সামনে অনূর্ধ্ব-১৭ ও লিগ ফুটবলের খেলা। এ জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মঙ্গলী বাগচী। ফুটবল খেলার কারণে অপদস্থ হওয়া সতীর্থের সঙ্গে ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে তিনি এখন হাসপাতালে। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
গতকাল সোমবার হাসপাতালে বসে কথা বলেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হোগলাবুনিয়ার মেয়ে মঙ্গলী। তিনি তেঁতুলতলা গ্রামের সুপার কুইন একাডেমিতে ফুটবল অনুশীলন করেন। তেঁতুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তাঁদের অনুশীলন হয়। তিনি বলেন, যে একাডেমিতে তিনি অনুশীলন করেন, সেটা তাঁর বাড়ি থেকে আট কিলোমিটার দূরে। এর ফলে একাডেমিতেই তিনি থাকেন। ওই একাডেমির খেলোয়াড় সাদিয়া নাসরিনের (১৭) খেলার ছবি তুলে তার পরিবারকে দেখিয়ে অপদস্থ করেন স্থানীয় নূপুর খাতুন (২২) নামের একজন। এর প্রতিবাদ করতে নূপুরের বাড়িতে গিয়ে হামলার শিকার হন তাঁরা চার খেলোয়াড়।
মঙ্গলী বলেন, নূপুরের বাড়িতে গিয়ে তাঁরা জানতে চান, ছবি কেন তুলেছেন। এ সময় নূপুরের বাড়ির লোকজন তাঁদের গালিগালাজ করেন। হাফপ্যান্ট পরে খেলেন বলে আপত্তিকর কথা বলেন। নূপুরের বাবা নুর আলম, নূপুর ও নূপুরের মা তাঁদের মারধর করে বেঁধে রাখেন। তাঁর মাথার কাটা জায়গায় বারবার লবণ দিতে চাইছিলেন তাঁরা।
নারী খেলোয়াড়দের যারা অপদস্থ করছে, তাদের বিচার হওয়া দরকার
মঙ্গলীর সঙ্গে যখন কথা হয়, পাশে ছিল সাদিয়া নাসরিন। সে বলে, ‘আমি যখন ওয়ানে পড়ি, তখন থেকে খেলাধুলা করছি। এখন আমি কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। সেই ছোটবেলা থেকে পরিবারের মতের বিপক্ষে আমাকে খেলতে হচ্ছে। এখন বাসায় কোচিংয়ের কথা বলে অনুশীলনে আসি। অনুশীলন কখনো মিস করি না। নূপুর নামের মেয়েটার কথা শুনে আমার মা মাঠে গেছেন। আমার সতীর্থ বন্ধু ও কোচ স্যারকে গালিগালাজ করেছেন। আমাকে অনেক বকাঝকা করেছেন। ওই মেয়েকে পেয়ে আমি এমন কাজ করার কারণ জানতে চাই। তখন ওই পরিবারের সবাই মিলে আমাদের মারধর করে।’
হামলার শিকার আরেক খেলোয়াড় জুঁই মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের বেঁধে রাখার পর নূপুরের বাবা নুর আলম চায়নিজ কুড়াল দিয়ে ভয় দেখিয়েছেন। আমাদের বলেছেন, তিনি কুড়াল দিয়ে নিজের শরীর কেটে আমাদের দোষ দেবেন। ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বলবেন, আমরা দিয়েছি। সব মিলিয়ে আমাদের ভয়াবহ সময় পার করতে হয়েছে।’
নারী ফুটবলারের খেলার ছবি দেখিয়ে পরিবারকে অপদস্ত, প্রতিবাদ করায় মারধর
মঙ্গলীর সঙ্গে হাসপাতালে ছিলেন তাঁর বাবা রণজিৎ বাগচী। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে ছোটবেলা থেকে খেলাপাগল। আগে খুলনার এজাজ একাডেমিতে কোচিং করত। মাস দুয়েক আগে তেঁতুলতলার একাডেমিতে গেছে। আমরা তাকে খেলায় উৎসাহ দিই। তবে মেয়েদের সঙ্গে যেটা ঘটেছে, তা খুবই খারাপ হয়েছে। প্রত্যাশা করছি, এর সঠিক বিচার পাব।’