তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সংলাপ শুরু করতে ভারত সরকারকে দেশটির সংসদীয় কমিটি যে সুপারিশ করেছে তা আশাব্যঞ্জক ও তাৎপর্যপূর্ণ। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে জনকূটনীতি শাখার মহাপরিচালক সেহেলি সাবরিন এ মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ২৫ জুলাই তাদের ২২তম প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে অর্থবহ সংলাপ শুরু করা যেতে পারে। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমাদের দিল্লির মিশন থেকেও এ ব্যাপারে অবগত হয়েছি। বিষয়টি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক ও তাৎপর্যপূর্ণ।
সেহেলি সাবরিন বলেন, সংসদীয় কমিটিতে বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেসসহ ভারতের সব রাজনৈতিক দলের সদস্যরা আছেন। তাই এ ধরনের একটি সুপারিশ আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগামী দিনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে বলে আশা করছি।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফেরানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর আÍস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরী ও নুর চৌধুরীকে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সর্বাÍক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি এবং ওই দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনের মাধ্যমে নিয়মিত তাদের প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়ে আসছে। উচ্চপর্যায়ের সব দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এই দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অপরাধী সাজা ভোগ থেকে রেহাই পেলে তা শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকেই বাধাগ্রস্ত করে না বরং তা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি ও পরিবারের মানবাধিকারকে লঙ্ঘন করে।
সেহেলি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী হারজিত এস সাজ্জানের সাক্ষাৎকালে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠককালে এবং বাংলাদেশে সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে খুনিদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটনে এ বছর মে মাসে অনুষ্ঠিত নবম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্ব সংলাপেও আগের বছরগুলোর মতো পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের এ দাবি উত্থাপন করেন। পরিতাপের বিষয়, আÍস্বীকৃত খুনিরা এসব দেশের আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অপরাধের শাস্তি এড়িয়ে চলছে। তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সুরাহা করার বিষয়ে দেশ দুটির পক্ষ থেকে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা উভয় দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরই বিষয়টি তাদের বিচার বিভাগের এখতিয়ারাধীন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনগত প্রক্রিয়ায় জটিলতার কথা উল্লেখ করছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যমতে আগ্রহী বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাযথ সহায়তা করবে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন, তার দৌড়ঝাঁপে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন হয়নি। তাহলে সরকারের তরফ থেকে এটা বলা হচ্ছে কেন?
এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, এ বিষয়ে ২৬ জুলাই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মিডিয়া ব্রিফিংয়ে খুব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশন ১৯৬১-এর কথা ১৩ জন রাষ্ট্রদূতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতদের নিজস্ব ইন্টারপ্রেটেশন থাকতে পারে। তবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তারা ভিয়েনা কনভেনশন ১৯৬১-এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।