবসাইটে এখনো তিনি বহাল আছেন। এ কারণে তার পরিবর্তে অন্য কোনো শিক্ষক পদায়ন করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু না করার কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দুই বোনের ভাই মো. রেজাউল করিম উজ্জল ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। তার কারণে দুই বোনের বিরুদ্ধে স্থানীয় স্কুল ও উপজেলা শিক্ষা অফিস কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে গড়িমশি করছে।
তবে, রেজাউল করিম উজ্জল জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি জানিয়েছেন, তার দুই বোন আমেরিকায় বসবাস করেন না। তারা দেশেই আছেন এবং ঢাকায় একটি হাসপাতালে কিডনি জনিত রোগের চিকিসা নিচ্ছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী, শিক্ষা বিভাগ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, নাছরিন আকতার ও নার্গিস আকতার দুজনই সপরিবারে আমেরিকায় আছেন।
এ ব্যাপারে ঘিওর উপজেলা শিক্ষা অফিসের ক্লাস্টার সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নায়েব আলী জানান, শিক্ষক নার্গিস আকতারকে দ্বিতীয় দফা কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। তাকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা কেন হবে না সে মর্মে ৮ জুন ১০ দিনের সময় দিয়ে চিঠি দিলেও এখনো উত্তর পায়নি কর্তৃপক্ষ। একই অভিযোগ আরেক বোন নাছরিন আকতারের বিরুদ্ধেও। তাকেও অনুরূপ চিঠি দেওয়া হয়েছে।